সেনার হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি। —নিজস্ব চিত্র
প্রায় এক মাস হল কোভিড হাসপাতালের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট বা সিএনসিআইয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস (‘পয়েন্ট টু ভার্সান’)। রাজ্যে সেনা হাসপাতালের পাশাপাশি রাজারহাটের এই হাসপাতালকে রবিবার পুষ্পবৃষ্টি করে সম্মান জানানোর জন্য বেছে নিয়েছিল বায়ুসেনা। কিন্তু লক্ষ্যভেদ হল কই!
ভাবা হয়েছিল, ফৌজি অভিনন্দন গ্রহণের জন্য হাসপাতাল চত্বরে হাজির থাকবেন চিকিৎসক এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা দেখা গেল না। তিন বার সিএনসিআইয়ের আকাশে চক্কর কাটার পরে চতুর্থ বার হেলিকপ্টার থেকে গাঁদা ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ল ঠিকই। কিন্তু হাসপাতাল-চত্বরের ভিতরে যত পাপড়ি পড়ল, তার থেকে অনেক বেশি পড়ল বাইরের রাস্তায়!
সামরিক বাহিনীর তিন প্রধানকে পাশে বসিয়ে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত শুক্রবার বলেছিলেন, রবিবার সকালে সারা দেশে কোভিড হাসপাতালগুলির উপরে পুষ্পবৃষ্টি করবে বায়ুসেনার বিমান। সেই সঙ্গে হাসপাতালের সামনে বাজবে ফৌজি ব্যান্ড। ঠিক হয়, আলিপুরের সেনা হাসপাতাল এবং রাজারহাটের কোভিড হাসপাতালে বায়ুসেনার এমআই-১৭ হেলিকপ্টার পুষ্পবৃষ্টি করবে। সেই অনুযায়ী সকাল ১০টার কিছু পরে ব্যারাকপুরে বায়ুসেনার ঘাঁটি থেকে ওড়া কপ্টার সিএনসিআইয়ের উপরে চক্কর কাটতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা উঠে দাঁড়ান। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী, ক্যান্টিন-কর্মী, ঠিকাকর্মীদেরও নজর ছিল আকাশে। গেটে মোতায়েন এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘আমাদের উপরে ফুল পড়লেও মূল হাসপাতাল-চত্বরে খুব একটা পাপড়ি দেখা যায়নি।’’ হাসপাতাল-চত্বরের বাইরে কর্তব্যরত এক ফৌজি জানান, এলোমেলো হাওয়ার জন্য শূন্যে এক জায়গায় স্থির হয়ে হাসপাতালের উপরে পুষ্পবৃষ্টি করতে সমস্যা হচ্ছিল কপ্টারের।
সেনার হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি। ফুল ছড়িয়ে রয়েছে রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের (যা এখন কোভিড হাসপাতাল) সামনের রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, একশোরও বেশি রোগী এখন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের সুস্থ করে তোলার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তত ২৫ জন চিকিৎসক এবং ৬০ জন নার্স। এ দিন পুষ্পবৃষ্টির সময় তাঁদের অনুপস্থিতি অনেকেরই চোখে পড়েছে। কোভিড নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন পুষ্পবৃষ্টি কর্মসূচিতেও প্রভাব ফেলল কি না, সেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা পুষ্পবৃষ্টির সময় হাসপাতাল-চত্বরে হাজির ছিলেন না কেন? এর জন্য সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছেন কোভিড হাসপাতালের সুপার শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘‘এমন একটি সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা যে হয়েছে, সেটা আমাদের জানানোই হয়নি। জানলে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে হাসপাতাল-চত্বরে হাজির থাকতাম। এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেখানে কাজ করছি, সেখানে এই সম্মান প্রদর্শন মনোবল বাড়াত। কিন্তু না-জানলে সেই সম্মান গ্রহণ করি কী করে,’’ বলেন শুভদীপবাবু।
দেশের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় এ রাজ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি যে ছিলই, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অভ্যন্তরেও তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বস্তুত, খটকা শুরু হয়েছিল শনিবারেই। প্রথমে ঠিক ছিল, পুষ্পবৃষ্টি করা হবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের উপরে। পরে জানা যায়, সেনা হাসপাতালের পাশাপাশি আর একটি কোভিড হাসপাতাল হিসেবে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান সিএনসিআই-কে বেছে নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠান বেলেঘাটা আইডি-কে নয়। তবে এ দিন আলিপুরের সেনা হাসপাতালেও পুষ্পবৃষ্টিতে ছন্দপতন ঘটেছে।
আরও পড়ুন: অ্যাম্বুল্যান্স বা ওষুধ, পাশে থাকার ‘প্রয়াস’
আরও পড়ুন: আত্মীয়েরা গরহাজির, শ্মশানসঙ্গী তাই ইলিয়াস-ইউনিস
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy