Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

করোনা-লকডাউনের সাঁড়াশি চাপে রাজ্য জুড়ে রক্তের হাহাকার

অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র থাকার পরও বিভিন্ন জেলায় পুলিশ রক্তদান শিবির করতে অনুমতি দিচ্ছে না।

নেতাজি ইন্ডোরে রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নেতাজি ইন্ডোরে রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৩৬
Share: Save:

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্রাম্যমান রক্তদান ভ্যান ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। দিনের শেষে ফিরছে ১৫ থেকে ২০ ইউনিট রক্ত নিয়ে! ছবিটা রাজ্যের সবচেয়ে বড় রক্তের ব্যাঙ্ক সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের। এক দিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক, অন্য দিকে, লকডাউন। এই সাঁড়াশি চাপে রাজ্য জুড়ে হাহাকার রক্তের। আর তার মধ্যে যাঁদের জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দরকার তাঁদের চাহিদা মেটাতেই নাভিশ্বাস উঠছে।

স্বাস্থ্য দফতর গত ২২ মার্চ একটি নির্দেশিকা জারি করে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৩০ জন পর্যন্ত রক্তদাতাকে নিয়ে শিবির আয়োজনের অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য ভবন। অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্সের এক কর্তা বলেন, ‘‘১০টি গাইড লাইন দেওয়া হয়। এক বারে ৪-৫ জনের বেশি রক্তদাতা থাকবেন না। রক্ত দেওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে রক্তদাতাদের থাকবে না কোনও ভ্রমণের ইতিহাস। রক্তদানের আগে থার্মাল স্ক্রিন করতে হবে রক্তদাতার।”

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষের অভিযোগ স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র থাকার পরও বিভিন্ন জেলায় পুলিশ রক্তদান শিবির করতে অনুমতি দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছরই মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে জুলাই পর্যন্ত রক্তের জোগানের ঘাটতি থাকে। সেই ঘাটতি মেটাতে প্রচুর পরিমাণে রক্তদান শিবির করা হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এ বছর করোনা আতঙ্কে সেই রক্ত সংগ্রহ কার্যত বন্ধ। বাতিল করা হয়েছে অধিকাংশ রক্তদান শিবির। আমরাই বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি অন্তত ৫৬টি শিবির। স্বাস্থ্য দফতর যদিও ছাড়পত্র দিল, পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন; বেলঘরিয়ার করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, অত্যন্ত সঙ্কটে নয়াবাদের বাসিন্দা

অপূর্ববাবু জানান, রাজ্যে প্রতি দিন গড়ে প্রয়োজন হয় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিট রক্ত। বছরে প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট। সেই চাহিদার একটা বড় অংশের জোগান আসে রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের সহকারী অধিকর্তা শেখর ভৌমিক বলেন, ‘‘চাহিদা এবং জোগানের তারতম্য থাকায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া, লিউকোমিয়া বা ডায়ালিসিস রোগীদের, যাঁদের জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দিতে হবে।” সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের ফলে রক্তের জোগান কমেছে। সেই সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে চাহিদাও কমেছে।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘রক্তের চাহিদা কমার পিছনে তিনটি কারণ আছে। লকডাউনের ফলে জেলা থেকে এই হাসপাতালে রেফার হয়ে আসা রোগীর সংখ্যা খুব কমে গিয়েছে। কমে গিয়েছে পথ দুর্ঘটনাও। ফলে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য যে রক্ত প্রয়োজন, তার চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু অস্ত্রোপচার স্থগিত রাখা হয়েছে। চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে যাঁদের জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দরকার তাঁদের ৭৫ শতাংশকে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া হচ্ছে। বাকিটার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের উপর।”

আরও পড়ুন; অন্তত ১৩ কোটি চাকরি যাবে দেশে, অধিকাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে​

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের মতোই একই ছবি কলকাতার বাকি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা ব্লাড ব্যাঙ্কে ডোনারদের ডাকছি। সেখান থেকে দিনে ২০ ইউনিটের মতো রক্ত জোগাড় হচ্ছে।’’

এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের নির্দেশে এগিয়ে এসেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশ এবং সমস্ত জেলা পুলিশ বুধবার থেকে গোটা মাস প্রতি দিন রক্তদান করবে। কলাকতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এক মাসব্যাপী এই রক্তদান শিবির চলবে। প্রতি দিন ৬০-৭০ জন পুলিশকর্মী রক্তদান করবেন। রাজ্য পুলিশের কর্মীরাও এ ভাবেই গোটা মাস ধরে রক্তদান করবেন।

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংগঠনের কর্তাদের দাবি, প্রশাসন সামাজিক দূরত্ব মেনে যদি প্রতিটি এলাকায় রক্তদান শিবির আয়োজন করতে অনুমতি দেয় তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যে চাহিদা তা পূরণ করা সম্ভব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE