দেওয়াল, ছাদ, স্তম্ভ জুড়ে অজস্র ছোট ছোট কাচ। মহলে শৌখিন কারুকাজ। কোথাও যদি একটি প্রদীপ জ্বালানো হয়, তারই প্রতিফলন হাজার গুণ হয়ে ফিরে আসে। আলোকিত হয় সুবিশাল মহল। শিশমহল হয় এমনই।
সম্রাট শাহজাহানের আমলের সেই শিশমহলই এ বার সাজল নবরূপে। ৩৭০ বছর পর আবার সেই স্থানের ইতিহাস, সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন জনসাধারণ। দিল্লির উত্তরে রয়েছে শালিমার বাগ। সেখানেই ১৭ শতকে নির্মিত সম্রাট শাহজাহানের শিশমহল এত দিনে অনাদরে পড়েছিল। হারিয়ে যাচ্ছিল ইতিহাস। দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ) এবং ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের যৌথ সহযোগিতায় ফের চমক ফিরল মোগল আমলের স্থাপত্যটির। পর্যটকদের প্রাপ্তি হল নতুন এক পর্যটনকেন্দ্র।
গত ২ জুলাই কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখওয়াতের উপস্থিতিতে মোগল স্থাপত্যের নবরূপ উন্মোচিত হয়। তবে যথাসম্ভব অতীত স্থাপত্যকে যথাযথ রাখারই চেষ্টা করেছে এএসআই।
দিল্লির শালিমার বাগ আইজ়াবাদ বাগিচা নামেও পরিচিত। ‘শালা’ এবং ‘মার’ শব্দ থেকেই শালিমার, যার অর্থ প্রমোদ আবাস। মনে করা হয়, বেগম আইজ়ুন্নিসার স্মৃতিতেই শাহজাহান এই বাগিচা তৈরি করেছিলেন।
শালিমার বাগে বাদশাহের শিশমহলে এখন কী থাকছে?
শমহলে ‘বরাদরি’ বা দরবার রয়েছে। আর রয়েছে তিন ঐতিহ্যবাহী কক্ষ। তারই একটিকে করা হয়েছে বই পড়ার কক্ষ, সাহিত্য সংক্রান্ত আলোচনার জন্য একটি কক্ষ। আর থাকছে পর্যটকদের জন্য ক্যাফে। মহলের বিভিন্ন অংশের সংস্কার কাজে ব্যবহার হয়েছে চুন,সুরকি, পুরনো আমলের ইট এবং গাঁথনির জন্য প্রাকৃতিক উপকরণ।
শিশমহলে রয়েছে একাধিক নকশা করা খিলান, শৌখিন কাজের ঝরোখা। ছাদ সজ্জিত সিসা বা ছোট ছোট আয়না দিয়ে। স্থাপত্য জুড়ে চোখে পড়বে মোগল আমলে ফুলের কারুকাজ। যে কোনও মহল সংলগ্ন সুসজ্জিত বাগিচাও মোগল রীতির অংশ। এখানেও কেয়ারি করা বাগিচা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
অজিতগড়
শিশমহল ছাড়াও শালিমার বাগের আশপাশে ঘুরে নিতে পারেন বেশ কয়েকটি জায়গা। সেই তালিকায় রাখতে পারেন ‘অজিতগড়’। একে বিদ্রোহীদের স্মৃতিসৌধও বলা হয়। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের শহিদদের স্মরণে বেলেপাথরে তৈরি গথিক স্টাইলের সৌধটি নির্মাণ হয়।
লাল কেল্লা
শালিমার বাগের অদূরেই রয়েছে দিল্লির লাল কেল্লা। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত এই কেল্লা জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ১৭ শতকে সম্রাট শাহজাহানের আমলে তৈরি হয়েছিল এই দুর্গ। ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পরে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে এখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
জামা মসজিদ
দিল্লির জামা মসজিদও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। সম্রাট শাহজাহানের আমলেই তা তৈরি হয়েছিল। ভারতের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ এটি। এর স্থাপত্য আজও সকলের নজর কাড়ে। শালিমার বাগ থেকে জামা মসজিদের দূরত্ব ১৪-১৯ কিলোমিটার। কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন, তার উপর দূরত্ব নির্ভর করবে। রয়েছে মেট্রোরেলে যাওয়ার সুবিধাও।