Advertisement
০৩ মে ২০২৪
State News

রাজ্যের কিছু হাসপাতাল কি হয়ে উঠছে সংক্রমণের ‘হটস্পট’?

চিনার পার্কের বেসরকারি হাসপাতালে সংক্রমিত ৩ কর্মী।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ২০:৪২
Share: Save:

হাসপাতালই কি রাজ্যের কোভিড সংক্রমণের অন্যতম সক্রিয় হটস্পট? করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্যের বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। শুরু করা হয়েছে বাড়তি নজরদারি। কিন্তু পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে, রাজ্যের কয়েকটি হাসপাতাল, চিহ্নিত এলাকাগুলির থেকে বেশি স্পর্শকাতর। স্বাস্থ্য দফতর সোমবার তাদের বুলেটিনে জানিয়েছে, রাজ্যে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১০। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়েনি। সেটা ৭-ই রয়েছে। রাজ্যে রবিবার সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৫। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়়েছে ১৫। তবে এই ১৫ জনের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ এবং চিনার পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আক্রান্তেরা আছেন কি না তা স্পষ্ট নয়।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রবি থেকে সোমবারের মধ্য কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ন’জনের শরীরে কোভিড-১৯-এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তার উৎস সন্ধান করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, ৮ জনেরই সংক্রমণের উৎস হাসপাতাল। এর আগেও, হাওড়া জেলা হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতাল থেকে সংক্রমণের ঘটনার ইঙ্গিত রয়েছে।

করোনা সংক্রমণের জেরে আগেই ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল হুগলির একটি নার্সিংহোম। ৪৮ ঘণ্টার বেশি রোগী ভর্তি বন্ধ ছিল এনআরএস মেডিক্যালের একটি অংশে। বন্ধ করা হয়েছে পার্ক সার্কাসের একটি নার্সিং হোম।

আরও পড়ুন: সন্তান জন্মানোর পর মায়ের করোনা, বন্ধ করা হল মেডিক্যালের ইডেন বিল্ডিং

রবিবার রাতেই ৭ দিনের জন্য হাসপাতাল বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেন চিনার পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালে উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুর পরে জানা যায় যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে খোঁজ নিতে গিয়ে প্রকাশ্যে আসে, ওই আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়ালিসিসের সময় ছিলেন আরও পাঁচ রোগী। সূত্রের খবর, ওই মৃত রোগীর সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাসপাতাল কর্মী-সহ মোট ৮ জন।

একই রকম ভাবে মেডিক্যাল কলেজের করোনা পজিটিভ এক প্রসূতির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে আরও কয়েক জন আক্রান্ত হতে পারেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এর আগে হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি এক রোগী করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালের নার্স-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ ছিল, ওই রোগীর করোনার উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীরাও কোনও ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই গিয়েছিলেন ওই রোগীর কাছে। পরবর্তীতে হাওড়া হাসপাতালের সুপার-সহ এক চিকিৎসক এবং এক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ স্বীকার করেছেন, হাসপাতাল থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন ওই তিন জন।

আরও পড়ুন: হাওড়ার ৬টি ওয়ার্ডে ফোন করলেই মুদিখানার হোম ডেলিভারি

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও। ওই হাসপাতালে চেন্নাইফেরত কালিম্পঙের এক মহিলা ভর্তি হন। তিনি করোনায় আক্রাম্ত হয়ে ওই হাসপাতালেই মারা যান। সেখানেই ম়ৃত্যু হয় এক রেলকর্মীর। তাঁর শরীরেও করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছিল। পরবর্তীতে ওই হাসপাতালের সহকারি সুপার, এক নার্স এবং ওই রেলকর্মীর ছেলে আক্রান্ত হন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত রেলকর্মীর ছেলে বাবার শুশ্রুষা করতেন এবং ওই নার্সও করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

একই ভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার একটি সেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকের। তিনি এক রোগীর চিকিৎসা করেছিলেন, যিনি পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা না নেওয়ার ফলেই, হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ ঘটছে। তাঁদের দাবি, কোনও রোগীকে ভর্তি করার সময় যে স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন, তা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। তার ফলেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই)-এর অভাবকেও দায়ী করেছেন অনেক চিকিৎসক। তবে স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা পিপিই বা সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উপসর্গ অনেক দেরিতে প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে ধরা পড়ছে না। এমনকি প্রথম টেস্টেও ধরা পড়ছে না ভাইরাসের অস্তিত্ব।” ওই চিকিৎসক আরও বেশি সংখ্যায় করোনা পরীক্ষার উপর জোর দেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE