Advertisement
০৫ মে ২০২৪

হস্তক্ষেপ কংগ্রেস সভাপতির, রাজ্যে রফাসূত্র ২৫-১৭

শেষ পর্যন্ত সীতারাম ইয়েচুরির দেওয়া অনাক্রমণ চুক্তির প্রস্তাবই মেনে নিতে চলেছেন রাহুল

সব ঠিকঠাক চললে রাজ্যে কংগ্রেস লড়তে পারে ১৭ আসনে। বাকি ২৫টায় বাম ও সহযোগীরা।—ফাইল চিত্র।

সব ঠিকঠাক চললে রাজ্যে কংগ্রেস লড়তে পারে ১৭ আসনে। বাকি ২৫টায় বাম ও সহযোগীরা।—ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৮
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত সীতারাম ইয়েচুরির দেওয়া অনাক্রমণ চুক্তির প্রস্তাবই মেনে নিতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বাংলায় সিপিএম ও কংগ্রেস কেউ কারও জেতা আসনে প্রার্থী দেবে না, এই রফায় সহমত আদায়ের জন্য প্রদেশ নেতাদের বোঝানো হচ্ছে। দলের অন্দরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেই সিপিএমকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমঝোতার কথা জানিয়ে দেবে কংগ্রেস। সব ঠিকঠাক চললে রাজ্যে কংগ্রেস লড়তে পারে ১৭ আসনে। বাকি ২৫টায় বাম ও সহযোগীরা।

গত বার সিপিএমের জেতা রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ায় দাবি করার ফলেই যাবতীয় জটিলতা তৈরি হয়েছে। বামফ্রন্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই দুই আসনে তাদের দুই বর্তমান সাংসদ মহম্মদ সেলিম ও বদরুদ্দোজা খানের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছে। তার পরেই চাপে পড়ে কংগ্রেস শিবির। বাম সমর্থন ছাড়া একা লড়ে নিজেদের জেতা চারটে আসন রক্ষা করা যাবে কি না, তাই নিয়েই সংশয়ে পড়েন দলের একাধিক সাংসদ। প্রদেশ কংগ্রেস থেকেও আপৎকালীন রিপোর্ট যায় আইসিসি র কাছে। রাতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল কথা বলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে। রাহুলকে সীতারাম জানিয়ে দেন, ৬টা আসনে কেউ কারও বিরুদ্ধে লড়বে না, এই সূত্র না মানলে কোনও সমঝোতা সম্ভব নয়। রাহুলের নির্দেশে রাত থেকেই আসরে নামেন বাংলার ভারপ্রাপ্ত আইসিসি নেতা গৌরব গগৈ।

রাজ্যের শীর্ষ স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের প্রত্যেকের কাছে গৌরব জানতে চান, একা লড়ে ওই ৬টা বা নিদেনপক্ষে ৪টে আসন তাঁরা জিততে পারবেন কি না। কেউই তেমন আত্মবিশ্বাস দেখাতে পারেননি! বরং, রাজ্যের নেতাদের অনেকেই অনুরোধ করেন, দীপা দাসমুন্সীকে রাজি করানোর ভার যেন আইসিসি-ই নেয়। শেষমেষ এখন রায়গঞ্জের দাবি ছেড়ে দিলে পরের বার রাজ্যসভায় দীপাকে প্রার্থী করা হবে, এই ফর্মুলায়। শনিবার জট খোলার দিকে এগোনো হচ্ছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন: মোদীর সভাস্থল, দায়িত্ব রাজ্যকেই

আইসিসি-র দেওয়া ফর্মুলা অনুযায়ী, কংগ্রেস ও সিপিএম নিজেদের জেতা ৬ আসনে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়বে না। বাকি ৩৬টা কী ভাবে বাটোয়ারা হবে, রাজ্য স্তরে দু’পক্ষের আলোচনায় ঠিক হবে। প্রকাশ্যে কোনও পক্ষই অবশ্য বিশেষ মন্তব্যে যেতে নারাজ। গৌরবের বক্তব্য, ‘‘সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সমঝোতা ছাড়া একা লড়লে নিজেদের হাল খারাপ হবে, উল্টে বিজেপি-রও সুবিধা হবে। তাই এ ছাড়া পথ নেই।’’ আর সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের মন্তব্য, ‘‘রায়গঞ্জ হয়েছে বটল নেক। কিন্তু গোটা বোতলটাই তার জন্য ভেঙে ফেলা যায় না! দেখা যাক, কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত কী করে।’’

এরই মধ্যে বাংলায় একটা করে আসনে লড়তে চেয়ে সীতারামের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এনসিপি এবং আর জে ডি নেতারা। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ও এনসিপি জোটের সমর্থনে সিপিএম একটি আসনে লড়ছে। আবার বিহারে বেগুসারাই আসনে কানহাইয়া কুমারের জন্য কংগ্রেসের পাশাপাশি আরজেডি-র সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে সিপিআই। তার বিনিময়ে বাংলায় ওই দুই দলকে দু’টি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বামফ্রন্ট। বাম জমানার মন্ত্রী ও অধুনা এনসিপি-র রাজ্য সভাপতি প্রবোধ সিংহ বলছেন, ‘‘একটা আসনের জন্য আমরা অনুরোধ করেছিলাম বামফ্রন্টকে। কোন আসন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে এখনও কথা হয়নি।’’ ব্রিগেডে তৃণমূলের সমাবেশে হাজির থাকলেও শরদ পওয়ার-লালুপ্রসাদের দল বাংলায় শেষ পর্যন্ত বামেদের হাত ধরেই ভোটে লড়তে পারে। যা দেখা গিয়েছিল দু’বছর আগে বিধানসভা ভোটেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE