দিঘা, পুরী, মন্দারমণি— বাঙালির কাছে তিন সৈকতই বড্ড প্রিয়। খুঁজলে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে যাঁরা অসংখ্য বার পুরী গিয়েছেন। আবার কারও কারও কাছে দিঘা-মন্দারমণি দ্বিতীয় বাড়ির মতোই।
শীতের মিঠে হাওয়ায় সাগর পাড়ে ঘুরতে বেশ ভালই লাগে। সে কারণে এই মরসুমে উপচে পড়া ভিড় থাকে দিঘা, পুরী, মন্দারমণিতে। তবে ভিড় এড়িয়ে, কিছুটা অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সান্নিধ্যে ঘুরে বেড়াতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার অচেনা তিন সৈকত বেছে নিতে পারেন।
কানাই চট্ট
অলস দিনযাপনে করতে চাইলে ঠিকানা হতে পারে কানাই চট্ট।ঝাউবনের ছায়া, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, পুকুর, মেঠো পথ পেরিয়ে সেই সৈকতে পৌঁছলে মন ভাল হয়ে যাবে নিমেষেই। বালির সৈকতে ছোট ছোট গর্তে ঘাপটি মেরে থাকে লাল কাঁকড়া। ঘুরে বেড়ায় সৈকতে। আর পায়ের আনাগোনা টের পেলে নিমেষে সেঁধিয়ে যায় গর্তে।
থাকার জায়গা বলতে একটি মাত্র ‘বিচ ক্যাম্প’। খাট-বিছানা সবই আছে। আতিশয্য না থাকলেও প্রয়োজনের সবটুকুই মিলবে এখানে। বাড়তি পাওনা, গাছের ছায়া, উন্মুক্ত পরিবেশ জমিয়ে মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি খাওয়া।
এখানে বসে দেখা যায় ট্রলারের সারি, ঢেউয়ের আসা-যাওয়া। অলস দিনযাপন ছাড়া এখানে অবশ্য তেমন কিছুই করার নেই। তবে চাইলে একটা অটো ভাড়া করে চলে যেতে পারেন দরিয়াপুর বাতিঘরে। টিকিট কেটে ঢুকতে হয় ভিতরে। এখান থেকে চলে যেতে পারেন পেটুয়াঘাট। সেখান থেকে ভেসেলে রসুলপুর নদী পেরিয়ে পৌঁছনো যায় হিজলি শরিফে। হিজলি শরিফে গিয়ে সেখানেও আশপাশ ঘুরে নিতে পারেন। চাইলে নৌ-বিহারও করতে পারেন বেশ কিছু ক্ষণ।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে এলে কাঁথি স্টেশনে নেমে অটো ভাড়া করে পৌঁছতে হবে কানাই চট্ট সৈকতে। সড়কপথে এলে কলকাতা থেকে দিঘাগামী বাস ধরে নামতে হবে কাঁথির রূপশ্রী বাইপাস। সেখান থেকে অটো ভাড়া করে কাঁথি সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে।এ ছাড়া রূপশ্রী বাইপাস থেকে পেটুয়াঘাটের ট্রেকার পাওয়া যায়।তাতে চেপেই আসতে হবে দরিয়াপুর। সেখান থেকে টোটো করে কানাই চট্ট সমুদ্র সৈকত। গাড়িতেও কলকাতা থেকে সরাসরি এই পথ ধরে আসতে পারেন সৈকতে।
মার্কণ্ডী সৈকত
ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় রয়েছে মার্কণ্ডী গ্রাম। ব্রহ্মপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। এখানে মূলত মৎস্যজীবীদের বাস। গ্রামের নামেই সৈকত। মার্কণ্ডী সৈকতের রূপ-সৌন্দর্য আর পাঁচটা বালুকাবেলার মতো ঠিক নয়। সমুদ্রের আগে এখানে চোখে পড়বে নদী। স্থানীয়রা কেউ কেউ বলেন মার্কণ্ডী নদী। নদীর জলধারা পেরিয়ে আবার বালুতট। সেখানে আছড়ে পড়ছে ফেনিল জলরাশি। স্থানীয়রা জায়গাটিকে মোহনা হিসাবেই অভিহিত করেন। চারপাশ ভীষণ পরিচ্ছন্ন।
সৈকতের কোথাও কোথাও বালুতটে সবুজের ছোঁয়া চোখে পড়বে। খানিক ক্ষণ চুপ করে বসে থাকলেই, চোখে পড়বে লাল কাঁকড়ার আনাগোনা। এই জায়গাটির সঙ্গে কিছুটা তালসারির মিল আছে। তবে মার্কণ্ডী তার চেয়েও সুন্দর।
কাছেই রয়েছে শিবের মন্দির। ঘুরে নেওয়া যায় মার্কণ্ডী গ্রামটিও। গ্রামে ঢোকার আগেই কেয়া বনে ঘুরে নিতে পারেন। এই গাছ থেকেই সুগন্ধী তৈরি হয়।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ট্রেনে ব্রহ্মপুর স্টেশন। সেখান থেকে গাড়িতে মার্কণ্ডী সৈকত। কলকাতা থেকে সড়কপথেও যেতে পারেন।
পরিখী
যেতে পারেন ওড়িশার পরিখীতেও। বুড়িবালাম নদীর বেশ কাছে এই সৈকত। ট্রেন অথবা গাড়িতে বালেশ্বর। সেখান থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে সেই বেলাভূমি, যেখানে চোখ জুড়িয়ে দেওয়া ঝাউবন মন ভাল করে দেয়। সকালের নরম রোদ্দুরে বালুময় সাগরতটে হাঁটলে চোখে পড়ে অজস্র ঝিনুক, ভেসে আসে শঙ্খ।
ঝাউঘেরা বালুকাবেলার রূপ বড় বর্ণময়। এখানে এসে পায়ে হেঁটে ঘোরা ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই। তবে আশপাশ দেখতে চাইলে সকালের জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন বুড়িবালামের উদ্দেশে।
নদীর ধারে সার বাঁধা পানসি। খেয়া চেপে ভেসে যেতে পারেন জলপথে।
কী ভাবে যাবেন?
ওড়িশাগামী যে ট্রেন বালেশ্বর যাচ্ছে সেগুলির কোনও একটিতে যেতে পারেন। হাওড়া, সাঁতরাগাছি থেকে একাধিক ট্রেন মিলবে। কলকাতা থেকে বাসেও বালেশ্বর যাওয়া যায়। মোটামুটি ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। সড়কপথে বালেশ্বর সমস্ত বড় শহরের সঙ্গে যুক্ত। কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। গাড়িতেও যেতে পারেন।