Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তা নয়, ভিন‌্ ধর্মী যুগলকে পরিচয় লুকিয়ে রাজ্য ছাড়ার নিদান পুলিশের!

ভালবেসে বিয়ে করেছেন ভিন্‌ ধর্মের দু’টি ছেলেমেয়ে। কিন্তু অভিযোগ, রিজ়ওয়ানুর রহমান ও প্রিয়ঙ্কা তোদীর বিয়ের পরিণতির কথা মনে করিয়ে তাঁদের ‘গুজরাত বা কাশী-বাসী হওয়া’র পরামর্শ দিয়েছে পুলিশই! ঘটনাটি হুগলির জাঙ্গিপাড়া থানা এলাকার। অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০৫:১৬
Share: Save:

ভালবেসে বিয়ে করেছেন ভিন্‌ ধর্মের দু’টি ছেলেমেয়ে। কিন্তু অভিযোগ, রিজ়ওয়ানুর রহমান ও প্রিয়ঙ্কা তোদীর বিয়ের পরিণতির কথা মনে করিয়ে তাঁদের ‘গুজরাত বা কাশী-বাসী হওয়া’র পরামর্শ দিয়েছে পুলিশই! ঘটনাটি হুগলির জাঙ্গিপাড়া থানা এলাকার। অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

প্রাপ্তবয়স্কদের বিয়েতে খাপ পঞ্চায়েতের দাদাগিরি গত মার্চেই নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তা সত্ত্বেও গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে হচ্ছে সদ্য-বিবাহিত সাবরিনা খাতুন এবং কৌশিক দাসকে। বৃহস্পতিবার কয়েক জন শুভানুধ্যায়ীর মাধ্যমে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। জানান, সাবরিনার বাবা-দাদা বিয়ে মেনে না-নিয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন। তাই তাঁরা পুলিশে যান। কিন্তু পুলিশ কী করেছে?

মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সাবরিনার অভিযোগ, আঁটপুরের পঞ্চায়েত প্রধান প্রণব দাসের উপস্থিতিতেই ওসি অমলেন্দু বিশ্বাস দু’জনকে পরিচয় লুকিয়ে গুজরাত, গয়া বা কাশী চলে যেতে বলেন। যে অভিযোগ উড়িয়ে ওসি বলেছেন, ‘‘কোর্ট না-বললে বাড়ি বয়ে তো পাহারা দিতে পারি না। সেটাই বলেছি।’’ কিন্তু সাবরিনার দাবি, ‘‘পুলিশ শুধু নিজেদের সামনে টাকার টোপ আর নেতাদের চাপের কথা শোনাচ্ছে। বলেছে, নবান্নে যান! সামলাতে পারব না।’’

গত ২০ জানুয়ারি কৌশিক-সাবরিনা স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করেন। সাবরিনার দাবি, শ্বশুরবাড়িতে বারবার চড়াও হয়ে তাঁকে ফেরাতে টানাহেঁচড়া করেছে বাড়ির লোক। তাঁর বাবা শেখ জামালুদ্দিন বড়বাজারে মাছের জালের কারবারি। থাকেন হরিপালে। হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, ‘‘কপালের দোষ। বিয়ে নিয়ে কথাই শুনল না মেয়ে!’’

আরও পড়ুন: পার্ট-৩ কলায় প্রথম শ্রেণি তিন শতাংশ!

জনৈক তুতো দাদার হুমকির কথাও পুলিশকে বলেছেন সাবরিনা। তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত সেই যুবকের সূত্রে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বেচারাম মান্নাও বিষয়টি জানতে পারেন বলে তাঁর ধারণা। আঁটপুরের পঞ্চায়েত প্রধান প্রণববাবু বলছেন, ‘‘বিয়েটা নিয়ে অনেকেরই সমস্যা। বেচারামদা ফোন করে খোঁজ নিচ্ছিলেন।’’ বেচারামবাবুর দাবি, ‘‘ওরা এলাকার ভোটার। তাই সব শুনে খোঁজখবর করছিলাম।’’

উদ্বিগ্ন কৌশিক বললেন, ‘‘নিরাপত্তার অভাবে বর্ধমানে বেসরকারি ব্যাঙ্কের চাকরিটাও যায়-যায়। বদলি করতে রাজি নয় অফিস।’’ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে শশীদেবী বলেছেন, ‘‘প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতির ক্ষেত্রে এমন কখনওই হওয়ার কথা নয়।’’ ভিন্‌ধর্মী দম্পতিদের সুহৃদ একটি সংস্থার কর্ণধার আসিফ ইকবালও নিন্দা করেছেন পুলিশের ভূমিকার।

আর কৌশিক-সাবরিনা খুঁজে চলেছেন নিশ্চিন্তে বাঁচার ছাদটুকু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Interfaith Couple Hindu Muslim Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE