ছত্রধারী: ঝিরঝিরে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ
পারদ নামতেই দিন কয়েক ধরে কাশির জেরে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছিল। তার উপরে মেঘলা আবহাওয়ার জেরে বছর চল্লিশের সন্দীপ ঘোষের সমস্যা আরও বেড়েছে। বন্ধ নাক ও শুকনো কাশিতে তিনি জেরবার।
ডিসেম্বরের প্রথমের শীতও তেমন কাবু করেনি বছর কুড়ির দেবযানী রায়কে। কিন্তু দিন কয়েকের মেঘলা আবহাওয়ায় কাবু হয়েছেন। শ্বাসনালীতে সংক্রমণের জেরে জ্বরে ভুগছেন।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শহর জুড়ে ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ (সিওপিডি) আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। শীতে সেই সমস্যা আরও বেড়েছে বলেই মনে করছেন বক্ষরোগ চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানান, শীতে বাতাস চলাচল কমে যাওয়ার জেরে দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি হয়। কলকাতায় বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। ফলে, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আরও বেড়েছে। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শুকনো কাশির সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। তার উপরে বৃষ্টির জেরে হাঁপানি রোগীদের সমস্যা বাড়ছে। কমবয়সিদের মধ্যেও বিপুল হারে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক বলেই চিকিৎসকেরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে বক্ষরোগ চিকিৎসক অলোকগোপাল ঘোষাল জানান, বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ছে। তার উপরে শীতে অধিকাংশ মানুষ দমবন্ধ পরিবেশে থাকেন। ঘরের ভিতরে ধোঁয়া, ধুলো থাকে। তার জেরেও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাঁর পরামর্শ, অনেকেই শীতের সকালে হাঁটতে কিংবা দৌড়তে পছন্দ করেন। তবে, বাইরে যাওয়ার আগে দূষণের পরিমাণ জেনে তবেই বেরোনো ভাল। তাঁর কথায়, ‘‘একাধিক মাধ্যমের সাহায্যে এখন এলাকার বায়ুদূষণের পরিমাণ বোঝা যায়। তাই সেগুলো কাজে লাগিয়ে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। ক্রনিক শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে ঘরেই শারীরিক কসরত করা ভাল।’’
তাপমাত্রার তারতম্যের জেরে শিশুদেরও ভোগান্তি বেড়েছে। শিশুরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঋতু বদলের সময় শিশুদের ভাইরাসঘটিত জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তার মধ্যে হঠাৎ তাপমাত্রার পারদ নেমে যাওয়ায় সেই ঝুঁকি আরও বেড়েছে। তবে, অতিরিক্ত জামাকাপড় পরানোর জেরে সমস্যা জটিল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতায় শিশুদের টুপি, মোটা জামাকাপড় পরানোর প্রবণতা বেশি। এমনকি অল্প
শীতেই অনেকে বাচ্চাদের সাবান মাখিয়ে স্নান করান না। এতে কিন্তু বিপদ বাড়ছে। অতিরিক্ত সুরক্ষা দিতে গিয়ে শিশুরা ঘেমে যাচ্ছে। নানা সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।’’
তবে, তাপমাত্রার এই খামখেয়ালিপনায় সব চেয়ে বেশি সতর্ক থাকা দরকার পঞ্চাশোর্ধ্বদের, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তাঁরা জানান, অধিকাংশ পঞ্চাশোর্ধ্ব শহরবাসীই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন। শীতে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুক্তভোগীদের নিয়মিত ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে রক্তচাপ মাপাও জরুরি। তা হলে নজরদারিতে থাকা যাবে।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘সর্দি-কাশির মতো সমস্যার পাশাপাশি ভাইরাসঘটিত জ্বর দেখা দিচ্ছে। কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাপমাত্রার তারতম্যে ভেসেল স্প্যাজম হয়। রক্তচাপ উঠা-নামা করলে এ ক্ষেত্রে বিপদ বাড়ে।’’ চিকিৎসকদের পরামর্শ, নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, সকালে হাঁটতে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখুন। তাছাড়া শেষ রাতের ঠান্ডা যেন
এড়িয়ে যাওয়া যায়, সেটাও সুনিশ্চিত করা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy