প্রতীকী ছবি।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘সমান কাজের জন্য সমান বেতন’ সংক্রান্ত একটি মামলায় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, স্থায়ী শিক্ষকদের মতোই বর্ধমানের আংশিক সময়ের দুই শিক্ষককে ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ‘বেসিক পে’ বা মূল বেতন দিতে হবে। এবং মূল বেতনের যাবতীয় বকেয়া মেটাতে হবে হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে।
আইনজীবীরা জানান, বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের ফলে রাজ্যের বাকি আংশিক সময়ের শিক্ষকদের মূল বেতনও স্থায়ী শিক্ষকদের সমান হতে চলেছে।
বর্ধমান জেলার খানদ্রা হাইস্কুলের আংশিক সময়ের শিক্ষক অনির্বাণ ঘোষের আইনজীবী লক্ষ্মীকুমার গুপ্ত এবং ওই জেলারই বিটরা হাইস্কুলের আংশিক সময়ের শিক্ষক বরুণকুমার ঘোষের আইনজীবী সৌমেনকুমার দত্ত ও সৌরভ দত্ত বুধবার জানান, ২০১৯ সালে ‘সমকাজে সমবেতন’ দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে রাজ্য সরকার। বিচারপতির সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ ৩ সেপ্টেম্বর তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, দেশ বা রাষ্ট্র তখনই উন্নতি করতে পারে, যখন তার নাগরিকেরা শিক্ষিত হতে পারেন। যে-সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা থাকে না, তাকে অসাম্যের শিকার হতে হয়। সেই ব্যবস্থা সমাজের পক্ষে ‘আত্মহননের’ শামিল। আংশিক সময়ের শিক্ষক হোন বা চুক্তিতে নিযুক্ত শিক্ষক, তাঁরা সকলে শিক্ষকই। কোনও আংশিক সময়ের শিক্ষককে যে-ভাবেই নিযুক্ত করা হোক না কেন, তিনি যদি স্থায়ী পদে নিযুক্ত শিক্ষকদের মতো একই ধরনের দায়িত্ব নেন বা কাজ করেন, তা হলে তিনি স্থায়ী পদে নিযুক্ত শিক্ষকদের মতো ন্যূনতম মূল বেতন দাবি করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট দুই আংশিক সময়ের শিক্ষকের বকেয়া অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত ডিভিশন বেঞ্চে কিছু তথ্য পেশ করে জানিয়েছিলেন, ওই দুই শিক্ষকের নিয়োগ স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র মাধ্যমে হয়নি। তাই তাঁরা সমান বেতনের দাবি জানাতে পারেন না। তাঁদের সমবেতন দিতে গেলে রাজ্যের আর্থিক ক্ষমতা বিবেচনা করে দেখতে হবে। ডিভিশন বেঞ্চ অ্যাডভোকেট জেনারেলের আবেদন মানতে চায়নি। আইনজীবীরা জানান, ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ওই দু’জন ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষকতা করলে স্থায়ী শিক্ষকদের মতো যাতে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা পান, রাজ্য সরকারকে সমব্যথী হয়ে সেই দিকটাও বিবেচনা করতে হবে।
আইনজীবীরা আরও জানাচ্ছেন, ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৯-এর ডিসেম্বর এবং ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত কেন সমান মূল বেতন দেওয়া হবে না, সেই ব্যাপারে আংশিক সময়ের ওই দুই শিক্ষক তাঁদের ১৭ বছরের কাজ করার সমস্ত নথিপত্র-সহ আবেদন (ই-মেল মারফত) জানাতে পারবেন সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবের কাছে। সংশ্লিষ্ট দুই স্কুলের কর্তৃপক্ষ ওই দুই শিক্ষকের হাজিরা খাতা ও ক্লাস রুটিন জমা দেবেন স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিবের কাছে। চুক্তিতে নিয়োগের যুক্তি দেখিয়ে স্কুলশিক্ষা সচিব তাঁদের আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy