Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

অক্ষত বাড়ি, তবু ক্ষতিপূরণ নেত্রীর পরিবারে 

রায়দিঘির তৃণমূল পরিচালিত মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হামিদা বিবি মোল্লা থাকেন ডায়মন্ড হারবার-রায়দিঘি রোডে কাশীনগর মোড়ের কাছেই।

মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সভাপতির বাড়ি (বাঁ দিকে)। আলমগিরের বাড়ির বেহাল দশা। নিজস্ব চিত্র

মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সভাপতির বাড়ি (বাঁ দিকে)। আলমগিরের বাড়ির বেহাল দশা। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০৪:৪৪
Share: Save:

রাস্তার পাশেই দোতলা বাড়ি। কোল্যাপসিবল গেট। নীচের তলায় দু’টো দোকানঘর। উপরের তলার একটা অংশে সার দিয়ে কাচের জানলা। তার সব ক’টিই অক্ষত। দোতলায় টিনের ছাউনি।

এই বাড়ি আমপানে ‘সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে নাম উঠেছে তালিকায়। বাড়িটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির। নিজের নামে তো বটেই, স্বামীর নামে ও তাঁদের সতেরো বছরের নাবালক ছেলের নামেও ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা ঢুকেছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

রায়দিঘির তৃণমূল পরিচালিত মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হামিদা বিবি মোল্লা থাকেন ডায়মন্ড হারবার-রায়দিঘি রোডে কাশীনগর মোড়ের কাছেই। স্ত্রীকে পাশে নিয়ে সেই বাড়িতে বসে স্বামী ফারুকের সাফাই, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে নাম দিয়েছিল। তবে ব্লক প্রশাসন এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরিবার পিছু এক জনের নামে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে। আমরা সব দিক দেখে গরিব মানুষের কথা ভেবে তিন জনের নামে আসা টাকাই ফেরত দিয়েছি।’’

যে পঞ্চায়েত থেকে হামিদাদের নাম সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় উঠেছিল, সেই খাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান সাহানা শেখও থাকেন কাছেই শ্রীনগর গ্রামে। তাঁরও দোতলা বাড়ি। স্থানীয় মানুষের দাবি, আমপানে অক্ষত সেই বাড়ি। তবু ক্ষতিপূরণ প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে সাহানার স্বামী নুর মহম্মদ শেখ, ছেলে ফারুক, দেওর নুরউদ্দিন, নাসিব, এরশাদ আলি শেখ ও শাশুড়ি নুরজাহান শেখের। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, টাকাও পেয়ে গিয়েছেন সকলে। ওই বুথের তৃণমূলের সম্পাদক জিয়ারুল মোল্লার পরিবারের ন’জন ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় মানুষের।

আরও পড়ুন: পরীক্ষা নয় কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়েও

উল্টো চিত্রও আছে এলাকায়। আমপানের দাপটে ঘরদোর ভেঙেচুরে একসা খাড়ি শেখপাড়ার বাসিন্দা আলমগির মোল্লার। কোনও রকমে দরমা ঘিরে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে বসবাস করছেন। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আলমগির বলেন, “ঝড়ের পরে বাড়ি বলে কিছু ছিল না। ক’দিন প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাটিয়েছি। এখন কোনও ভাবে ত্রিপল ঢাকা দিয়ে মাথা গুঁজেছি। রাতে বৃষ্টি এলে বড্ড অসুবিধা হচ্ছে। কী যে করি!’’

সাহানা শেখকে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের। রায়দিঘির বিজেপি নেতা পলাশ রানা বলেন, ‘‘কী আর উত্তর দেবে। দুর্নীতি এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, রাখঢাক তো কিছু নেই।’’ তৃণমূল নেতা শান্তনু বাপুলি বললেন, ‘‘তাড়াহুড়োয় কিছু ভুল হয়েছিল। অনেকের টাকাই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’

মথুরাপুর ২-এর বিডিও রিজওয়ান আহমেদ বলেন, “গ্রামে গ্রামে পরিদর্শন করে কারা টাকা পেয়েছে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। যাঁদের প্রয়োজন নেই, তাঁদের টাকা ফেরতের জন্য নোটিস পাঠানো হচ্ছে।” আলমগির শুনেছেন, ক্ষতিপূরণের তালিকায় তাঁর নাম আছে। ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকাও পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছে পঞ্চায়েত। তবে বর্ষায় এ ভাবে আর কত রাত কাটাতে হবে, তা জানেন না ওই যুবক। বললেন, ‘‘এত লোক টাকা পেল, আমাদের মতো মানুষগুলোর দিকে কেন যে নজর পড়ে না কর্তাদের।’’

আরও পড়ুন: বিডিও, এসডিও-দের বার্ষিক মূল্যায়ন করবেন মুখ্যমন্ত্রী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone Destruction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE