Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ব্যাঙ লাফিয়ে’ দিলীপ ঘোষের পায়ে পড়লেন রেলকর্তা!

না যোগাসন, না জিমন্যাস্টিক্স, না প্রণামের চেনা ভঙ্গি— খোদ এক রেল আধিকারিকের এমন কাণ্ডকারখানায় ততক্ষণে হাসির রোল উঠেছে।

শ্রীচরণেষু: প্রণামের মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্র।

শ্রীচরণেষু: প্রণামের মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

গোড়ায় মনে হয়েছিল বুঝি ডন বৈঠকের তোড়জোড় করছেন। কিন্তু এ কি! দু’হাতে ভর দিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ার ভঙ্গিমাতেই লাফাতে লাফাতে এগোতে শুরু করলেন তিনি। কিছুটা এগিয়েই অবশ্য থামলেন। তারপর একেবারে বিজেপির রাজ্য সভাপতির শ্রীচরণে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত।

না যোগাসন, না জিমন্যাস্টিক্স, না প্রণামের চেনা ভঙ্গি— খোদ এক রেল আধিকারিকের এমন কাণ্ডকারখানায় ততক্ষণে হাসির রোল উঠেছে। লোকজন হাততালি দিচ্ছে, সঙ্গে জয় শ্রীরাম ধ্বনি। হাততালি দিয়ে উঠলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।

রেলশহর খড়্গপুরের বিধায়ক দিলীপ। মেদিনীপুরের সাংসদও। রবিবার রেলের বাংলো চত্বরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ছিলেন দিলীপ। তাঁকে দেখেই খড়্গপুর রেল ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আধিকারিক প্রবীর গঙ্গোপাধ্যায় ওই কাণ্ড করে বসেন। পরে দিলীপের সঙ্গে চারাগাছ রোপণেও হাজির ছিলেন প্রবীর। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ‘ভারত মাতা কি জয়’-ও বলেছেন তারস্বরে।

ওই মুহূর্তের ভিডিয়ো ভাইরাল হতে দেরি হয়নি। একজন রেল আধিকারিক বিজেপি নেতার পায়ে এ ভাবে কেন প্রণাম করলেন, সেই প্রশ্নে শোরগোল পড়ে। শুরু হয় সমালোচনা। রেলকর্তার এমন আচরণে হতবাক রেলকর্মীরাও। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক কর্মীর কথায়, “স্যর শহরের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকেন। তাঁকে এ দিন রামভক্তের মতো লাফাতে-লাফাতে বিজেপি সাংসদকে প্রণাম করতে দেখে যেমন হাসি পাচ্ছে, তেমনই আশ্চর্য হচ্ছি।”

অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিশ্ব যোগ দিবসে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিদান মেনে দেশ জুড়ে যোগাসনে শামিল হয়েছিল ছেলে-বুড়োর দল। তা যতটা না ছিল স্বাস্থ্যের খাতিরে, তার থেকে বেশি ছিল শাসকদলের মন রক্ষায়। এ দিন ওই রেলকর্তার আচরণেও তেমনই আভাস পাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। খড়্গপুরের পুরপ্রধান তৃণমূল নেতা প্রদীপ সরকারের মতে, “আসলে বিজেপি এমন সংস্কৃতি তৈরি করছে, যেখানে আনুগত্য না দেখালে চাকরিতে সমস্যা হবে। তাই শ্রদ্ধা থেকে নয়, মনে হয় বাধ্য হয়েই দিলীপ ঘোষকে প্রণাম করেছেন ওই রেল আধিকারিক।”

দিলীপ অবশ্য এতে আবেগ আর ভালবাসাই দেখতে পাচ্ছেন। বলছেন, ‘‘খড়্গপুরের মানুষ আমাকে ভালবাসেন। ওই রেল আধিকারিকও কয়েকদিন ধরে আমার বাংলোয় আসছিলেন। উনি এ ভাবে প্রণাম করায় অস্বস্তিতে পড়েছিলাম। তবে পায়ে মাথা ঠেকাতেই আমি ওঁকে হাতে ধরে তুলে ফুল দিয়েছি।

মনে হয় আবেগেই উনি এমনটা করে ফেলেছেন।” যাঁর কার্যকলাপ নিয়ে এত কিছু, সেই প্রবীর কিন্তু এতে বিতর্কের কিছুই দেখছেন না। বলছেন, “বৃক্ষরোপণের রাজনৈতিক রং হয় না। আমি রেলের অফিসার অ্যাসোসিয়েশনে যুক্ত। সংগঠনের বিষয়ে সাংসদের সঙ্গে কথা বলতে ওখানে গিয়েছিলাম।’’

ও ভাবে প্রণাম করতে গেলেন কেন? প্রবীরের ব্যাখ্যা, রেল বাংলোয় হাজির অনেকে তাঁকে যোগাসন দেখানোর অনুরোধ করেছিলেন। তাই তিনি ওই ভঙ্গিমায় যোগাসন দেখাতে শুরু করেন। তখনই দিলীপ ঘোষ সামনে চলে আসেন।

কিন্তু ওই ভঙ্গিমা কোন যোগাসনের? এ বার প্রবীরের জবাব, ‘‘একে বলে ব্যাঙ লাফানো যোগা। এমনটা কেউ করতে পারবে না।’’

রেলশহরে কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে, এমনটা ক’জনেই বা পারে!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways BJP Dilip Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE