প্রতীকী ছবি।
এ বার পশ্চিমবঙ্গও জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটানো নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রস্তাব মেনে নিল।
রাজ্যের জিএসটি ক্ষতিপূরণের টাকা মেটাতে কেন্দ্র নিজেই ঋণ নিয়ে রাজ্যগুলিকে ঋণ দিতে রাজি বলে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন। গোটা বিশেক রাজ্য এই প্রস্তাবে সায় দিলেও এত দিন নবান্ন তাতে সম্মতি জানায়নি। শুক্রবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, কোভিড অতিমারি ও আমপান ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় রাজ্যের কোষাগারের করুণ দশা বিবেচনা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি।
একই সঙ্গে অমিতবাবুর দাবি, অতিমারির ফলে জিএসটি থেকে রাজ্যগুলির চলতি বছরে যে পরিমাণ আয় কম হবে, তার পুরোটাই কেন্দ্র নিজে ঋণ নিয়ে রাজ্যকে ঋণ দিক। তা হলে রাজ্যগুলির মাথায় বাড়তি সুদের বোঝা চাপবে না। লকডাউনের জেরে জিএসটি থেকে আয় কমে যাওয়ায় চলতি অর্থ বছরে রাজ্যগুলির প্রায় ১.৮২ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দরকার পড়ত। এর মধ্যে কেন্দ্র ১.১০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রাজ্যকে তৎক্ষণাৎ ঋণ দিয়ে দেবে। কিন্তু বাকি ৭২ হাজার কোটি টাকার সংস্থান করতে রাজ্যগুলিকেই বাজার থেকে ধার করতে হবে। তার জন্য রাজ্যকে জিডিপি-র ০.৫ শতাংশ পরিমাণ অতিরিক্ত ধার করার ছাড়পত্রও দিয়েছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: আজ কালীপুজো, দীপাবলি, বাজি বন্ধে জেতার লড়াই
অমিতবাবু সীতারামনকে জানিয়েছেন, ‘‘আপনি রাজ্যের আয়ে ঘাটতির তিন ভাগের দু’ভাগ ঋণ করতে রাজি হয়েছেন। বাকি এক ভাগ দরকার পড়লে রাজ্যকে ধার করতে বলছেন। কিন্তু নিজে ঋণ নিয়ে রাজ্যকে ঋণ দিলে কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতি বাড়ছে না। ২০২২-এর পরেও জিএসটি বসিয়ে ঋণ শোধ হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্র ৫%-এর কম সুদে ঋণ পায়। কিন্তু রাজ্যের ক্ষেত্রেই সেটা ৬.৮% সুদ দিতে হয়। এর ফলে রাজ্যের ঘাড়ে সুদে-আসলে অনেক বেশি ঋণের বোঝা চাপে।’’ এই যুক্তিতে বাকি ৭২ হাজার কোটি টাকাও কেন্দ্রকে ঋণ নিয়ে রাজ্যকে ঋণ দিতে আর্জি জানিয়েছেন অমিত মিত্র। এ বিষয়ে জিএসটি পরিষদের বৈঠক ডাকারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। কেরল, ছত্তীসগঢ়ের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যও কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে পশ্চিমবঙ্গের সুরেই পাল্টা দাবি তুলেছে।
পশ্চিমবঙ্গর মতো অন্যতম জিএসটি বিরোধী শাসিত রাজ্য কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় অর্থ মন্ত্রকও খুশি। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, সহমত হওয়া রাজ্যগুলির জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্র ধাপে ধাপে ঋণ নিতে শুরু করেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে খুবই কম সুদে ঋণ মিলছে। তবে নবান্নর দাবি নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
প্রথমে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামনের অবস্থান ছিল, লকডাউনের জন্য রাজ্যগুলির জিএসটি থেকে আয় কম হলেও কেন্দ্রের পক্ষে ক্ষতিপূরণ মেটানো অসম্ভব। কারণ লকডাউনের জন্য জিএসটি সেস থেকেও যথেষ্ট আয় হয়নি। রাজ্যগুলি ধার করে নিক। উল্টো দিকে পশ্চিমবঙ্গ-কেরলের দাবি ছিল, কেন্দ্র ধার করে ক্ষতিপূরণ মেটাক। জিএসটি পরিষদে এর ফয়সালা না হওয়ায় বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। এর পরেই সীতারামন অবস্থান বদলে জানান, কেন্দ্র ধার করে রাজ্যকে ধার দেবে। তার পরেও পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, রাজস্থানের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি নিমরাজি ছিল। পশ্চিমবঙ্গকে রাজি করাতে সীতারামন নিজেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২০ অক্টোবর চিঠি পাঠান। শুক্রবার সেই চিঠির প্রেক্ষিতে অমিতবাবু সীতারামনকে লিখেছেন, ‘‘এক দিক থেকে আপনি আমাদের মতামতই মেনে নিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy