Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বেঁচেও মরেছেন কালাচাঁদ, ভোট দেবেন না এবারও

জলজ্যান্ত ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন। কাজকর্মও করছেন। কিন্তু ভোটার তালিকায় তিনি ‘মৃত’।

 বাড়িতে কালাচাঁদ। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে কালাচাঁদ। নিজস্ব চিত্র

সম্রাট চন্দ 
তাহেরপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৯
Share: Save:

বাড়ির কাছে নিরন্তর নানা দলের সভা, প্রচারের গাড়ির ছোটাছুটি। দেওয়ালও ভরে উঠেছে নানা প্রার্থীর নামে। ভোটের দোলা লেগেছে তাঁর মনেও। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ভোট দেওয়ার সুযোগ তাঁর নেই। যা নিয়ে খেদের অন্ত নেই কালাচাঁদের। একরাশ আক্ষেপ নিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘সেই যে মরে গেলাম ভোটবাবুদের কাছে, আর জ্যান্ত হতে পারলাম না। কত ছুটেছি। কিন্তু ভোটের তালিকায় নিজেকে ‘জীবিত’ প্রমাণ করতে পারলাম না।’’

জলজ্যান্ত ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন। কাজকর্মও করছেন। কিন্তু ভোটার তালিকায় তিনি ‘মৃত’। সেটা ২০১৬ সাল। তার পর বিধানসভা ভোট, পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। কিন্তু রানাঘাট ১ ব্লকের বারাসাত পঞ্চায়েতের নিমতলা নতুনপাড়ার বাসিন্দা কালাচাঁদ রায়ের আর ভোট দেওয়া হয়নি। কালাচাঁদ জানান, শেষ বার ভোট দিয়েছেন ২০১৪ সালে, লোকসভা নির্বাচনে। সম্প্রতি কালাচাঁদ তাঁর ভোটার কার্ডটি হারিয়েছেন। তবে আধার কার্ড রয়েছে।

কালাচাঁদ জানান, ভিন্‌ রাজ্যে মণ্ডপ নির্মাণের কাজ করেন তিনি। সেই সূত্রে বছরের বেশির ভাগ সময় ভিন্‌ রাজ্যে কাটে। স্ত্রী মমতা কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কালাচাঁদের তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়দা নিখোঁজ হন বছর তিরিশ আগে। তাঁর মেজদা শম্ভুপ্রসাদ রায় ২০১৪ সালে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে একটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। দুই বোনের মধ্যে এক বোন কলকাতায় থাকেন। আর এক বোনের তাহেরপুরে শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মাস ছয়েক আগে মারা গিয়েছেন কালাচাঁদের বাবা ননীগোপাল রায়। তবে তাঁদের কাউকেই ভোটার তালিকায় এই ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। গোল বাধে কালাচাঁদের মেজদা শম্ভুপ্রসাদের মৃত্যুর পর। ২০১৬ সালে শম্ভুপ্রসাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সময়ে ‘কোনও ভাবে’ কালাচাঁদও মৃতের তালিকায় ঢুকে যান।

কালাচাঁদের দাবি, নাম বাদ পড়েছে জানার পরে বার কয়েক আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও ভোটার তালিকায় মৃত থেকে জীবিত হননি।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা তৃণমূলের রূপা দাস বলছেন, “বিষয়টি উনি আমাদের আগে জানাননি। আর এটা তো প্রশাসনের ব্যাপার। তবে আমি দেখব, যাতে ওঁর সমস্যার সমাধান হয়।”

সংশ্লিষ্ট ৯৯ নম্বর বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) রীতা মৃধা বলেন, “২০১৬ সালে ওঁর দাদার নাম বাদ যাওয়ার সময়ে ‘কোনও ভাবে’ হয়তো ওঁর নামও মৃতের তালিকায় চলে যায়। তবে ওঁকে বলেছি নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে। কিন্তু উনি বাড়িতে থাকেন না। নির্দিষ্ট সময়ে এসে আবেদন করেননি এত দিন। আগে যাঁদের এ ধরনের সমস্যা ছিল তাঁদের মিটে গিয়েছে। ওঁর সমস্যাও মিটত।”

রানাঘাট ১ ব্লকের বিডিও অতনু মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। ওঁর সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” যদি‌ও কর্তাদের আশ্বাসবাণীতে ভরসা রাখতে পারছেন না কালাচাঁদ। তিনি বলেন, ‘‘কর্তারা ‘কোনও ভাবে’ ভুল হয়ে গিয়েছে বলছেন বটে, কিন্তু বেঁচেও মরে যাওয়ার যন্ত্রণা তো আমাকেই পোহাতে হচ্ছে। গরিবের কপালে আরও কী জোটে দেখি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE