বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের আগে জেলায় এসে অন্তত তিনটি সরকারি দফতরের কাজকর্মে তিনি যে সন্তুষ্ট নন, তা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর (পিএইচই) এবং পূর্ত দফতরের ভূমিকায় উষ্মা চেপে রাখেননি তিনি। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভূমি দফতর আর পিএইচইতে ঘুঘুর বাসা আছে।’’ মমতার ভর্ৎসনার মুখে পড়ে পূর্ত দফতরও। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘খরচা করে দশ শতাংশ, নব্বই শতাংশ বেশি দিয়ে দেয়। দেখলেই ভয় লাগে।’’
সরকারি খরচের ক্ষেত্রে কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আমি লোকের পেটে ভাত দিতে চাই। সে টাকাটা খরচ করব, যেটা দিলে লোকের পেটে দু’টো ভাত পড়বে। সে খরচ করব না, যাতে কেউ কারও ভাত কেড়ে পেটে ভরতে পারে।’’
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘ভোট-কুশলীর শেখানো বুলি আউড়ে পুরভোটের বৈতরণী পার হতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রও বলেন, ‘‘সরকারি দফতরগুলিতে যে ঘুঘুর বাসা রয়েছে, রাজ্যবাসী তা আগেই জেনেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এত দিন বাদে তা জানলেন, এটাই আশ্চর্যের!’’
আরও পড়ুন: নিজের সইয়ে মানসিক হাসপাতাল থেকে ছুটি
প্রশাসনিক বৈঠকে জানুয়ারির শেষে সারেঙ্গায় ‘ওভারহেড রিজ়ার্ভার’ ভাঙার প্রসঙ্গ ওঠে। খাতড়ার বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি ও খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত মিত্র অভিযোগ করেন, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কাজে মানুষ ক্ষুব্ধ। মমতা বলেন, ‘‘পিএইচই-র জন্য আমাকে এত কিছু শুনতে হচ্ছে।’’ সারেঙ্গার ভাঙা ট্যাঙ্ক একই ঠিকাদারকে তৈরি করে দিতে হবে বলে জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দরকার হলে সরকার সম্পত্তি ক্রোক করবে, আমি ফিরে গিয়ে সেই আইন করব।’’
মুখ্যসচিব তাঁকে জানান, ওই ঠিকাদারই নতুন ট্যাঙ্ক তৈরি করবেন। তবে তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ওই ঠিকাদারের হাতে এখনও কয়েকটি কাজ রয়েছে। সেগুলির উপরে নজর রাখতে জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পিএইচই মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন খোঁজ নিয়ে, তাঁর নির্দেশমতো কাজ করব।’’
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা প্রেক্ষাগৃহ তৈরির আবেদন করায় সচিবেরা জানান, পূর্ত দফতর বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করেছে। টাকার অঙ্ক শুনে তা বাতিল করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ত দফতরকে দিয়ে ‘ডিপিআর’ করানোর ব্যাপারে ডিএম-কে সতর্ক করেন। এক জেলা পূর্ত কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘খরচ বাড়িয়ে দেখানোর সাহস আমাদের নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy