শুভেচ্ছা: বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
প্রায় আড়াই বছর পরে দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিনিট চল্লিশের সেই সাক্ষাৎ শেষে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘খুব ভাল’ বৈঠক হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক দাবি থেকে নাম বদল— সব নিয়েই আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীকে ডেউচা পাঁচামি কয়লা প্রকল্পের উদ্বোধনে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান মমতা।
মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে এটিই ছিল মমতার সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ। ফলে জল্পনা ছিল সর্বস্তরে। গত কাল মোদীর জন্মদিনে বাংলার মিষ্টি আর পাঞ্জাবি উপহার পাঠিয়েছিলেন মমতা। আজ বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকে বসার আগে মোদীকে ফুলের তোড়া দেন তিনি। তৃণমূল সূত্র জানায়, রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ, বকেয়া ঋণ মকুব-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের কথা হয়। মমতা বলেন, ‘‘শপথগ্রহণের সময়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য দিল্লি আসতে পারিনি। আজকের বৈঠকটি ছিল সরকারের সঙ্গে সরকারের বৈঠক।’’ এর রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই বলেই দাবি তৃণমূল নেত্রীর। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, সাধারণত বাজেটের আগে মুখ্যমন্ত্রীরা দাবি-দাওয়া জানাতে দিল্লি যান। এখন যখন রাজীব কুমারকে সিবিআই খুঁজছে, তখনই মমতার দিল্লি যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ডেউচা-পাঁচামি কয়লা ব্লকটি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্র। বীরভূমের ওই এলাকায় সামান্য হলেও মাওবাদী সমস্যা আছে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, ওই প্রকল্পের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী এলে মাওবাদী সমস্যা মেটানো সহজ হবে রাজ্যের পক্ষে। পাওয়া যাবে কেন্দ্রীয় সাহায্য। আজ এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ব্লক হল ডেউচা পাঁচামি। যেখানে কয়লা উত্তোলনের কাজ রাজ্য করবে। দুর্গাপুজো-নবরাত্রি মিটে যাওয়ার পরে যে কোনও একটি দিনে প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’’ ওই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ‘গ্যারান্টি মানি’ ৫০ কোটি টাকাও কেন্দ্রের কাছে রাজ্য জমা করেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মাথায় পাহাড়-প্রমাণ ঋণের বোঝা সত্ত্বেও কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়ন চলছে, তা আজ মোদীর কাছে বিশদে তুলে ধরেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও ২০১৮-১৯ সালে বাংলার জিডিপি ১২.৫৮ শতাংশ, যা গোটা দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। ফি-বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ মেটানোর পরেও কী ভাবে আর্থিক ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে রাজ্য এগিয়ে চলেছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজ বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেন মমতা। আর্জি জানান, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প খাতে রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় সাড়ে তেরো হাজার কোটি টাকা যেন দ্রুত অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রক।
নীতিগত ভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের বিরোধী তৃণমূল। এ নিয়েও কথা হয় মোদী-মমতার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক, রেল, বিএসএনএল, এয়ার ইন্ডিয়া, অস্ত্র কারখানার ক্ষেত্রে সরকারের নীতি নিয়ে আগেও চিঠি দিয়েছি। আজ সেই চিঠিগুলিই প্রধানমন্ত্রীকে ফের দেওয়া হয়েছে।’’ তবে কেন্দ্রের তরফে কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে কি না, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেননি। সূত্রের দাবি, ডানলপ-জেসপের মতো কারখানা রাজ্য নিজেই চালাতে উৎসাহী বলে আজ মোদীকে জানিয়েছেন মমতা।
দিনভর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়। আর সন্ধ্যায় বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতা বৈঠক করেন সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলের সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy