অগ্নিমিত্রা পলের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সেই মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্র
তিনি সেলিব্রিটি ফ্যাশন ডিজাইনার। অনেক বছর ধরেই স্বক্ষেত্রে লাইমলাইটে। কিন্তু ইদানীং তাঁকে নিয়ে চর্চা একটু অন্য কারণে। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন অগ্নিমিত্রা পল। গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, এই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে কোনও একটি আসন থেকে অগ্নিমিত্রাকে লড়তেও দেখা যেতে পারে।
রাজনীতির সঙ্গে খুব নিবিড় যোগাযোগ তিনি রাখতেন না। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে তাঁকে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হল রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। জল্পনা সত্যি করে তিনি বিজেপিতে যোগও দিলেন। কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত? কোনও বাধ্যবাধকতা? নাকি হঠাৎই রাজনীতিতে উৎসাহী হয়ে ওঠা? বিজেপির কাছ থেকে ঠিক কী আশা করছেন অগ্নিমিত্রা পল?
সব প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে বিজেপি নেত্রী হয়ে ওঠা অগ্নিমিত্রা। ভোটে লড়ার সুযোগ পেলে, তার পছন্দের কেন্দ্র কোনটা, তা-ও জানালেন অকপটেই:
প্রশ্ন: দীর্ঘ দিন ধরে লাইমলাইটে আছেন। স্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা এবং সাফল্যের কারণেই আছেন। কখনও তো বোঝা যায়নি, রাজনীতির প্রতি আপনার ঝোঁক রয়েছে। আচমকা রাজনীতিতে পা রাখলেন কেন?
অগ্নিমিত্রা: রাজনীতির প্রতি ঝোঁক তো ছিলই না, দেখবেন কোথা থেকে!ঝোঁকটা তৈরি হল গত কয়েক বছরে। আসলে আমার পেশাকে কাজে লাগিয়েই আমি গত কয়েক বছর ধরে সামাজিক কাজ শুরু করেছি। বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের স্বয়ম্ভর করে তোলার কাজ শুরু করেছি। সেই কাজটা করতে করতেই বুঝলাম, রাজনীতিতে যোগ দিলে আরও বড় পরিসরে করতে পারব এই কাজটা।
আরও পডু়ন: ক্ষমতায় এলেই দরিদ্রতম ২০ শতাংশকে বছরে ৭২,০০০ টাকা, প্রতিশ্রুতি রাহুলের
আরও পড়ুন: প্রচারে নেমেই ‘মা’ মমতাকে ‘কৈকেয়ী’ বলে কটাক্ষ ভারতীর
কী ভাবে স্বয়ম্ভর করছেন মহিলাদের?
ওঁদের কাজ শেখাচ্ছি— সেলাই আর ডিজাইনিং। কাজ শিখে তাঁরা এখন রোজগার করতে শুরু করেছেন।
রাজনীতিতে ঢুকলে এই কাজে কী সুবিধা হবে আপনার?
রাজনীতিতে ঢুকতে পারলে রাস্তাটা আরও চওড়া হবে। এখন তো আমার বা আমাদের ক্ষমতা সীমিত। মেয়েদের কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভর করে তোলার চেষ্টা করছি, কিন্তু সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। রাজনীতিতে থাকলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পারব, কারণ সরকারি সাপোর্টটা খুব বড় ব্যাপার।
রাজনৈতিক দল তো আরও অনেক ছিল।স্বপ্ন পূরণের জন্য বিজেপি-কে বেছে নিলেন কেন?
বিজেপি-কে বেছে নিলাম শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীর জন্য। মোদীজির কাজ আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করে। প্রকৃত অর্থেই দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা একমাত্র মোদীজিরই রয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে উনিই পারবেন, এটাও আমার বিশ্বাস। তাই বিজেপিতে সামিল হয়েছি।
বিজেপিতে সামিল হওয়ার ইচ্ছা কি আপনিই প্রকাশ করলেন? নাকি বিজেপি-ই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করল?
না না, আমিই যোগাযোগ করেছি। না হলে ওঁরা আর জানবেন কী করে যে, আমি রাজনীতিতে আসতে চাইছি। ২৩ বছরের কেরিয়ারে কখনও রাজনীতির প্রতি ঝোঁক তো আমি দেখাইনি। তাই কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয় যে, আমি এখন রাজনীতিতে যোগ দিতে উৎসাহী। তাই আমি নিজেই ওঁদের জানাই আমার ইচ্ছার কথা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
লোকসভা নির্বাচন ঘোষিত হয়ে যাওয়ার পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনা চলছে, আপনাকে বিজেপি প্রার্থী করতে পারে। আপনার ইচ্ছাটা কী? ভোটে লড়তে কি উৎসাহী? নাকি নন?
আমি লড়ব কি না, সেটা দলই ঠিক করবে। দল যদি লড়তে বলে, অবশ্যই লড়ব। না বললে লড়ার প্রশ্ন নেই। যে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হবে, সেটাই পালন করব। মোট কথা কাজ করার ইচ্ছা নিয়েই এসেছি, যে ভাবেই হোক মানুষের কাজে লাগতে চাইব। ভোটের টিকিট পেলাম কি না, সেটা আমার কাছে খুব বড় কথা নয়।
প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, আপনি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু পরে দেখা গেল, সেখানে অনুপম হাজরা টিকিট পেয়েছেন। এ রাজ্যের ১২টা আসনে অবশ্য এখনও বিজেপির প্রার্থী ঘোষিত হওয়া বাকি। এই ১২টা আসনের মধ্যে কোনটায় লড়তে চাইবেন?
আবার বলছি, দল যা ঠিক করে দেবে, তাই করব। আমার পছন্দ-অপছন্দটা বড় কথা নয়।
সে তো নিশ্চয়ই। কিন্তু ধরুন আপনার দল আপনার কাছে জানতে চাইল যে, কোন আসনে আপনি লড়তে চান? কী উত্তর দেবেন?
দল যদি সে রকম কিছু জানতে চায়, তা হলে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটার কথাই বলব। কারণ আমি দুর্গাপুরের মেয়ে। গোপালমাঠে আমাদের বাড়ি। আর আমি বর্ধমানের বউ। কামারকিটা গ্রামে আমার শ্বশুরবাড়ি। আমার শিকড়টা ওখানে। নিয়মিত যোগাযোগও রেখেছি চিরকাল। তাই ওখানে কাজ করার সুযোগ পেলেই সবচেয়ে ভাল লাগবে।
গোপালমাঠ এলাকায় অগ্নিমিত্রা পলের পৈতৃক বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র
বর্ধমান-দুর্গাপুর? বিজেপির টিকিটে জিততে পারবেন সেখান থেকে?
আমার সবটুকু দিয়ে জেতার চেষ্টা করব।
ভোটে জিতলে কী করবেন?
আমি রাজনীতিতে এসেছি, মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা নিয়ে। যদিও আমি একা এই কথা বলছি না, সবাই এটাই বলেন। কিন্তু আমি কতটা সততার সঙ্গে কথাটা বলছি, সেটা আমার চেয়ে ভাল কেউ জানেন না, অন্তত আজকের তারিখে। রাজনীতি থেকে আমার কিছু নেওয়ার নেই। আমার প্রয়োজনীয়তা বা অভাব-অভিযোগ মেটানোর ক্ষমতা আমার হাজব্যান্ডের রয়েছে। তাই উজাড় করে মানুষের পাশে থাকতে চাইব। আমার ইচ্ছা আছে, বর্ধমান-দুর্গাপুর এলাকায় একটা টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করার। সেখানে কাপড়টা তৈরি হবে, তাতে ডাইং হবে, ভ্যালু অ্যাডিশন হবে, ডিজাইনিং হবে— মানে একটা চত্বরেই সব। শ’খানেক কোম্পানিকে সেই হাবে জায়গা দেওয়া যাবে। এলাকার লোকজন সেখানে কাজ পাবেন। কাজ শিখিয়ে নেওয়ার জন্য সেখানেই একটা ইনস্টিটিউট থাকবে। অনেক বড় স্বপ্ন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারকে পাশে পেলে স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।
ধরুন আপনি ভোটে টিকিট পেলেন না। অসন্তুষ্ট হবেন?
একেবারেই না। প্রশ্নই নেই। বার বারই বলছি, দল যা করতে বলবে, তা-ই করব। আমার বিশ্বাস, বিজেপিতে থেকে আমি মানুষের কাজে আরও বেশি করে লাগতে পারব।
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় অগ্নিমিত্রা পলের গোপালমাঠ এলাকার পৈতৃক বাড়ি বলে যে ছবিটি ছিল, সেটি আসলে তাঁদের বাড়ির মন্দিরের ছবি। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy