Advertisement
০৩ মে ২০২৪

‘হঠাৎ করে গুলির শব্দ, কিছু বোঝার আগেই দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে’

তখনও স্তব্ধ হয়ে ট্রলির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁর সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী মিলন সাহা। তাঁর সারা গায়ে লেগে চাপ-চাপ রক্ত।

হাহাকার: ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বিধায়কের মা। ছবি: প্রণব দেবনাথ

হাহাকার: ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বিধায়কের মা। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সুস্মিত  হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০১
Share: Save:

ইমার্জেন্সির সামনে ট্রলিতে রাখা তাঁর নিথর দেহ। সাদা চাদরে ঢাকা।

তখনও স্তব্ধ হয়ে ট্রলির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁর সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী মিলন সাহা। তাঁর সারা গায়ে লেগে চাপ-চাপ রক্ত।

আর বাকি যাঁরা কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গাড়িতে তুলে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে, তাঁরা কিছুটা দূরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করার পর থেকেই কেউ কথা বলতে পারছেন না। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না খুন হয়ে গিয়েছেন তাঁদের প্রিয় দাদা সত্যজিৎ বিশ্বাস।

এই সময়ে হাসপাতালে ঢোকেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু। তিনি এসেই দেহ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন তৃণমূলের জেলাস্তরের অন্য নেতারাও। এসে পৌঁছন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। দেহ দেখে মন্ত্রী কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে যান। তার পর অসহায় ভাবে মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়েন। রাত ১০টা নাগাদ আসেন মন্ত্রী রত্না ঘোষ। জানা গিয়েছে, তিনি শনিবার সন্ধ্যায় সত্যজিতের পুজো উদ্বোধন করে চলে আসার পরেই খুন হন বিধায়ক।

এ দিন রাতে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে রত্না জানান, সরস্বতী পুজোর উদ্বোধন করে ফেরার পরে সেখানে গুলি চলার খবর পান তিনি। আশঙ্কিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে সত্যজিতের মোবাইলেই ফোন করেন রত্না। কিন্তু ফোন বেজে যায়। এর পরেই অন্য সূত্রে তিনি সত্যজিতের মৃত্যুর খবর পান। তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়ের মতো ছিল সত্যজিৎ। ও নেই, আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না!’’

আরও পড়ুন: পুজোর আসরে তৃণমূল বিধায়ককে গুলি করে খুন হাঁসখালিতে, শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর

গৌরীশঙ্কর দত্ত হাসপাতালে ঢুকেই কেঁদে ফেলেন। যাঁর হাত ধরে সত্যজিতের রাজনৈতিক উত্থান, সেই গৌরীশঙ্কর বলেন, ‘‘ও আমাদের পরিবারের সদস্য। খুনি নিস্তার পাবে না।’’এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে অস্থির ভাবে বাইরে চলে যান। তাঁকে ধরে চেয়ারে বসানো হয়। হাসপাতালে তত ক্ষণে জড়ো হয়েছেন তৃণমূলের শতাধিক কর্মী।

হাসপাতালে প্রায় প্রথম থেকেই উপস্থিত ছিলেন সত্যজিতের মেজ দাদা সুজিত বিশ্বাস। গোটা ঘটনায় হতচকিত তিনি। সুজিত বলেন, ‘‘ভাইয়ের কোনও শত্রু ছিল না। ওর সঙ্গে এই রকম হবে, ভাবিনি। ভাইও বোধহয় ভাবেনি। সেই কারণে নিরাপত্তারক্ষীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা খুনির চরম শাস্তি চাই।’’

প্রতিবেশী ফুলবাড়ির বাসিন্দা রাখি বিশ্বাস, সুস্মিতা মণ্ডলেরাও খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন। সত্যজিতের দেহ দেখার পরে কান্নাকাটি শুরু করেন। রাখি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘সত্যজিৎ বিশ্বাসের মতো মানুষ এ ভাবে খুন হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।’’

রাতের দিকে সত্যজিতের মা অঞ্জনা বিশ্বাস হাসপাতালে এলেও তাঁকে সেখানে বেশি ক্ষণ রাখা হয়নি। ছেলের দেহ দেখে কান্নাকাটি শুরু করলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইতিমধ্যে হাসপাতালে এসে পৌঁছান পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমনদীপ, এ ডি জে নীরজ কুমার সিংহ-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। রাতের দিকে এসে পৌঁছন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি বাণীকুমার রায়। এর পরেই হাসপাতালে উপস্থিত তৃণমূলের সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীরা এবং পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তারা হাসপাতালের একটি ঘরে ঢুকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু করেন। ঘটনাস্থলে আসেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘অপরাধীকে খুঁজে বার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’’

এই ঘটনার পরে গোটা ফুলবাড়ি এলাকা থমথমে হয়ে যায়। গোটা এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সময়ে উপস্থিত থাকা অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা ওঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে গুলির শব্দ হল। কিছু বোঝার আগেই দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ওঁকে তুলে নিয়ে আমরা হাসপাতালে চলে আসি।’’

কিন্তু তত ক্ষণে মারা গিয়েছেন সত্যজিৎ। ট্রলিতে শোয়ানো তাঁর নিথর দেহ। সাদা চাদরে ঢাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death MLA TMC Krishnaganj TMC MLA murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE