—প্রতীকী ছবি।
ল্যাপটপ কেনা একটি কঠিন কাজ। বিশেষ করে যখন বাজারে অসংখ্য বিকল্প পাওয়া যায়। এই লেখাটি আপনাকে ল্যাপটপ কেনার সময় কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সেই সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারণা দেবে, যা আপনাকে আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
১. অপারেটিং সিস্টেম:
অপারেটিং সিস্টেম হল ল্যাপটপের ভিত্তি। অপারেটিং সিস্টেমের চারটি প্রধান বিকল্প রয়েছে:
উইন্ডোজ়: ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এতে প্রচুর সফ্টঅয়্যার ও হার্ডঅয়্যার সাপোর্ট থাকে। এটি তাঁদের জন্য আদর্শ যাঁরা মাইক্রোসফ্ট অফিস এবং অন্যান্য উইন্ডোজ়-নির্ভর অ্যাপ্লিকেশনের উপর নির্ভর করেন।
ম্যাক: এর সহজ ইউজ়ার ইন্টারফেস এবং অ্যাপলের অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে তৈরি ইকোসিস্টেম একে ‘বিশেষ’ করেছে। যাঁরা ডিজ়াইন, সৌন্দর্য, ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেন, তাঁদের জন্য ম্যাক ওএস উপযুক্ত।
ক্রোম: এটি একটি হালকা ও ক্লাউডভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। মূলত ওয়েবভিত্তিক কাজের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। এটি বাজেট সচেতন ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ। যাঁরা ওয়েবভিত্তিক কাজের জন্য ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তারা এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের কথা ভাবতে পারেন।
লিনাক্স: এটি একটি বহুমুখী এবং কাস্টোমাইজ়যোগ্য ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম, যার বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন রয়েছে। প্রযুক্তি সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি উপযুক্ত। যাঁরা সিস্টেমের উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ এবং নমনীয়তা চান, তাঁরা এটি ব্যবহার করতে পারেন।
২. প্রসেসর:
প্রসেসর হল ল্যাপটপের মস্তিষ্ক, যা বেশির ভাগ কম্পিউটেশনাল কাজ পরিচালনা করে। প্রধানত দু’টি প্রসেসর প্রস্তুতকারক কোম্পানি আছে, ইন্টেল এবং এএমডি।
ইন্টেল: বাজারে এদের অনেক ধরনের প্রসেসর আছে, যেমন কোর আই৩, কোর আই৫, কোর আই৫ এবং কোর আই৯ সিরিজ়। সংখ্যা যত বেশি, প্রসেসর তত শক্তিশালী। কিন্তু এর বিভিন্ন প্রজন্ম রয়েছে। যত নতুন প্রজন্মের নেওয়া সম্ভব ততই ভাল। এ ছাড়া প্রসেসরের পি, এইচ, কে ইত্যাদি বিকল্পের আলাদা আলাদা কাজ আছে। সেটা জেনে নিতে পারলে আরও ভাল হয়।
এএমডি: এটাকে বলা যেতে পারে একটা বাজেট অপশন। যেমন রাইজ়েন ৩, রাইজ়েন ৫, রাইজ়েন ৭ এবং রাইজ়েন ৯ সিরিজ়, যা সাধারণত দামে কম হলেও ভাল কাজ করে।
আপনার ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্রসেসর নির্বাচন করুন। সাধারণ কাজের জন্য, যেমন ওয়েব ব্রাউজ়িং, ডকুমেন্ট সম্পাদনা এবং সাধারণ গেমিং, একটি মধ্যম-পর্যায়ের প্রসেসর, যেমন কোর আই ৩ বা রাইজ়েন ৫ যথেষ্ট। ভিডিয়ো এডিটিং, সফ্টঅয়্যার ডেভেলপমেন্ট অথবা হাই-এন্ড গেমিংয়ের মতো চাহিদাপূর্ণ কাজের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর যেমন কোর আই ৯ বা রাইজ়েন ৭ প্রয়োজন হবে।
৩. গ্রাফিক্স কার্ড (জিপিইউ):
গ্রাফিক্স কার্ড বা জিপিইউ ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভিজ়ুয়াল রেন্ডারিংয়ের কাজ করে। বেশির ভাগ ল্যাপটপে ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ থাকে। কিন্তু ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড গেমিং, ভিডিয়ো সম্পাদনা এবং ত্রিমাত্রিক রেন্ডারিংয়ের মতো কাজের জন্য উল্লেখযোগ্য ভাবে ভাল কাজ করে।
ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স: সাধারণ কাজের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু যে সব অ্যাপ্লিকেশন বেশি গ্রাফিক্স দাবি করে সেগুলির সমস্যা হতে পারে।
ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স: গ্রাফিক্স-নির্ভর কাজের জন্য চমৎকার পারফরম্যান্স দেয় বিভিন্ন ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড। জনপ্রিয় অপশন হিসাবে এনভিডিয়া জিইফোর্স এবং এএমডি র্যাডিয়োন কার্ড বিবেচনা করতে পারেন।
৪. র্যাম:
র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি (র্যাম) মাল্টিটাস্কিং এবং র্যামখেকো অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাপটপে যত বেশি র্যাম থাকবে, এটি তত মসৃণ ভাবে চলবে। সাধারণ ব্যবহারের জন্য আট গিগাবাইট র্যাম দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে। তবে ভারী মাল্টিটাস্কিং কাজের জন্য ১৬ গিগাবাইট বা ৩২ গিগাবাইট র্যাম ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৫. স্টোরেজ:
স্টোরেজ ড্রাইভ আপনার ফাইল, অ্যাপ্লিকেশন এবং অপারেটিং সিস্টেম সংরক্ষণ করে। সাধারণ অপশনগুলোর মধ্যে রয়েছে:
এইচডিডি (হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ): বড় স্টোরেজের কাজ করে এবং সাশ্রয়ী। কিন্তু এসএসডির তুলনায় ধীর ও কিছুটা পুরনো।
এসএসডি (সলিড-স্টেট ড্রাইভ): দ্রুত পারফরম্যান্স, ভাল ব্যাটারি লাইফ এবং কোনও মুভিং পার্ট নেই। তাই প্রচলিত এইচডিডির মতো ক্র্যাশ করার ভয় তুলনামূলক কম। তবে, প্রতি গিগাবাইটে এটির দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি।
স্টোরেজের প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে বিকল্প নির্বাচন করুন। অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রায়ই ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য একটি এসএসডি এবং অধিক স্টোরেজের জন্য একটি এইচডিডির সমন্বয় বেছে নিলে ভারসাম্য বজায় থাকতে পারে।
৬. ডিসপ্লে:
ডিসপ্লে ল্যাপটপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আপনার দেখার সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে। মূল বিবেচ্য বিষয়গুলো হল:
মাপ: আপনার প্রয়োজন এবং ব্যবহারের অভ্যাস অনুযায়ী মাপ নির্বাচন করুন। বড় স্ক্রিন প্রোডাক্টিভিটি এবং মিডিয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য ভাল, সেখানে ছোট স্ক্রিন ছোটাছুটির কাজের জন্য বেশি চলনসই। মনে রাখবেন, ডিসপ্লের আকারের উপর ব্যাটারি ব্যাকআপও অনেকটা নির্ভরশীল। যত বড় ডিসপ্লে, তত বেশি ব্যাটারির ক্ষয় হবে।
রেজ়োলিউশন: উচ্চতর রেজ়োলিউশন তীক্ষ্ণ এবং বেশি ডিটেল ছবি প্রদান করে।
প্যানেল টাইপ: আইপিএস প্যানেলগুলি প্রশস্ত ভিউয়িং অ্যাঙ্গল এবং নির্ভুল রং প্রদান করে। টিএন প্যানেলগুলি সাধারণত সস্তা হয়। কিন্তু ভিউয়িং অ্যাঙ্গল সঙ্কীর্ণ হয়। আবার অ্যামোলেড ডিসপ্লে সঠিক রং না দেখালেও মাল্টিমিডিয়া সিনেমা ইত্যাদি দেখার জন্য ভাল। তাই অ্যামোলেড ডিসপ্লে জনপ্রিয় হলেও, যাঁরা এডিটিংয়ের মতো কাজ করেন তাঁরা সাধারণত অ্যামোলেড ডিসপ্লে নিতে পছন্দ করেন না।
টাচ স্ক্রিন: আপনি যদি আরও ইন্টারঅ্যাকটিভ অভিজ্ঞতা চান, তা হলে একটি টাচ স্ক্রিন ল্যাপটপ কেনার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন। তবে শুধু দেখনদারির জন্য টাচ স্ক্রিন ল্যাপটপ নিয়ে লাভ নেই। যত এই ধরনের ফিচার নেবেন ততই ল্যাপটপের দাম বাড়বে।
৭. ব্যাটারির আয়ু:
যাঁরা প্রায়ই এ দিক-ও দিক যাতায়াত করেন, তাঁদের জন্য ব্যাটারির আয়ু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রসেসর, ডিসপ্লে, স্টোরেজ এবং ব্যবহারের ধরন ব্যাটারির আয়ুকে প্রভাবিত করে। উচ্চ ক্ষমতার ব্যাটারি এবং পাওয়ার-সেভিং ফিচার রয়েছে এমন ল্যাপটপ খুঁজুন।
৮. কানেক্টিভিটি:
আপনার ডিভাইস এবং পেরিফেরালগুলির জন্য প্রয়োজনীয় পোর্ট এবং কানেক্টিভিটি অপশন রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করুন। সাধারণ পোর্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউএসবি-এ, ইউএসবি-সি, এইচডিএমআই, থান্ডারবোল্ট এবং হেডফোন জ্যাক। এ ছাড়াও অয়্যারলেস কানেক্টিভিটি অপশন, যেমন ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ লেটেস্ট ভার্সন আছে কি না দেখে নিন।
৯. ওজন এবং পোর্টেবিলিটি:
যদি পোর্টেবিলিটি আপনার অগ্রাধিকার হয়, তা হলে হালকা ও কমপ্যাক্ট ল্যাপটপ নির্বাচন করুন। স্ক্রিনের আকার, কী দিয়ে তৈরি এবং ব্যাটারির আয়ুর মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করুন।
১০. বাজেট: এটাই আসলে প্রধান। আপনার বাজেট ঠিক করুন এবং সেই অনুযায়ী খোঁজ শুরু করুন। আপনার বাজেটের মধ্যে থাকার জন্য কিছু ফিচার বা ব্র্যান্ডের সঙ্গে আপস করতে হতে পারে।
এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে এবং ভাল ভাবে গবেষণা করে আপনি আপনার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ খুঁজে পেতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy