চিটফান্ড-কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর রাজ্যের সমস্ত ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার একটি তালিকা তৈরি করে সিবিআই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আবার কোমর বেঁধে নামছে সিবিআই। এমনটাই দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের একাংশের। ইঙ্গিত মিলেছে, সারদা-রোজভ্যালি ছাড়াও রাজ্যের শ’খানেক চিটফান্ডের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযানে নামতে চলেছে সিবিআই।
এ রাজ্যে বেশ কয়েক মাস ধরে চিটফান্ড তদন্তের গতি থমকে ছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, ওই মামলাগুলি নতুন করে খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে ওই চিটফান্ডগুলির সঙ্গে যোগ খুঁজে পাওয়া প্রভাবশালীদের ফের তলব করা হতে পারে। তবে তা আদৌ কতটা সম্ভব এই পরিস্থিতিতে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে সিবিআইয়ের অন্দরেই।
বৃহস্পতিবার মঙ্গলম অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে একটি চিটফান্ড সংস্থার অফিসে হানা দেয় সিবিআই। এর পাশাপাশি বেহালায় ওই সংস্থার ডিরেক্টরদের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর। চিটফান্ড-কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর রাজ্যে যে সব ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করে সিবিআই। প্রথম দিকেই নাম উঠে আসে সারদা, রোজভ্যালি, এমপিএস-এর মতো সংস্থাগুলির। এ ছাড়াও রাজ্যে বেশ কয়েকটি চিটফান্ড সংস্থার সক্রিয় থাকার প্রমাণ পান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অনেক চিটফান্ড সংস্থা ব্যবসার ধরন বদলেও, বেশ কয়েক বছর সক্রিয় ছিল। একে একে ওই সব বেআইনি সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরলেন বিচারপতি ললিত, অযোধ্যা মামলা ফের পিছোল, পরবর্তী শুনানি ২৯ জানুয়ারি
এমন চিটফান্ডগুলির মধ্যে অন্যতম মঙ্গলম অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড। ওই সংস্থা এ রাজ্য ছাড়াও, আরও কয়েকটি রাজ্যে সেবি ও আরবিআই-এর অনুমোদন ছাড়াই বাজার থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ। সিবিআই সূত্রে খবর, মঙ্গলমের বেশির ভাগ কর্তা ব্যক্তিদের বাড়ি বেহালা এলাকায়। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন পলাতক। এই তল্লাশি অভিযানে বেশ কিছু নথিপত্র হাতে এসেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিবিআই সূত্রে খবর, গত ডিসেম্বর মাসে উত্তরবঙ্গে ছ’টি ছোট মাপের চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআইয়ের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা-৪। মূলত এ রাজ্য, ওডিশা এবং অসমে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা চিটফান্ডগুলির বিরুদ্ধে তদন্তের জন্যই গড়ে তোলা হয় ওই বিশেষ শাখা। তবে সিবিআই সূত্রে খবর, নতুন শাখা গড়ে তোলার পরেও চিটফান্ড মামলার তদন্তে আশানুরূপ গতি আসেনি। সে জন্য সিবিআই কর্তাদের একাংশ তাঁদের সদর দফতরে চলা দুই কর্তার বিরোধকেই দায়ী করেছেন। এক সিবিআই আধিকারিক বলেন, ‘‘এর আগে রাকেশ আস্থানা কলকাতায় বৈঠক করে সারদা, রোজভ্যালি-সহ মামলায় গতি আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যে সমস্ত প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা আমলার নাম উঠছে, তাঁদের সবাইকে তলব করে জেরা করতে।” সেই সময় তাঁর নির্দেশ মেনেই সারদা মামলায় পর পর রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের তলব করেছিল সিবিআই। তাঁরা আসতে সম্মত না হলে ফের আদালতে জানিয়েছিল সিবিআই এবং চাপ বাড়াচ্ছিল।
আরও পড়ুন: নিজেদের তৈরি করা হিংসাতেই ভুগছেন কাশ্মীরিরা, মন্তব্য সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের
এর মধ্যেই সদর দফতরে শুরু হয়ে যায় অচলাবস্থা। সিবিআই থেকে সরিয়ে দেওয়া দুই কর্তা অলোক বর্মা এবং রাকেশ আস্থানাকে। সেই সময় বেশ কয়েক সপ্তাহ সমস্ত ধরনের তদন্তই প্রায় বন্ধ রেখেছিলেন বিভিন্ন শাখার আধিকারিকরা। এক সিবিআই আধিকারিক বলেন, “পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে নাগেশ্বর রাও অধিকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এক দফা বৈঠক করে ফের কয়েকটি চিটফান্ড মামলায় এগনোর সবুজ সঙ্কেত দেন।” সেই কাজ শুরু হতে না হতেই ফের অলোক বর্মা অধিকর্তার পদে ফিরে আসায় আবার শুরু হয়ে গিয়েছে অনিশ্চয়তা। দিল্লিতে কর্মরত এক আধিকারিক বলেন, “অলোক বর্মা ফিরে এসেই তাঁর অনুপস্থিতিতে যে সমস্ত অফিসারদের বদলি করা হয়েছিল, তাঁদের ফিরিয়ে এনেছেন। ফলে ফের বদলে গিয়েছে সিবিআইয়ের অভ্যন্তরীন সমীকরণ।”
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলমের মতো ছোট চিটফান্ডে হানা দিয়ে সিবিআই তাদের তৎপরতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন বলে ইঙ্গিত অন্য এক অংশের আধিকারিকদের। কারণ তাঁরা মনে করছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি অলোক বর্মার অবসরের পর নতুন অধিকর্তা দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত চিটফান্ডের মতো তদন্তে পর্যাপ্ত গতি আদৌ আনা সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy