Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ন’বছর পরে লোকায়ুক্ত পেল রাজ্য

রাজ্যের লোকায়ুক্ত হিসেবে নিযুক্ত হলেন প্রাক্তন বিচারপতি অসীম রায়। গত ন’বছর এই পদ শূন্য ছিল। তবে লোকায়ুক্তের বিচারের অধিকারের আওতায় থাকছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৬
Share: Save:

রাজ্যের লোকায়ুক্ত হিসেবে নিযুক্ত হলেন প্রাক্তন বিচারপতি অসীম রায়। গত ন’বছর এই পদ শূন্য ছিল। তবে লোকায়ুক্তের বিচারের অধিকারের আওতায় থাকছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। উচ্চপদে আসীন সরকারি কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে হলেও বর্তমান লোকায়ুক্তকে সরকারের আগাম অনুমোদন নিতে হবে। ২০০৩ সালে পাশ হওয়া প্রথম আইনে এই অধিকার তৎকালীন লোকাযুক্তের ছিল। ২০১৮ সালে নতুন সংশোধিত আইনে তা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।

রাজ্যের প্রথম লোকায়ুক্ত প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার সতীর্থ দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাঁকে অভিনন্দন জানাই। সীমিত পরিধির মধ্যেই তিনি কাজ করতে সমর্থ হবেন বলে বিশ্বাস করি।’’ অসীমবাবু স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর জায়গায় এর পর সেই দায়িত্ব সামলাবেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা স্যাট-এর চেয়ারম্যান সৌমিত্র পাল।

এ রাজ্যের প্রথম লোকায়ুক্ত আইন পাশ হয়েছিল ২০০৩ সালে। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার ২০০৬-এ প্রথম লোকায়ুক্ত হিসেবে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিযুক্ত করেছিলেন। যদিও তাঁকে প্রথম দেড় বছর কোনও অফিস দেওয়া হয়নি। তিনি ২০০৭ সালের শেষ দিকে অফিস পেয়ে কাজ শুরু করেন। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘‘দায়িত্ব পাওয়ার পরও দেড় বছর কাজ করতে পারিনি। তার পরে জেলায় জেলায় ঘুরে মানুষকে বোঝাতে হয়েছিল লোকায়ুক্ত কেন উপযোগী।’’

সূত্রের খবর, ২০০৭-এ ২০টির মতো অভিযোগপত্র জমা পড়েছিল। ২০০৮-এ তা বেড়ে হয় ৮০-৯০টি। ২০০৯-এ সব মিলিয়ে ২০০-র বেশি অভিযোগ এসেছিল। তবে বেশির ভাগেরই আর নিষ্পত্তি হয়নি। কারণ, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়াদ শেষের পর আর কোনও লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেনি সরকার।

কী ধরনের অভিযোগ সে সময় লোকায়ুক্তের কাছে জমা প়ড়েছিল?

সমরেশবাবু জানান, লোকায়ুক্তের বিচারের এক্তিয়ারে যেমন দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে, তেমনই সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিয়েও অভাব-অভিযোগ জানানো যায়। ফলে ওই তিন বছরে বিধায়ক-মন্ত্রী-পঞ্চায়েত কর্তাদের নামে অসংখ্য অভিযোগ এসেছিল। একই ভাবে কোথাও পঞ্চায়েতের ভাতা না পাওয়া, ইন্দিরা আবাসের ঘর দিয়ে টাকা নেওয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে নকল উপভোক্তাদের নামে টাকা তোলার অভিযোগ এসেছিল। সে সব তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সমরেশবাবু।

তাঁর সময়ে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কোনও রায় দেওয়া হয়েছিল কি? সমরেশবাবু জানান, তৎকালীন শাসক দলের এক বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল। পুলিশকে দিয়েই তদন্ত করানো হয়েছিল। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সেই বিধায়কের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এখন সেই বিধায়ক আবার বর্তমান শাসক দলের বড়সড় নেতা।’’

কেন বর্তমান সরকার ন’বছর কোনও লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেনি? নবান্নের এক কর্তা জানান, ২০০৯-এর পরই লোকায়ুক্তের অধীনে প্রধানমন্ত্রীকে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। অন্না হজারের আন্দোলনের জেরে বদলায় সেই আইন। ফলে নতুন আইনের চেহারা না দেখে রাজ্যের লোকায়ুক্ত নিয়োগ করা হয়নি। জাতীয় স্তরে আইন পাশের পার এ রাজ্যেও তা করা

হল। সরকার সদ্য নিযুক্ত লোকায়ুক্তকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন বলে জানান ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lokayukta West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE