Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বৈচিত্রই ভারতবর্ষ, বলছেন অক্সফোর্ডের সম্মানিতা

কৃতী: যোধপুর পার্কে নিজের বাড়িতে অদিতি লাহিড়ী। নিজস্ব চিত্র

কৃতী: যোধপুর পার্কে নিজের বাড়িতে অদিতি লাহিড়ী। নিজস্ব চিত্র

সুজিষ্ণু মাহাতো
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
Share: Save:

বৈচিত্র নিয়েই তাঁর কাজ। সেই বৈচিত্র ভাষার, উচ্চারণের। সেই কাজে তাঁর অবদানের জন্যই ব্রিটিশ সরকার নতুন বছরের সম্মানিতদের তালিকায় মনোনীত করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক অদিতি লাহিড়ীকে। মঙ্গলবার কলকাতার বাড়িতে অদিতিদেবী বললেন, ‘‘ভারতবর্ষ বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির দেশ। এটাই ভারতের অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোনও এক ভাষা, এক সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় এখানে।’’

শনিবার ব্রিটিশ সরকার প্রকাশ করেছে ‘নিউ ইয়ার্স অনার্স লিস্ট ২০২০।’ সেখানেই অদিতিদেবীকে ভূষিত করা হয়েছে ‘কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই)’ উপাধিতে। জানানো হয়েছে, ভাষাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় তাঁর অবদানের জন্যই এই সম্মান। ব্রিটিশ সরকারের ওই তালিকায় নানা উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের। তালিকায় রয়েছেন কিংবদন্তী গায়ক স্যর এলটন জন, প্রাক্তন ক্রিকেটার ক্লাইভ লয়েড, হালের তারকা ক্রিকেটার বেন স্টোকসের নাম। তাঁর নামও যে সেই তালিকায় রয়েছে, সেই খবর কলকাতায় বসেই পেয়েছেন অদিতিদেবী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রথমে শুনে

খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম। তবে নিজের জন্য নয়, ভাষাতত্ত্বের মতো বিষয় এখানে জায়গা পেয়েছে বলেই ভাল লাগছে।’’

সাম্প্রতিক ভারতবর্ষে একাধিক বার ভাষা হয়ে উঠেছে রাজনীতির লড়াইয়ের হাতিয়ার। জুন মাসে জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়ায় হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ নিয়ে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, এক রাষ্ট্র, এক ভাষা। আর সেই ভাষা হোক হিন্দি। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে বহু ভাষা রয়েছে। প্রত্যেকটির গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু দেশের একটি ভাষা থাকা প্রয়োজন, যাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে ভারতীয় ভাষা হিসেবে। যদি কোনও ভাষা দেশকে বাঁধতে পারে, তা হিন্দি।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা হয় দেশজুড়ে। অদিতিদেবীও মনে করেন, ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে ‘এক রাষ্ট্র, এক ভাষা’ কখনও সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দিই তো এক রকম নয়। বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দির উচ্চারণ আলাদা। আর নানা ভাষার বৈচিত্রই তো ভারতের মূল কথা, মূল ঐতিহ্য।’’

ভারতের এই ঐতিহ্য যে এসেছে এখানকার ভৌগোলিক অবস্থান থেকে, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। অদিতিদেবীর কথায়, ‘‘দেশের নানা এলাকার আলাদা আলাদা খাদ্যাভ্যাস, বিভিন্ন রকম পোশাক-আশাক সবই সেখানকার আবহাওয়া, জলবায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত। এমনকি, নানা প্রদেশের মানুষের শারীরিক গঠনও আলাদা। তাই উচ্চারণও এক হওয়া সম্ভব নয়। ভারতের মূল সুর বৈচিত্রই।’’

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের বৈচিত্রের উদ্‌যাপনে সঙ্গী করেছে অদিতিদেবীকে। দু’বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিগত বৈচিত্রের প্রকাশ করতে ২০ জনের পোট্রেট আঁকানো হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিলেন অদিতিদেবীও। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণনের পরে অক্সফোর্ডে প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে ‘চেয়ার প্রফেসর’ হয়েছেন বেথুন কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অদিতিদেবী। জানালেন, এখন বছরে অন্তত দু’বার কলকাতায় আসেন। দেশ তথা বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার কিছু কিছু ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। তাঁর কথায়, ‘‘জিনিসপত্রের ক্রমাগত বাড়তে থাকা দামটা চোখে পড়ে। তা ছাড়া দেশের মূল সুর যে ধর্মনিরপেক্ষতা, তা-ও এখন খানিকটা প্রশ্নের মুখে।’’

তবে ভরসা হারাতে চান না অদিতিদেবী। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার মুখে এই সব প্রশ্ন দূর করতে তাঁর ভরসা বাংলা তথা দেশের প্রতিবাদী ছাত্রসমাজই। তাঁর কথায়, ‘‘আমার শুধু চিন্তা হয়, ওদের পড়াশোনার যাতে ক্ষতি না হয় তা ভেবে। কিন্তু ছাত্ররাই ভরসা। কারণ ছাত্রজীবনে সবাই সংযুক্ত থাকে, পেশাদার জীবনে নয়। তারা যদি আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রাখে, সব সঙ্কট কাটাতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Diversity Oxford University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE