Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘নববর্ষে সস্তা হবে পেঁয়াজ’ 

বছরে প্রায় ৩৫ লক্ষ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকে রাজ্যে। উৎপাদন হয় সাত লক্ষ টনের কাছাকাছি। বাকিটা বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৭
Share: Save:

পেঁয়াজের দামে কিছুটা উন্নতির দাবি করল মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের তৈরি করা টাস্ক ফোর্স। তবে আজ, বৃহস্পতিবারও কলকাতার লেকমার্কেটে কেজি প্রতি ১৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।

টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা এ দিন বাগুইআটির দু’টি এবং লেকটাউন বাজারে আনাজের দাম খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন। টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের দাবি, তিনটি বাজারেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। তাঁর কথায়, ‘‘বুধবার পাইকারি বাজারে যেখানে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সেই দর ছিল কেজি প্রতি ১০০-১১২ টাকা। এ দিন রাজস্থান থেকে ছ’টি পেঁয়াজের গাড়ি আসায় দাম কিছুটা কমেছে। তা ছাড়া, পুরনো দরে যাঁরা পেঁয়াজ কিনেছিলেন, তাঁরা কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে পেরেছেন।’’

মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ও আশপাশের বাজারে এ দিন কেজি প্রতি ১৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শুক্রবার দর ১৬০-এ পৌঁছতে পারে। কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ, ঘুঘুমারি বাজারে পেঁয়াজ ছিল ১৫০ টাকা কিলো। মালদায় ১২০-১৪০ টাকা, জলপাইগুড়ির বাজারে কেজি প্রতি ১২০-১৩০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের শেষে রাজ্যে চাষ হওয়া পেঁয়াজ উঠবে। তখন বাইরের রাজ্য থেকেও পেঁয়াজ আসবে। ফলে জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজের দাম একেবারে নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে।’’

আরও পড়ুন: গোলাপি আনাজে রাতের টর্চ, বর্ষাকালীন পেঁয়াজ পাহারায় রাত জাগছেন চাষিরা

বছরে প্রায় ৩৫ লক্ষ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকে রাজ্যে। উৎপাদন হয় সাত লক্ষ টনের কাছাকাছি। বাকিটা বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়। কৃষি দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘অনেক আগেই রাজ্য সরকার পেঁয়াজের বরাত দিয়ে রেখেছিল কেন্দ্রকে। তখন মহারাষ্ট্র থেকে পেঁয়াজ আসেনি। পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানকার মজুতের অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। অকাল বৃষ্টিতে রাজ্যে উৎপাদিত পেঁয়াজের কিছুটা নষ্ট হয়েছে। কেন্দ্র এখন পেঁয়াজ আমদানি করার কথা বলছে। সেটা যখন আসবে, তখন রাজ্যও পেঁয়াজ পাবে। কিন্তু পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল কেন্দ্রের।’’

মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সব রকমের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।’’ শহর ও শহরতলির ৯২টি-সহ রাজ্যে মোট ১৩১টি সরকারি সুলভ মূল্যের স্টলে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এ দিন ইনফোকমে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পেঁয়াজের দাম ১৪০ টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।’’

দিল্লিতেও তৎপরতা ছিল সরকার ও বিরোধী শিবিরে। পেঁয়াজ হাতে নিয়েই সংসদে গাঁধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। নেতৃত্বে কাল জেল থেকে ছাড়া পাওয়া পি চিদম্বরম। তাঁর অভিযোগ, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আনার সিদ্ধান্ত এত দেরি করে কেন? কংগ্রেসের অভিযোগ, কালোবাজারিদের সুবিধা করে দিচ্ছে কেন্দ্র। সমাধান সূত্র খুঁজতে এ দিন সন্ধেয় মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। সূত্রের খবর, পেঁয়াজের কালোবাজারি আটকাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন অমিত। কেন্দ্রের পক্ষে মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পেঁয়াজ নিয়ে সাময়িক সমস্যা হয়েছে। ...পেঁয়াজ বাদ দিলে অর্থনীতি ভালই চলছে।’’

পেঁয়াজ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ‘‘নভেম্বরে পেঁয়াজের দাম ৬১.৯৪ শতাংশ বেড়েছে। গোটা বছরে বেড়েছে ২৪৩.৬৪ শতাংশ। আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন।’’

ঘরোয়া আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিজেপির নেতারাও। এরই মধ্যে আজ পেঁয়াজের দাম আরও বাড়লে ভাল হয় বলে মন্তব্য করে বসেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খান। তাঁর যুক্তি, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে এতে ক্ষতির কী হল!

দাম যত বাড়বে, তত কৃষকদের লাভ। কিন্তু বেশি দামের ফায়দা নিচ্ছে ফড়েরা, আর আম আদমির পকেট ফাঁকা হওয়ার দশা— তা নিয়ে অবশ্য রা কাড়তে দেখা যায়নি বিষ্ণুপুরের সাংসদকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Onion West Bengal Mamata Banerjee BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE