এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডের কেবিনে ভর্তি ছত্রধর মাহাতো। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এসএসকেএম-এ ভর্তি লালগড় আন্দোলনের প্রথম সারির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো। এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুকে ব্যথা এবং গলায় সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছত্রধর। তাঁর জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি মাহাতো বলেন, “তিন দিন হল হাসপাতালে ভর্তি ছত্রধর। রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। বুকে ব্যথা।”
এসএসকেএম সূত্রে খবর, তাঁকে ভর্তি করার পর বৃহস্পতিবার আইসিইউতে রাখতে হয়। টানা চিকিৎসায় তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে শুক্রবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে উডবার্ন ওয়ার্ডের ২০১ নম্বর কেবিন তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করেন। সাধারণত রাজ্যের ভিভিআইপি-রাই উডবার্ন ওয়ার্ডের কেবিনে থেকে চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে থাকেন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রও সারদা কাণ্ডে জেলবন্দি থাকাকালীন বেশ কয়েক মাস ছিলেন ওই উডবার্ন ওয়ার্ডের কেবিনেই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই প্যারোলের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও, অসুস্থতার কারণে এখনই তাঁকে জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না। আপাতত তিনি হাসপাতালেই থাকবেন। কারা দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে লালগড় আন্দোলনের পোস্টারবয় হিসেবে পরিচিত ছত্রধর মাহাতো পাঁচ দফা প্যারোল পেয়েছেন। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকেই জল্পনা যে রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের সাম্প্রতিক পরিবর্তিত রাজনৈতিক সমীকরণে শাসক দলের জায়গা মজবুত করতে ছত্রধরকে জামিনে মুক্ত করতে আগ্রহী।
আরও পড়ুন: নতুন লোগোয় মুছে গেল কংগ্রেস, ম্লান হয়ে গেল গেরুয়া, পরিস্থিতি মেপে নতুন পথে তৃণমূল
ছত্রধরের সঙ্গে একই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত লালগড় আন্দোলনের অন্য নেতাদের পরিবারের অভিযোগ, শাসক দলের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন ছত্রধর। ছত্রধরের সঙ্গেই যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল রাজা সরখেল, প্রসূণ চট্টোপাধ্যায়, শম্ভু সোরেন এবং শগুন মূর্মূর। রাজা সরখেলের স্ত্রী শুক্লা অভিযোগ করেন, “তিন বছর ধরে রাজার প্যারোলের আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্ত মঞ্জুর হয়নি। একই ভাবে বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও প্যারোল পাননি প্রসূণ। শম্ভু সোরেনের মা মারা যাওয়ার পর মায়ের শ্রাদ্ধের জন্য প্যারোল চেয়েছিলেন শম্ভু। তাঁরও প্যারোল মঞ্জুর হয়নি। অথচ ছত্রধরর বার বার প্যারোলে ছাড়া পাচ্ছেন।”
অতীতের ফ্রেম। ফের কি দেখা যাবে একই ছবি? —ফাইল চিত্র।
জঙ্গলমহলে শাসক দলের একাংশও ইঙ্গিত দিয়েছে, জঙ্গলমহলে শাসক দলের জমি ফেরাতে এবং আদিবাসী মূলবাসীদের মধ্যে শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রশমন করতে ছত্রধরের উপর অনেকটাই নির্ভর করছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। লালগড়ে স্থানীয় সূত্রে খবর, গত সপ্তাহে লালগড়ও গিয়েছিলেন ছত্রধর। ঝাড়গ্রামের সাংসদ প্রার্থী হিসাবে জনজাতির সামাজিক নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী বীরবাহাকে বেছে নেওয়ার পিছনেও লালগড় আন্দোলনের ওই জেলবন্দি নেতার প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রয়েছে বলে ইঙ্গিত ঝাড়গ্রামের স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতৃত্বের। যদিও ছত্রধরের লালগড় যাওয়ার কথা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিনপুর-১ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল মাহাতো। লালগড় আন্দোলনের সময় ছত্রধর মাহাতোর ছায়াসঙ্গী হিসাবে পরিচিত শ্যামল ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পান পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই ব্লকে শাসক দলের ভরাডুবির পর। শ্যামলকে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “এ বারে ছত্রধর বাড়িতে আসেননি। শুনেছি সামান্য অসুস্থ তিনি। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।”
আরও পড়ুন: নিশীথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সামলাতে তৎপর বিজেপি, ওয়াই ক্যাটেগরির মোড়কে কোচবিহারে ঢুকছেন প্রার্থী
রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতার অভিযোগও তুলেছেন শুক্লা। তিনি বলেন, “সুদীপ চোংদারকে এম আর বাঙুরে ভর্তি করা হল। কার্যত কোনও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হল তাঁর। অন্য দিকে শাসক দলের সঙ্গে হাত মেলানোয় ভিভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাচ্ছেন ছত্রধর।” একই অভিযোগ তুলেছেন এপিডিআরের মতো মানবাধিকার সংগঠনের কয়েক জন সদস্যও।
যাবজ্জীবন সাজার পর মেদিনীপুর আদালত থেকে বেরোনোর সময়। —ফাইল চিত্র।
যদিও কারা দফতরের এক কর্তা সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তা দাবি করেন,গত ১১ মার্চ মায়ের অসুস্থতার কারণে প্যারোলে ১০ দিনের জন্য মুক্তি পান ছত্রধর মাহাতো। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি মুকুন্দপুরের একটি গেস্ট হাউসে ছিলেন। সূত্রের খবর, গত বুধবার সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ছত্রধর। তাঁর উপরে নজরদারির দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা প্রথমে তাঁকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু রাজি হননি ছত্রধর। তাই তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করতে হয়েছে।
ছত্রধরের পর পর প্যারোল এবং সরকারের ভিভিআইপি আতিথেয়তা, সব মিলিয়ে অনেকেই মনে করছেন নির্বাচন না মেটা পর্যন্ত হয়তো হাসপাতালেই ‘শারীরিক’ কারণে থাকতে হতে পারে জঙ্গলমহলের ওই নেতাকে।
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy