Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সারদার ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ দেবযানী এখন জেলের দিদিমণি

সূত্রের খবর, ওঁদের ইংরেজি এবং অঙ্কে সড়গড় করতে নিয়মিত ক্লাস করাচ্ছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চলে ইংরেজি আর অঙ্কের পাঠ। তবে ইংরেজি শিক্ষায় বেশি জোর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অক্ষরজ্ঞান, বাক্য গঠনের পাশাপাশি যাতে ন্যূনতম কথাও তাঁরা বলতে পারেন, সেই প্রয়াসও শুরু হয়েছে।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৮
Share: Save:

অনুপ্রবেশের অভিযোগে বছর কয়েক আগে ওঁরা গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁরা নিজেদের প্রয়োজন বোঝান ভাঙা বাংলায়। মায়ানমারের ওই মহিলাদের বর্তমান ঠিকানা দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। এ বার তাঁদের পড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।

কী শিখছেন মায়ানমারের ওই মহিলা আবাসিকেরা? কারাই বা শেখাচ্ছেন? সূত্রের খবর, ওঁদের ইংরেজি এবং অঙ্কে সড়গড় করতে নিয়মিত ক্লাস করাচ্ছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চলে ইংরেজি আর অঙ্কের পাঠ। তবে ইংরেজি শিক্ষায় বেশি জোর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অক্ষরজ্ঞান, বাক্য গঠনের পাশাপাশি যাতে ন্যূনতম কথাও তাঁরা বলতে পারেন, সেই প্রয়াসও শুরু হয়েছে। জনা তিরিশেক মায়ানমারের মহিলা আবাসিক মাস দেড়েক ধরে এই লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ওঁদের শিক্ষক হিসাবে রয়েছেন সংশোধনাগারের কয়েক জন কর্মী। সঙ্গে রয়েছেন চার মহিলা আবাসিক। সেই তালিকায় রয়েছেন সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া সংস্থার ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও।

কম বয়সে সংসারের আবর্তে জড়িয়ে পড়াশোনায় ইতি টেনেছিলেন মায়ানমারের ওই আবাসিকদের বেশিরভাগ। সে কারণে মাতৃভাষা ছাড়া সে ভাবে কিছু জানা নেই তাঁদের। সংশোধনাগারে থাকাকালীন কাজ চালানোর মতো বাংলা শিখেছেন ওঁরা।

আরও পড়ুন: সুস্থ হলেও নেব না, মানসিক হাসপাতালে চড়াও আত্মীয়রা

সংশোধনাগার সূত্রের খবর, ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর দেবযানী ওই বন্দিদের ইংরেজিতে বলিয়ে-কইয়ে করে তুলতে চেষ্টাও শুরু করেছেন। কেউ পড়াশোনা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করলে বিরক্ত না হয়ে বরং দিদিমণি সুলভ ভঙ্গিমায় বুঝিয়ে দেন তিনি। শিক্ষিকার তালিকায় রয়েছেন পাচারে অভিযুক্ত রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মায়ানমারের এই আবাসিকদের মধ্যে আট-দশ জন খুবই ভাল শিখছেন বলে খবর। মাত্র দেড় মাসেই ইংরেজিতে অল্প কথাও বলতে শুরু করেছেন কয়েক জন। উল্লেখ্য, আলিপুর সংশোধনাগারে থাকাকালীন বিউটি পার্লারের কাজেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন দেবযানী। এমনকি, সংশোধনাগারে ছবি আঁকার পাশাপাশি গানও গেয়েছেন তিনি। কয়েক দিন আগে একটি মামলায় বারাসতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে দেখে কেউ কেউ মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘দেবযানীকে দেখে বোঝাই যায় না যে তিনি সংশোধনাগারে রয়েছেন।’’

শুধু মায়ানমারের মহিলা আবাসিকেরা নন। দমদম সংশোধনাগারে রয়েছে সে দেশের ১৬ জন শিশুও। যারা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গেই সেখানে থাকে। চার থেকে ছ’বছর বয়সী ওই শিশুদেরও পড়াচ্ছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্বে রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংশোধনাগারে এ ছাড়াও প্রায় ৯০ জন শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ৬০-৬৫ জন নিয়মিত আড়াই ঘণ্টা ক্লাস করছে। সেখানে বাংলা-ইংরেজি-অঙ্কের পাঠ নিচ্ছে তারা। লেখাপড়ার সঙ্গেই সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও পারদর্শী হয়ে উঠেছে ওরা।

এক কারা কর্তার কথায়, ‘‘বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়ে বোঝা যায়, ওই শিশুরা কী ভাবে দক্ষ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দলগত নাচ বা গান দেখলে, কে বলবে যে ওদের ঠিকানা সংশোধনাগার!’’ আগে ওদের আচার-আচরণ নিয়ে অনেকেই বিরক্ত প্রকাশ করতেন। সংশোধনাগারে কয়েক বছরের পাঠে ওই শিশুদের আচরণে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি কারা কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE