Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে এই আইন প্রয়োগ করতে হবে: মমতা

‘‘আমরা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি মানি না। ধর্ম যার যার আপনার, সংবিধান সবার।’’

জোড়াসাঁকোর মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

জোড়াসাঁকোর মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৪৯
Share: Save:

নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতায় পথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিল সোমবার বেলা ঠিক ১টায় ময়দানের কাছে রেড রোডের অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশ থেকে রওনা হয়। ওই মিছিল যায় জোড়াসাঁকো। সেখানে দুপুর দুটো নাগাদ মিছিল পৌঁছয়।

জোড়াসাঁকো পৌঁছে মঞ্চে ওঠেন মমতা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িকে সাক্ষী রেখে কয়েকটা কথা বলতে এসেছি। এক সময় যখন বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল, হিন্তু মুসলিমের হাতে রাখি পরিয়ে ‘বাংলার মাটি-বাংলার জল’ গান গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।’’

মমতা বলেন, ‘‘হঠাৎ আজ কী হল? বিজেপি ক্ষমতায় এসে নিজেদের আকাশের চেয়েও বড় ভাবছে। হিন্দুস্তান হমারা হ্যায়। অগর সব কা সাথ নেহি রহেগা, তো সব কা বিকাশ ক্যায়সে হোগা?’’

‘‘আপনারা ভোট দেন না? ভোটার তালিকায় আপনার নাম নেই? আপনার ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে না? আমরা সবাই নাগরিক। আপনি আবার কিসের নাগরিকত্ব দেবেন?’’— বললেন মমতা।

মমতা জোড়াসাঁকোর মঞ্চে বলেন, ‘‘আমরা হিংসা সমর্থন করি না। আমার কাছে প্রমাণ আছে, আপনাদের-আমাদেরই কেউ কেউ বিজেপির টাকা খেয়ে এ দিক ও দিক আগুন জ্বালাচ্ছে।’’

মমতার কথায়, ‘‘কেউ দয়া করে ট্রেনে আগুন জ্বালাবেন না। অধিকাংশ ট্রেন ভারত সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে। বার বার বলছি, ট্রেনে আগুন দেবেন না। পোস্ট অফিসে আগুন দেবেন না। রাস্তায় আগুন দেবেন না। যাঁরা আপনার পক্ষে রয়েছেন, তাঁদের সমস্যা ফেলছেন কেন?’’

মমতা বলেন, ‘‘সিএবি প্রত্যাহার করতে হবে। যত ক্ষণ না সিএবি প্রত্যাহার করা হবে, তত ক্ষণ আমরা রাস্তায় থাকব।’’

‘এখানে আর এক জন বিজেপি নেতা এসেছেন, বলেছেন, ‘সাবধান করে দিচ্ছি। কেন আগুন জ্বলছে?’ আমি বলছি, আগে অসমকে গিয়ে বলো। সেখানে তোমার সরকার রয়েছে।’’—বললেন মমতা।

মমতার কথায়, ‘‘আমাদের সরকারকে ফেলে দেবে? ফেলে দিন। এই ইস্যুতে আমরা যে লড়াই করছি, তা থামবে না আর।’’

মমতা বলেন, ‘‘আমাকে জিজ্ঞেস করছে সিআইএসএফ লাগবে? সিআরপিএফ লাগবে? বিএসএফ লাগবে? আমি বলছি, লাগবে না। আমাদের পুলিশই যথেষ্ট। আমাদের সাধারণ মানুষ পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করে সব ঠিক করে নেবে।’’

‘‘বাংলা দখল করার প্ল্যান ভেস্তে দেব। সবাই রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠান।’’—বললেন মমতা।

মমতার কথায়, ‘‘আমি সবাইকে ক্ষমা করি। কিন্তু বিজেপির দালালদের ক্ষমা করি না।’’

মমতা বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি মানি না। ধর্ম যার যার আপনার, সংবিধান সবার।’’

‘‘আমি বাংলায় আছি। আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে এনআরসি করতে হবে। সিএবি করতে হবে।’’—বললেন মমতা।

------------------------------------------------

মিছিল শুরুর আগে এ দিন দুপুরে বাবা সাহেব অম্বেডকরের মূর্তিতে মালা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মাল্যদানের পর তিনি উপস্থিত জনতাকে বলেন, ‘‘বিজেপি বাইরের লোক ঢুকিয়ে অশান্তি করার চেষ্টা করতে পারে। যাঁরা মিছিলে যাবেন, ভদ্র ভাবে মিছিলে চলবেন।’’

মিছিল থেকে কী স্লোগান দেওয়া হবে, তা দল থেকে ঠিক করে দেওয়া হবে বলে জানান মমতা।

মমতা জানান, এই মিছিলের স্লোগান হবে, তাঁরা জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে। তাঁরা নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে।

তৃণমূল নেত্রী জানান, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সারা ভারতের মানুষের যে প্রতিবাদ, তাতে তাঁরা শামিল হবেন।

মিছিল শুরুর আগে মমতা বলেন, ‘‘বাবা সাহেব অম্বেডকর ছিলেন সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান। সেই সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা আজকের ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে তার সার্বভৌমত্ব, তার ধর্মনিরপেক্ষতা, তার একতা— সব কিছু বজায় রেখেই আমরা আগামী দিন পথ চলব। যে ভাবে পথ চলছি।’’

মমতা জানান, এই মিছিল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের। কিন্তু তাঁরা সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে মমতা বলেন, ‘‘দেশ যখন বিপদে পড়ে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সকলকে কাজ করতে হয়।’’

এর পরেই তৃণমূল নেত্রী উপস্থিত জনতাকে একটি শপথবাক্য পাঠ করান।

মমতা একটি করে বাক্য বলতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে সমবেত জনতা সেই বাক্য উচ্চারণ করে।

মমতার সঙ্গে উপস্থিত জনতা বলে— ‘‘আজকের শপথ: আমরা সবাই নাগরিক। সর্ব ধর্ম সমন্বয়ই আমাদের জীবন আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। নিশ্চিন্তে থাকব। শান্তিতে থাকব। বাংলায় এনআরসি ও ক্যাব করতে দিচ্ছি না। দেব না। শান্তি রাখতে হবে। জয় হিন্দ। বন্দে মাতরম। জয় বাংলা।’’

কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় এর পর মিছিল এগিয়ে যায় জোড়াসাঁকোর দিকে।

বেলা সওয়া ১টা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় মেয়ো রোডে।

বেলা দেড়টা নাগাদ মিছিল ধর্মতলা মোড় ছাড়িয়ে পৌঁছল ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে।

দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে মিছিল পৌঁছয় চাঁদনি চক। বিশাল মিছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে জোড়াসাঁকোর দিকে।

বেলা ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ মিছিল পৌঁছল কলকাতা মেডিকেল কলেজের সামনে।

দুপুর ২টোয় মিছিলের মুখ পৌঁছল জোড়াসাঁকোয়। মঞ্চে উঠে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ওই আইন মানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE