Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee Dharna

মমতাকে রাস্তার লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনা খুব বড় ভুল হল না তো? চিন্তায় বিজেপি

১৩ বছর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ফের মেট্রো চ্যানেলে বসলেন, তখন দৃশ্যটা হুবহু এক, এমনটা বলা যাচ্ছে না হয়তো। কিন্তু অনেকটাই মিলে যাচ্ছে সে দিন আর এ দিন।

ধর্নার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

ধর্নার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:৫৩
Share: Save:

সঙ্ঘাত বাড়ছিল অনেক দিন ধরেই। সঙ্ঘাত যে নির্বাচনের কাছাকাছি পৌঁছে চরমে উঠবে, সে আঁচ সাধারণ জনতাও পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত সময়ের অনেকটা আগেই বাংলায় তৃণমূল-বিজেপির যুদ্ধ তুঙ্গে পৌঁছল। যুদ্ধটা শুধু রাজনৈতিকও রইল না, দুই প্রশাসন যেন পরস্পরের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নেমে পড়ল। আর সব কিছুকে পিছনে ফেলে সামনে চলে এলেন সেই রাস্তাঘাটে লড়াই করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মমতাকে ফের জাগিয়ে দিয়ে বিজেপি কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে ব্যাকফুটেই।

ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে যেন ফিরল ২০০৬ সাল। সিঙ্গুরে টাটার কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতায় বছর ১৩ আগে এই মেট্রো চ্যানেলেই অনশন শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে মেট্রো চ্যানেলে যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। আগের বার এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মেট্রো চ্যানেলের আশ্রয় নিয়েছিলেন তৃণমূলের চেয়ারপার্সন তথা দলের সবেধন নীলমণি সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার প্রতিপক্ষ আরও অনেক বেশি শক্তিশালী, আরও অনেক প্রতাপান্বিত। কিন্তু এ বার যিনি ধর্নায় বসলেন, তিনিও আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী। তিনি নিজেই পশ্চিমবঙ্গের দাপুটে মুখ্যমন্ত্রী, লোকসভা-রাজ্যসভা মিলিয়ে তাঁর দলের সাংসদ সংখ্যা এখন ৪৭, তিনি জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী শিবিরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলির অন্যতম পুরোধা-ও। এ হেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সম্মুখ সমরের ডাক দিয়ে মেট্রো চ্যানেলে আশ্রয় নেন, তখন প্রতিপক্ষকে নতুন করে ভাবা শুরু করতেই হয়। রবিবার রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্না ঘোষণা করার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় শাসক দল অতএব প্রতিটা পদক্ষেপ অত্যন্ত মেপেজুপে করতে বাধ্য হচ্ছে। আর ‘স্ট্রিট ফাইটার’ ভাবমূর্তির নেত্রী ক্রমশ তীব্র করছেন আক্রমণ।

রাস্তাঘাট বা মাঠ-ময়দান কাঁপিয়ে রাজনীতি করাটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাবসিদ্ধ। কখনও জয়প্রকাশ নারায়ণের গাড়ি আটকানো, কখনও মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়ে গোটা রাজ্য কাঁপিয়ে দেওয়া, কখনও ব্রিগেড সমাবেশ থেকে বামফ্রন্ট সরকারের ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজানো, কখনও প্রার্থী তালিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে নিজের দলের (তখন কংগ্রেস) নেতৃত্বের সঙ্গেই সঙ্ঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, কখনও জাতীয় সড়কে মঞ্চ বেঁধে ২১ দিন একটানা পড়ে থাকা— রাজপথের রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যের তালিকা শেষ হওয়া মুশকিল। কিন্তু এতগুলো মাইলফলকের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ২০০৬ সালে মেট্রো চ্যানেলে ২৬ দিনের অনশন। ওই অনশন বাংলার রাজনীতির মোড় তো ঘুরিয়ে দিয়েছিলই, প্রায় গোটা ভারতেক রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই হাজির করে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে। প্রবল অপ্রস্তুত হতে হয়েছিল বাংলার তদানীন্তন বামপন্থী শাসকদের।

২০০৬ সালে অনশনের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

আরও পড়ুন: ধর্নার ২৩ ঘণ্টা: রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নেই বললে মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগানো উচিত: মমতা​

১৩ বছর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ফের মেট্রো চ্যানেলে বসলেন, তখন দৃশ্যটা হুবহু এক, এমনটা বলা যাচ্ছে না হয়তো। কিন্তু অনেকটাই মিলে যাচ্ছে সে দিন আর এ দিন। সে দিনও নিজের থেকে অনেক ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন মমতা। আজও তাই। সে দিনও কংগ্রেস, বিজেপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মমতার মঞ্চে পৌঁছে সমর্থন জানিয়ে গিয়েছিল। আজও জাতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীরা মমতার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে দিয়েছেন। বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একে একে মমতার মঞ্চে হাজির হচ্ছেন। আইনের প্যাঁচ-পয়জার ছুড়ে ফেলে দিয়ে সে দিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নিয়ে গিয়েছিলেন লড়াইটাকে আর রাস্তায় নেমেই সহানুভূতির ঝড় তুলে নিয়েছিলেন নিজের অনুকূলে। এ বার আইনি জটিলতা আর সাংবিধানিক সঙ্কট সংক্রান্ত বিতর্ককে পিছনে ঠেলে দিয়ে সামনে চলে এলেন রাস্তাঘাটে লড়াই করা এক নেত্রী আর তিনি রাস্তায় নামা মাত্রই আবার রাজনৈতিক শিবিরে সহানুভূতির বাতাস তাঁর অনুকূলে। বিজেপি বিরোধী দলগুলি এক কথায় মমতার পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আর বিজেপির শরিক দলগুলো বিতর্ক থেকে গা বাঁচিয়ে নিয়ে অনেকটা যেন নিরপেক্ষ থাকার ভঙ্গি করছে। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় ফিরতেই বিজেপি যেন আচমকা বেশ খানিকটা নিঃসঙ্গ।

মেট্রো চ্যানেলের এ বারের মঞ্চে নজরে পড়ছে আরও একটা বিষয়। ২০০৬ সালের সেই মঞ্চে অনশনরতা পিসির পাশে ঠায় বসেছিলেন ভাইপো অভিষেক। তৃণমূল জনতা তখন থেকেই অভিষেকের মুখটা চিনতে শুরু করেছিল। তার পরবর্তী বছরগুলোয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত এবং ক্রমাগত উত্থানের কাহিনী সবার জানা। এ বারের ধর্নামঞ্চে অভিষেক এখনও দেখা যায়নি। কিন্তু রবিবার রাত থেকেই মাসির পাশে ঠায় দেখা দিয়েছে ‘মুন্নি’কে। কে এই মুন্নি? তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক বোনের মেয়ে।

ধর্নার মঞ্চে মমতার পাশে মুন্নি।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: দিনের শেষে অ্যাডভান্টেজ মমতা, একজোট করলেন বিরোধীদের, মোদীর সঙ্গীরা ধরি মাছ না ছুঁই পানি​

ভাইপোর উত্থান ঘটেছিল ২০০৬ সালের মঞ্চ থেকে। ২০১৯-এর মঞ্চ থেকে কি বোনঝির অভিষেকের পথ প্রশস্ত হচ্ছে? জল্পনা জোরদার তৃণমূলের অন্দরেই।

এ সব জল্পনা অবশ্য উপন্যাসের সাব-প্লট। মেন প্লটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সরকারি সচিবালয়ের সর্বোচ্চ তল থেকে রাজধানীর রাজপথে নেমে আসা এক নেত্রী। মমতাকে ফের রাস্তায় নেমে আসার সুযোগ দেওয়াটা ভুল হয়ে গেল না তো? কলকাতার মুরলীধর সেন লেন থেকে দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ— এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE