Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অর্থ লগ্নি সংস্থার তদন্ত নিয়ে সরগরম রাজ্য, কেমন আছেন ভুক্তভোগীরা?

ফুল বেচে ৬ লাখ টাকা মেটাচ্ছেন সারদা- রোজ ভ্যালির এজেন্ট

রোজ বিকেলে বাজারে ফুলবোঝাই মোটরবাইক নিয়ে হাজির হন। বাইকে লাগানো মাইকে চলতে থাকে ঘোষণা, ‘‘আমার মাধ্যমে রোজ ভ্যালি, সারদা লগ্নি করে অনেকে টাকা খুইয়েছেন। সেই টাকা ফুল বেচে শোধ করতে চাই। ফুল কিনে আমাকে সাহায্য করুন।’’

ফুল বিক্রি প্রফুল্লের। নিজস্ব চিত্র

ফুল বিক্রি প্রফুল্লের। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

ট্রেনে গান গেয়ে ভিক্ষে করতে নেমেছিলেন। দু’বার আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এখন বাগনান বাজারে ফুল বেচে আমানতকারীদের টাকা মেটাচ্ছেন রোজ ভ্যালি ও সারদার প্রাক্তন এজেন্ট প্রফুল্ল সামন্ত।

রোজ বিকেলে বাজারে ফুলবোঝাই মোটরবাইক নিয়ে হাজির হন। বাইকে লাগানো মাইকে চলতে থাকে ঘোষণা, ‘‘আমার মাধ্যমে রোজ ভ্যালি, সারদা লগ্নি করে অনেকে টাকা খুইয়েছেন। সেই টাকা ফুল বেচে শোধ করতে চাই। ফুল কিনে আমাকে সাহায্য করুন।’’

অর্থ লগ্নি সংস্থার তদন্ত নিয়ে আগ্রহ নেই বাগনানের রবিভাগ গ্রামের বছর চল্লিশের প্রফুল্লর। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের এত টাকা কোথায় গেল? দোষীরা আদৌ শাস্তি পাবে কিনা কেউ জানে না!’’ তাঁর দাবি, ‘‘চার বছর ধরে এ ভাবে ফুল বেচে তিন লক্ষ টাকা শোধ করেছি। বাকি টাকাও শোধ করব।’’

আরও পড়ুন: ১০ ঘণ্টা সিবিআই অফিসে রাজীব, এক সঙ্গে বসানো হল কুণালকেও, আজ ফের তলব

পাঁচানি বাজারে পেতল-কাঁসার বাসন ও বইয়ের ছোট দোকান ছিল প্রফুল্লর। ছিল হোটেলও। ২০১১ সালে রোজভ্যালি ও সারদায় যোগ দেন। জনাপঞ্চাশ গরিব মানুষের কাছ থেকে প্রায় ছ’লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেন। নিজের হোটেল বিক্রি করে পাওয়া চার লক্ষ টাকাও লগ্নি করেছিলেন। ২০১৩-এর শেষ দিকে সারদার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ায় সঙ্কট ঘনিয়ে আসে। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।

সে দিনের কথা ভাবলে এখনও শিউরে ওঠেন প্রফুল্ল ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা। গ্রাহকেরা বাড়িতে হামলা করেছিলেন। কাঁসার দোকানের জিনিসপত্র বিক্রি করে কিছু টাকা শোধ করেন প্রফুল্ল। পুঁজির অভাবে দুই দোকানেই তালা পড়ে। মেয়ের হারমোনিয়াম নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ট্রেনে গান করে ভিক্ষের হাত পেতেছিলেন। তেমন টাকা না-ওঠায় হাল ছেড়ে দেন। দু’বার আত্মহত্যা করতে গিয়ে এক বার স্ত্রীর কাছে, এক বার গ্রাহকের কাছে ধরা পড়েন। তার পরেই ভাবনায় আসে আড়াই বিঘা জমিতে ফুল চাষের কথা। গ্রাহকদের সে কথা জানান। ভরসা রাখতে বলেন।

২০১৪ সালের গোড়া থেকে প্রফুল্ল জবা ফুলের চাষ শুরু করেন। স্ত্রী রোজ সকালে ফুল তুলে মালা গাঁথেন। প্রফুল্ল কোলাঘাটের ফুল-বাজার থেকে গাঁদা-রজনীগন্ধা নিয়ে আসেন। দুপুরে তিনিও বসেন মালা গাঁথতে। বিকেলে বিক্রি। গড়ে দিনে ৭০০ টাকা উপার্জন করছেন। দু’শো টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি টাকায় দেনা শোধ করছেন। কৃষ্ণার কথায়, ‘‘খুবই কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। তবে গ্রাহকেরা এখন খুশি।’’ এলাকার এক আমানতকারী কমলা আদক বলেন, ‘‘প্রফুল্লর কাছ থেকে কিছু টাকা ফেরত পেয়েছি। আমার বিশ্বাস, সব টাকা পেয়ে যাব।’’

‘‘সকলের টাকা শোধ না-হওয়া পর্যন্ত আমি থামব না’’— প্রত্যয়ের সুর প্রফুল্লর গলায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saradha Scam Chit Find Agent Money Flower
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE