ছবি: সংগৃহীত।
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই ঝড়বৃষ্টিতে বিভিন্ন জেলায় মাঠে থাকা ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। করোনা-কালবেলায় এই শস্যহানিতে চাষিরা চিন্তিত। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঝড়বৃষ্টি চলতে পারে বলে মঙ্গলবার পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ফলে ফসলের আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
হাওয়া অফিস জানায়, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। তারই জেরে মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। আবহবিদেরা জানান, এখনও বায়ুমণ্ডলের নীচের ও উপরের স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার ফারাক রয়েছে। তার জেরেই জলীয় বাষ্প দ্রুত ঘনীভূত হয়ে একের পর এক বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, সোমবার রাতে কলকাতায় যে-ঝড় বয়ে গিয়েছে, তার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ আরও একটি ঝড় আসে। তার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিও হয়। তারই প্রভাব পড়েছে কৃষিতে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে হুগলির বোরো চাষের দফারফা হয়ে গিয়েছে। নিকাশি যথাযথ না-থাকায় জলে ডুবেছে বহু ধানজমি। খেতের ধানগাছ মাটিতে লেপ্টে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে তিল এবং বিভিন্ন আনাজ চাষেরও। জেলার কৃষি আধিকারিক অশোক তরফদার জানান, আরামবাগ মহকুমার নিচু জায়গা খানাকুল-১ ও ২ ব্লকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘরে সতর্ক থাকুন, শহরে ঘুরে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
আরও পড়ুন: ছেলে কাঁধে ৩০০ মাইল হেঁটে গ্রামে ফিরেও ‘ঘর’ পেলেন না দয়ারাম
ঝোড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে আম ঝরে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, লালবাগ, ডোমকল মহকুমার বহু বাগানে। হরিহরপাড়া, নওদায় কাঁদি-সহ কলাগাছ ভেঙে পড়ে। ঝোড়ো হাওয়ায় বিস্তীর্ণ খেতে নুয়ে পড়েছে বোরো ধানের গাছ।
জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা তাপস কুণ্ডু বলেন, দু’দিনে জেলার সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান, ৬৯৪ হেক্টর জমির তিল, প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে আনাজের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে নবান্নে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, এ বার মোট ২,০৩,৪২৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছিল। প্রাথমিক হিসেব, ঝড়বৃষ্টিতে ৭০ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হতে বসেছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে খড়্গপুর মহকুমায়। জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, ‘‘এখনও সব রিপোর্ট আসেনি।’’ হাসনাবাদের বিভিন্ন জায়গার কৃষকেরা জানান, ঝড়ের জেরে লঙ্কাগাছ হেলে গিয়েছে, ভেঙে গিয়েছে বরবটির মাচা। ঝড়বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুরে অবশ্য বোরো ধানের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শুধু কিছু জায়গায় ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) আশিস বেরা বলেন, ‘‘অধিকাংশ ধান পেকে গিয়েছে। তাই এই বৃষ্টিতে নতুন করে রোগপোকার হামলার আশঙ্কা নেই।’’
এই বৃষ্টি হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের চাষিদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কারণ, বোরো চাষে দফায় দফায় জল লাগে। মুণ্ডেশ্বরী নদীর সংস্কারকাজ চলায় ওই চাষিরা জল পাচ্ছিলেন না। বোরো, তিল ও বাদাম চাষের ক্ষতি হচ্ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় আপাতত জল মিলেছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy