Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Biman Bandyopadhyay

শোভন কি আবার তৃণমূলেই? আসরে স্পিকার, দীর্ঘক্ষণ কথা, জল্পনা তুঙ্গে

শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোনের কথা স্বীকার করেছেন শোভনও।

তৃণমূলে ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

তৃণমূলে ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ১৬:৩৫
Share: Save:

এত দিনে কি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অভিমান ভাঙাতে পারল তৃণমূল শিবির? বার বার চেষ্টা হলেও বরফ গলছিল না কিছুতেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে একেবারে খালি হাতে ফেরাতে পারলেন না শোভন। শনিবার, দু’জনের মধ্যে ফোনে কথাবার্তা হল বেশ কিছুক্ষণ। আগামী সপ্তাহে বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন শোভন। আর তাতেই বেহালা পূর্বের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী ও মেয়রের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা ক্রমশ চড়তে শুরু করেছে।

শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোনের কথা স্বীকার করেছেন শোভনও। দীর্ঘ দিন পর ফোনে কী কথা হল দু’জনের?

তৃণমূল সূত্রে খবর, নিষ্ক্রিয়তা কাটিয়ে শোভনকে দলের হয়ে নেমে পড়ার জন্য অনুরোধ করেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, শুধু স্পিকার হিসেবে নয়, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও সিনিয়র হিসেবেই তিনি ফোন করেছেন। জোড়াফুল শিবিরের খবর, মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই যে শোভন আর বিধানসভায় যাচ্ছেন না, সেই প্রসঙ্গও তোলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকার কথাও টেনে আনেন। শোভনের অনুপস্থিতি নিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও যে আক্ষেপ করছেন, তাও বলেন বিমান।

আরও পড়ুন: সংবিধান মেনেই জম্মু-কাশ্মীরে ব্যবস্থা, ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে বলল রাশিয়া​

এই কথোপকথনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলেন, বিধানসভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং হচ্ছে। তুমি তো অনেকদিন ধরেই আসছ না। তুমি মিটিংয়ে যোগ দাও।’’

স্পিকারের এই প্রস্তাবের উত্তরে কী বললেন শোভন? জানতে চাইলে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমি বলেছি, সময় পেলে আগামী সপ্তাহে গিয়ে দেখা করব। এর বাইরে কিছু নয়।’’ যদিও তৃণমূলের অন্দরের খবর, এর বাইরেও কিছু আছে। এবং এই কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে, শুরু হয়ে গিয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘর ওয়াপসির জল্পনাও।

তৃণমূল সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ভাল। আর সেই সমীকরণের কথা মাথায় রেখেই শোভনের মান ভাঙাতে এ বার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ময়দানে নামানো হয়েছে। ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছেন শোভন। শুধু তাই নয়, এত কাল এড়িয়ে গেলেও, এ বার নিজে থেকে দেখা করার আশ্বাসও দিয়েছেন।

২২ নভেম্বর, ২০১৮, মেয়রের পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণার দিন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আরও পড়ুন: কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ বিজেপির প্রাক্তন বিধায়কের বিরুদ্ধে​

গত বছর শেষাশেষি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বহুকালের প্রিয় কাননের দূরত্ব প্রকাশ্যে আসতে থাকে। শোভনের উপর নিজের বিরক্তি বাইরেও চেপে রাখেননি মমতা। এই অবস্থায় নভেম্বরের শেষাশেষি আচমকা মন্ত্রিত্ব ছাড়েন শোভন। এর পর কলকাতার মেয়র পদ থেকেও ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে।

এই ইস্তফা পর্বের পরও, দলের তরফে নানান সময়ে নানান ভাবে যোগাযোগ রাখা হতে থাকে শোভনের সঙ্গে। কিছু দিনের মধ্যে দলে ‘ফেরানোর’ উদ্যোগও শুরু হয়। কিন্তু অভিমানী শোভন তাতে একেবারেই আমল দেননি। তৃণমূলের তরফে এই সক্রিয়তা বাড়ে লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত হিসেবে শোভনের বাড়ি গিয়েছিলেন রতন মুখোপাধ্যায়। গিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। শোভনকে একাধিক বার ফোন করেন ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু, দলের তরফে বার বার বার্তাতেও সাড়া দেননি শোভন। বরং, ফিরহাদকে ফোনে একবার বলেও দেন, ‘‘আমি এখন ঘুমোব। পরে কথা বলব।’’ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও এড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

এটুকুই নয়, সম্প্রতি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বেঁধেন শোভন। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই ছবি বদলে যায় দু-একদিনের মধ্যেই। মিলি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্তফা দিতে চাইলেও তা গ্রহণ করেননি শিক্ষামন্ত্রী। বৈশাখীর অভিযোগ বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী। তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের সহানুভূতি ছাড়া এমন পদক্ষেপ যে কখনই সম্ভব হতো না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের কোনও সংশয় নেই। অন্য দিকে প্রথমে বিষোদগার করলেও, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রয়েছে বলে পরে জানিয়ে দেন বৈশাখী।

আরও পড়ুন: সিসিটিভি চুরি করে তার ফুটেজেই ধরা পড়ল দুই চোর, বাঁশদ্রোণীর ঘটনা​

কিন্তু কোন রসায়নে এত দিনে শোভনের এই নরম হওয়া? এক সময় দিল্লি গিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকে জল্পনা ছড়িয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। শোভন এবং বৈশাখীর সঙ্গে বিজেপির কথোপকথন এ যাবৎ যতই মসৃণ হোক না কেন, রাজ্য বিজেপির একাংশ অবশ্য এঁদের দু’জনকে এখনই স্বাগত জানাতে উৎসাহী নয় বলে খবর। আর তা মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছেন না শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। তাই এত দিন পরে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে দেখা করতে যাওয়ার নেপথ্যে এ সব কারণ থাকতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sovan Chatterjee Biman Banerjee Telephonic call
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE