Advertisement
E-Paper

বুকের কাছে বাজল যে বীণ

তিনি চলে গেছেন নিঃশব্দে। মৃত্যুর অনেক আগেই চলে গিয়েছিল কণ্ঠ। কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়ের মতো কৃতীরা। এই কঠিন ব্যক্তিত্ব ছাড় দেয়নি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও। গুরুকে নিয়ে এমনই বহু অকথিত কাহিনি শোনালেন তাঁর ছাত্রী নূপুরছন্দা ঘোষ। তিনি চলে গেছেন নিঃশব্দে। মৃত্যুর অনেক আগেই চলে গিয়েছিল কণ্ঠ। কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়ের মতো কৃতীরা। এই কঠিন ব্যক্তিত্ব ছাড় দেয়নি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও। গুরুকে নিয়ে এমনই বহু অকথিত কাহিনি শোনালেন তাঁর ছাত্রী নূপুরছন্দা ঘোষ।

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০৭:৪০
কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।

কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।

এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যা। টালিগঞ্জের শুটিং- ফেরত উত্তমকুমার চলে এলেন প্রণব রায়ের বাড়ি। ‘আমি বনফুল গো’ রচনা করে প্রণব রায় তত দিনে বেশ নাম করেছেন। উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা ছিল বন্ধুত্বের, শ্রদ্ধার, আড্ডার। রোজই এক পেয়ালা চা নিয়ে গল্প করতে বসতেন মহানায়ক। সে দিনও তার অন্যথা হয়নি। চায়ে চুমুক দিয়েছেন, অমনি ভেসে এল এক সুরের যন্ত্রণা। ‘পাগলা, মনটারে তুই বাঁধ’ গানটা শুনে থমকে গেলেন তিনি। এমনই সুরের মায়া যে, সেই বেদনাঘন গান একটানা সারা রাত ধরে উত্তম কুমার বার বার কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের রেকর্ড থেকে শুনে যাচ্ছিলেন। এমনই সেই আচ্ছন্নতা যে, কেউ তাঁকে এক বারের জন্যেও ডাকতে সাহস করেনি। অন্ধকার বর্ষারাতে রেকর্ডটি কেবল বেজেই চলেছিল ... ‘কতই পেলি ভালবাসা/ তবু না তোর মেটে আশা/এবার তুই একলা ঘরে/নয়ন ভরে কাঁদ/পাগলা মনটা রে তুই বাঁধ।’ যেন গানই তাঁকে জীবনখাতার পাতা খুলে রাতভর প্রশ্ন করে চলেছে।

সলিল চৌধুরী আর রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।

কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আমার বাবার কাকা বিমান ঘোষের সূত্রে—যাঁকে মজা করে আমরা ‘বৃষ্টিদাদু’ বলতাম। কর্মসূত্রে এইচএমভিতে থাকার জন্য প্রচুর গুণী মানুষের সান্নিধ্যে এসেছিলেন তিনি। আমরা তার কিছু কিছু আঁচ পেয়েছি। বৃষ্টিদাদুই আমাকে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গান শেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। মনে আছে, অত অল্প বয়সেই তাঁকে দেখে চোখ সরাতে পারছিলাম না। যেমন ছিপছিপে চেহারা, তেমনই সুন্দর সাজ। দিদি সব সময়ই কানে বড় হিরের দুল আর হাতে হিরের আংটি পরে থাকতেন। গানের অনুষ্ঠান মানেই চওড়া পাড়ের গাদোয়াল বা দামি সিল্ক। বাড়িতে থাকলে ‘ভোজরাজ’-এর বাহারি প্রিন্টের শাড়ি। এর অন্যথা খুব একটা দেখিনি। হুট করে চলে গিয়েও দেখেছি, বাড়িতে লম্বা কাফতান পরে আছেন। আমাকে দেখেই পোশাক পাল্টে শাড়ি পরে সুন্দর সেজে চলে এলেন। দিদির গানের মতোই সাজ একটা বিশেষ ব্যাপার ছিল। খুব ট্র্যাডিশনাল শাড়ি পছন্দ করতেন। করবেন না-ই বা কেন! দিদির বিয়ে হয়েছিল রয় অ্যান্ড রয় কোম্পানির বাড়িতে। মিহির রায় ছিলেন স্বামী। বরাবরই দেখেছি দিদিকে রুপোর গ্লাসে জল খেতে। সব কিছুর মধ্যেই ছিল একটা আভিজাত্যের ছোঁয়া।

দিদি গান শিখেছেন তাঁর বাবা হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। হরেন্দ্রনাথ স্বয়ং অতুলপ্রসাদ সেনের কাছে তালিম নিয়েছিলেন। গল্পের ছলে দিদি একবার বলেছিলেন, কলকাতায় এক সঙ্গীতের আসরে হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কৃষ্ণনগর থেকে এসেছেন গান গাইতে। সেই আসরে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, দীনু ঠাকুর প্রমুখ। হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গান শুনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘বাঃ তুমি তো ভারী সুন্দর গান গাও!’ কিন্তু শুধু অতুলের গান গাইলে কেন? আমার গান গাইলে না কেন?’ অতুলপ্রসাদ লজ্জায় বিব্রত। হরেন্দ্রনাথ কিন্তু একটুও অপ্রস্তুত না হয়ে ঝটপট উত্তর দিলেন, ‘আপনার গান তো আমায় কেউ শেখায়নি, তাই আমি জানি না।’ কবিগুরু তখন উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘শিখবে তুমি আমার গান? দীনু, আজ থেকে তুমি ওর দায়িত্ব নাও গান শেখাবার।’ যেমন কথা তেমন কাজ। দীনু ঠাকুরের কাছে গান শিখে রবীন্দ্রনাথের গানের রেকর্ডও করেছিলেন হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তবে হরেন্দ্রনাথ ছাড়াও দক্ষিণী-তে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন দিদি। যদিও দিদির শিক্ষায় অতুলপ্রসাদ সেনের গায়কির ছাপ সুস্পষ্ট। আর সেই কারণেই ঘরানার ছাপটা দিদির গলায়ও এসেছিল। এ প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প আছে।

পাহাড়ী সান্যালকে ঘিরে বসেছে এক ঘরোয়া আসর। সেখানে নানা গুণিজনের মধ্যে আছেন কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। পাহাড়ী সান্যালও অতুলপ্রসাদের ছাত্র। খুব ভালবাসতেন অতুলপ্রসাদের গান গাইতে। শুধু যে গানই গাইতেন এমনটা নয়। গানের পিছনের ইতিহাসগুলোও তিনি আড্ডার ছলে সমানে বলে যেতেন। এ রকমই এক আসরে পাহাড়ী সান্যাল গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলেন ‘ভবানী দয়ানী।’ ভৈরবী রাগে এই গানের চলনে তিনি ঘোরাফেরা করছেন। এমন সময় সেই আসরে উপস্থিত কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। ওই গানের আদলেই অতুলপ্রসাদ-সৃষ্ট গান ‘সে ডাকে আমারে বিনা সে সখারে’ গেয়ে উঠলেন। পাহাড়ী সান্যাল তো মুগ্ধ। তাঁর কণ্ঠে গানটি শুনে থেকে থেকেই ‘আহা আহা’ করতে লাগলেন।

পিতা হরেন্দ্রনাথের উৎসাহেই ১৯৫৭ সালে গ্রামোফোন ডিস্কে প্রকাশিত হয় কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম রেকর্ড। যার এক পিঠে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সে কেন দেখা দিল রে’, অন্য পিঠে ‘মলয় আসিয়া কয়ে গেছে কানে’। দ্বিজেন্দ্রগীতির শিক্ষা কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় পেয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলালের পুত্র তথা তাঁর পিতৃবন্ধু দিলীপকুমার রায়ের কাছে। দ্বিজেন্দ্রলালের গানে পরিশীলিত মাত্রা ও গাম্ভীর্য বিশ শতকের যে দু’জন শিল্পীর গায়নে ধরা পড়েছিল, তাঁরা ছিলেন মঞ্জু গুপ্ত ও কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে দ্বিজেন্দ্রলালের খেয়ালাঙ্গ ও কীর্তনাঙ্গ দু’ধরনের গানই নবতর সৌন্দর্যে সঞ্জীবিত হয়েছিল। দিদি সব সময় বলতেন, স্বরলিপির চেয়ে তিনি গুরুমুখী বিদ্যার উপরে বেশি নির্ভর করতেন। গান নিয়ে বিশেষ বাড়াবাড়ি করা বা গানের প্রচার এ সবের তীব্র বিরোধী ছিলেন দিদি। সলিল চৌধুরীর অনুরোধে একটি আধুনিক গানের রেকর্ড করলেও অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত বা দ্বিজেন্দ্রলালের বাইরে অন্য গান গাইতে একেবারেই চাইতেন না তিনি। এই প্রসঙ্গেও একটা ঘটনা বলি। যা আমি দিদির কাছ থেকে শুনেছি।

কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের নীরব ভক্ত ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ও রকম মিহি সূক্ষ্ম কাজের গলা হেমন্তবাবু ওঁর ছবিতে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। শুনে, দিদি যদিও সোজাসুজি হেমন্তবাবুকে বললেন, ‘আপনি যদি ছবিতে অতুলপ্রসাদের গান ব্যবহার করেন, তবেই আমি গাইব, নয়তো নয়।’ নিজেকে প্রকাশ করার কোনও ইচ্ছাই দিদির মধ্যে দেখিনি। সব রকম গান শুনতে ভালবাসতেন। কিন্তু নিজের শিক্ষার বাইরে গিয়ে হঠাৎ করে নতুন গান তুলে দিলেন, এমনটা কখনও করেননি। আমাদের গান শেখানোর সময় বলতেন, সব ধারার গান গাইলে নিজস্ব গায়কির মৌলিকত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। সে সময় বাড়িতে বাড়িতে অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলালের গানের রেকর্ড মানেই সুন্দর একটি মুখ। বাঁ দিকে ঠোটের উপর কালো একটি আঁচিল। নামটা না দেখেই মানুষ বলতে পারত, এটা কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের গান। ধমকে বকে রেগে আমাদের গান শেখাতেন। মনে আছে, একবার ‘পাগলা মনটারে তুই’ শিখতে চাওয়ার আবদার করেছিলাম। ধমক দিয়ে বললেন, ‘আগে জীবনে ঝড় ঝাপটা আসুক, দগ্ধ হও। তবেই ওই গান গাইতে পারবে।’ একটা গান অন্তত একশোবার গাওয়াতেন। আর থেকে থেকেই বলতেন, ‘নড়বড়ে অবস্থায় বাইরে গাইতে যাবে না। আগে নিজেকে তৈরি করো।’

নিজগুণে বহু গুণী মানুষের সান্নিধ্যে এসেছিলেন দিদি। আমাদের গানের ক্লাসের পর মার্লিন পার্কের বাড়ির বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে টুকটাক গল্প করতেন। তখনই শুনেছি সেই সব সোনা ঝরা দিনের কাহিনি।

বিমান ঘোষ তখন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের পদ ছেড়ে এইচএমভি-তে যোগ দিয়েছেন। অভিন্নহৃদয় বন্ধু রবিশঙ্করজি তখন মাঝে মাঝেই কলকাতায় আসছেন। আর কলকাতায় এলেই বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে ‘প্রেসিডেন্সি কোর্ট’-এ বিমান ঘোষের বাড়িতে তিনি আসবেনই। তেমনই এক শীতের সকাল। কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ও এসেছেন মার্লিন পার্কের বাড়ি থেকে বিমান ঘোষের জন্যে রান্না করে নিয়ে। বিমান ঘোষ খুবই স্নেহ করতেন কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়কে। ওঁর উদ্যোগেই এইচএমভি থেকে অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত-দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানের রেকর্ডিং করছেন দিদি। গান নিয়ে তিনজনের আড্ডা শুরু হতেই কোন এক খেয়ালে হাতের কাছে রাখা সেতারটি তুলে ভৈরবী সুর ভাঁজতে থাকলেন পণ্ডিতজি। অমন সেতারের ডাকে কি আর নিজেকে বন্দি রাখা যায়! দিদিও চোখ বুজে হাঁটলেন সকালবেলার ভৈরবীতে— ‘কী আর চাইব বলো।’ সুরের মোড় ঘোরালেন পণ্ডিতজি, পিলুর আমেজ আনতেই দিদি ধরলেন, ‘শ্রাবণ ঝুলাতে বাদল রাতে।’ সেতার খাম্বাজে প্রশ্ন করলে কণ্ঠে উত্তর এসেছে ‘কে যেন আমারে বারে বারে চায়।’ সুরলোকের এই রূপকথায় সে দিনের সকাল রাগ-রাগিণীর মজলিসে ভেঙেচুরে গিয়েছিল।

আমার গানপাগল দিদি শুধুই যে গান গেয়েছেন, তা-ই নয়। বড় পরিবারের দায়িত্বও সামলেছেন অনায়াসে। দুই ছেলে মানিক আর তানিককে বড় করা, অসুস্থ শাশুড়ির সেবা—কোথাও কোনও খামতি ছিল না। একবার অনুষ্ঠান করতে যাবেন তবলিয়া প্রভাতবাবু, এসরাজ বাদক শঙ্করনাথ সাহা, মন্দিরাবাদক পঞ্চাননবাবু এসে গেছেন। বেরোতে যাবেন, ঠিক তখনই ছোট ছেলে তানিক পড়ে গিয়ে মাথা ফাটাল। ও রকম সাজগোজ করা অবস্থাতেই উনি গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ছেলেকে স্টিচ করিয়ে বাড়িতে রেখে সোজা গেলেন অনুষ্ঠানে। সব সময়ই কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। জীবনের কাছে কোনও অভিযোগও করেননি কখনও। যেটুকু অভিমান ক্ষোভ একাকিত্ব— সবটাই গানের মধ্যে বলেছেন।

শান্তিনিকেতনে যেতে খুব ভালবাসতেন দিদি। তার সবচেয়ে বড় কারণ কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন মোহরদি’র কাছে। আবার অন্য দিকে মোহরদি অতুলপ্রসাদের গান শিখেছেন হরেন্দ্রনাথের কাছে। একবার মাঘী পূর্ণিমায় দিদি শান্তিনিকেতনে। চাঁদভাঙা আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। দু’জনে গল্প করতে করতে মোহরদি গেয়ে উঠলেন, ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে। উছলে পড়ে আলো’। চরাচর চাঁদে ভাসা।

মোহরদির গানের রেশ নিয়ে দিদি ধরলেন, ‘চাঁদনি রাতে কে গো আসিলে।’ নিশীথ রাতের হাওয়ায় তখন আর কথা নেই। কেবলই সুরে চলা। মোহরদি আবার ‘ওগো নদী আপন বেগে পাগলপারা’ আর দিদি ‘কে গো তুমি নদীকূলে বসি একেলা।’ বারবার যেন ভিতর তোলপাড় করে দেওয়া একাকিত্বের গান! গানের জোয়ারে ভাসছে দুই পূর্ণিমা-কণ্ঠ। মোহরদি ‘হৃদয়ের একূল ওকূল’, দিদি দ্বিজেন্দ্রলালের কথায় উত্তর দিচ্ছেন ‘হৃদয় আমার গোপন করে।’ এই সুরের কথোপকথনে নাকি রাত ছেড়ে চলে গিয়েছিল ওঁদের। কিন্তু দুই হৃদয়ের প্রাণের বন্ধ কথা গান দিয়ে খুলে দিয়েছিলেন ওঁরা।

আসলে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের নামের মধ্যেই ম্যাজিক ছিল। আগে বাংলা অ্যাকাডেমিতে এখনকার মতো গানের অনুষ্ঠান হত না। আমরা ছাত্রছাত্রীরা মিলে দিদিকে সংবর্ধনা জানাব, অনেক সাহস নিয়ে সে কথা বললাম অ্যাকাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্নদাশঙ্কর রায়কে। কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের নাম শুনেই উনি রাজি হয়ে গেলেন।

আজও মনে পড়ে মার্লিন পার্কের সেই প্রাসাদের মতো বাড়ির কথা। সামনে পিছনে বিরাট বাগান। বারান্দায় বড় বড় আলো। সেই আলোর তলায় জড়োয়ার দুল, ঢাকাই শাড়ি, কপালে টিপ। আরাম কেদারায় রাজরানির মতো বসে আছেন তিনি। গাইছেন ‘বধূয়া নিদ্ নাহি আঁখি পাতে।’ মেঘ ঢেকে দিচ্ছে সেই চাতকিনীকে...

ভিড়ের কলকাতায় আজও সেই দৃশ্য আমায় পথ ভোলায়, সারা রাত কাঁদিয়ে ফেরে। আজ মনে হয়, উনি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্মৃতির নীচে চাপা পড়ে গেল গান।

‘আমিও একাকী তুমিও একাকী আজি এ বাদল রাতে...’

অনুলিখন: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

Krishna Chattopadhyay Singer Rabindra Sangeet কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy