—প্রতীকী ছবি।
লটারির আর্থিক-মাহাত্ম্য একেই বলে!
সরকারি তথ্য বলছে, এ রাজ্যে প্রতিদিন ১০ কোটি লটারির টিকিট ছাড়া হয়। প্রতিটির দাম ৬ টাকা। দিনে গড়ে ৭ কোটি টিকিট বিক্রি হয়। অর্থাৎ, প্রতিদিন ৪০-৪২ কোটি টাকার লটারির কারবার চলে।
সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় লটারি নাগাল্যান্ড সরকারের ‘ডিয়ার লটারি’। রোজ ৩০ কোটি টাকার লটারি টিকিট বিক্রি করে নাগাল্যান্ড সরকার। বাংলার লটারি বাজারের ৫০% নাগাল্যান্ডের দখলে। এর পরেই অবশ্য ৩০% বাজার ধরেছে রাজ্যের ‘বঙ্গশ্রী’, ‘বঙ্গলক্ষ্মী’। আগে ১০% বাজারও ছিল না রাজ্যের হাতে। কারণ, রাজ্য সরকার সাপ্তাহিক লটারি চালাত। গত ১৪ মে থেকে রোজের লটারি শুরু করেছে নবান্ন। প্রাথমিক ভাবে প্রতিদিন ৩০ লক্ষ টিকিট ছেড়ে বাজার ধরার চেষ্টা হয়। দেখা যায়, কন্যাশ্রী-যুবশ্রীর রাজ্যে লটারির শ্রী-সিরিজেও আকৃষ্ট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই বুঝে ২৯ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন তিন কোটি টিকিট বাজারে ছাড়া শুরু করেছে রাজ্য লটারি। কর্তাদের দাবি, ‘‘৬৫% টিকিট বিক্রিও হয়ে যাচ্ছে।’’ নবান্ন জানাচ্ছে, গত বছর লটারির টিকিট বেচে ১৭ কোটি টাকা রাজকোষে এসেছিল। এ বার নভেম্বর পর্যন্তই ৭১ কোটি টাকা চলে এসেছে। বছর শেষে তা ১০০ কোটিতে পৌঁছবে বলে আশা। নাগাল্যান্ডের ‘ডিয়ার লটারি’-কে হারিয়ে ‘বঙ্গশ্রী’র শ্রেষ্ঠ আসন পাওয়া হল বলে— এমনও দাবি করেছেন নবান্নের কর্তারা।
লটারির উপর এখন নিয়ন্ত্রণ উঠে গিয়েছে। ফলে, কোনও রাজ্য নিজেরা লটারি চালু করলে দেশের যে কোনও রাজ্যে টিকিট বিক্রি করতে পারে। কেন্দ্রের মডেল আইন অনুসরণ করে সারা দেশে রাজ্যভিত্তিক নতুন লটারি আইন চালু হয়েছে। তার মধ্যেও প্রতিটি রাজ্যই কিছু নিজস্ব বিধি বজায় রেখেছে। এখন দেশে ১৩টি রাজ্য নিজেদের লটারি চালাচ্ছে। সেগুলি হল— কেরল, পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া, মহারাষ্ট্র, সিকিম, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অসম, অরুণাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর ও মেঘালয়। এই ১৩টি রাজ্যের লটারির টিকিট দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
কেন রাজ্য সরকারও রোজের লটারি শুরু করল? অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে বছরে অন্তত ৩০০০ কোটি টাকার লটারি কারবার চলে। কিন্তু বাংলার তা থেকে আয় হত সামান্যই। ভিন্ রাজ্যের লটারি কারবারিরা এখান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। জিএসটি চালু হওয়ার পর এখন আর রাজ্যের হাতে বিক্রয় কর বসানোর ক্ষমতাও নেই। ফলে, লটারি আর মদ থেকে আয় বাড়ানো অন্যতম পথ। এক কর্তার কথায়, ‘‘আগামী দিনে লটারি বাবদ অন্তত ১০০০ কোটি টাকা তুলতে হবে। না হলে কন্যাশ্রী, ক্লাবে টাকা দেওয়া, কৃষকদের চাষের খরচ বাবদ বছরে ৫০০০ টাকা আসবে কোথা থেকে?’’
কিন্তু সাধারণ মানুষের কী লাভ? পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, এ খেলার সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় রাষ্ট্র। ফলে, সোজাপথে একে আটকানোর উপায় নেই। তিনি বলেন, ‘‘এটা সংগঠিত আইনি জুয়া। তথ্য বলছে, সারা দেশে টাকা খরচের নিরিখে প্রথম স্থানটি ধর্মের দখলে রয়েছে। দ্বিতীয় লটারির টিকিট।’’ মনোবিদ মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘মাদক থেকে আলাদা নয় এই নেশা। ক্ষতি হচ্ছে বুঝেও একটা সময়ে ফেরার জায়গা থাকে না।’’ ফলে হার হলেও জিতের আশায় খেলে যাওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy