Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নির্ভয়ে সাক্ষ্য নিশ্চিত করুক রাজ্যই: কোর্ট

দেওরের হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী এক মহিলা অভিযুক্তদের নিত্য হুমকিতে গ্রামছাড়া। শুধু ওই মহিলা নয়, যাবতীয় খুনের মামলার সাক্ষীরা যাতে নিরাপদে আদালতে হাজির হয়ে নির্ভয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন, রাজ্য সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে সোমবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩০
Share: Save:

দেওরের হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী এক মহিলা অভিযুক্তদের নিত্য হুমকিতে গ্রামছাড়া। শুধু ওই মহিলা নয়, যাবতীয় খুনের মামলার সাক্ষীরা যাতে নিরাপদে আদালতে হাজির হয়ে নির্ভয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন, রাজ্য সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে সোমবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই বিষয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে একটি বিশেষ নির্দেশিকা তৈরি করতে বলেছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।

রুপোলি পর্দায় হামেশাই দেখা যায়, খুনের বা অন্যান্য দুষ্কর্মের সাক্ষী কোর্টে যাওয়ার পথে কোনও লরি বা গাড়ির নীচে চাপা পড়ছেন। কিংবা তাঁর প্রাণ নিচ্ছে গুপ্ত ঘাতকের ছুরি বা গুলি। রাজ্যের পুলিশকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাস্তবে অবস্থাটা এর থেকে কম ভয়াবহ নয়। অধিকাংশ খুনের মামলায় সাক্ষীদের প্রভাবিত করে অভিযুক্তেরা। কখনও মোটা টাকার বিনিময়ে সাক্ষীদের বিগড়ে দেওয়া হয়। কখনও বা বাড়ি গিয়ে সাক্ষী এবং তাঁর পরিজনকে হুমকি দেওয়া হয়, সাক্ষ্য দিলে ফল ভাল হবে না। তার ফলে উপযুক্ত সাক্ষ্য না-থাকায় নিম্ন আদালত থেকে অবলীলায় ছাড় পেয়ে যায় অভিযুক্তেরা। হাইকোর্ট এ দিন যে-নির্দেশ দিয়েছে, তাতে পুলিশের পক্ষে ঠিক সময়ে সাক্ষীদের আদালতে নিয়ে যাওয়াটা সহজ হবে বলে পুলিশকর্তারা আশা করছেন।

বর্ধমানের একটি খুনের মামলায় নিরাপদে সাক্ষ্যদানের আবেদন জানান চাঁদেরা বিবি শেখ নামে ভাতারের এক বাসিন্দা। এ দিন সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি মান্থার আদালতে। চাঁদেরার আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ও স্নিগ্ধা সাহা জানান, তাঁদের মক্কেলের দেওর শেখ বিল্লাল হোসেন ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর খুন হন। সেই হত্যাকাণ্ডের কিছু দিনের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা শেখ জাফর, শেখ মহিম, শেখ সফেদ-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চার্জশিটও পেশ করে পুলিশ। কিন্তু পরে নিম্ন আদালত থেকে অধিকাংশ অভিযুক্তই জামিনে ছাড়া পায়। ওই মামলায় চাঁদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।

চাঁদেরা হাইকোর্টে অভিযোগ করেন, জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে অভিযুক্তেরা তাঁকে মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। তিনি যাতে বর্ধমান জেলা আদালতে সাক্ষ্য দিতে না-যান, সেই জন্য তাঁকে প্রায় রোজই হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নিয়মিত আদালতে হাজির হতে পারছেন না ওই মহিলা। প্রাণভয়ে কয়েক বছর ধরে তিনি গ্রামছাড়া। বোলপুরের যোগনগর গ্রামে তিনি সপরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। জমিতে চাষও করতে পারছেন না। তিনি যাতে পরিবার নিয়ে গ্রামে ফিরতে পারেন এবং জেলা আদালতে নিয়মিত হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য বিচারপতি মান্থার আদালতে আবেদন জানান চাঁদেরা।

আইনজীবী উদয়শঙ্কর এ দিন তাঁর সওয়ালে দিল্লি হাইকোর্টের একটি নির্দেশের কথা তুলে ধরেন। প্রায় একই ধরনের আবেদন সংক্রান্ত একটি মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকেই।

বিচারপতি মান্থা তার পরেই সরকারি কৌঁসুলি ললিতমোহন মাহাতোকে নির্দেশ দেন, বোলপুর থানার পুলিশকে দিয়ে চাঁদেরাকে গ্রামে ফেরাতে হবে। একই সঙ্গে ভাতার থানার পুলিশকে বিচারপতির নির্দেশ, কমপক্ষে সাত দিন চাঁদেরার বা়ড়ি পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু ওই মহিলা নয়, সমস্ত খুনের মামলায় সাক্ষীরা যাতে নির্ভয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশেষ নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE