Advertisement
E-Paper

কোথাও তিনি ঘরের মেয়ে, কোথাও ভয়ঙ্করী, কালীর নানা রূপ দর্শনে ঘুরে নিন কলকাতার ৫ মন্দির

কালীপ্রতিমা বললেই চোখে ভেসে ওঠে কৃষ্ণবর্ণা, লোলজিহ্বা, তেজোদৃপ্ত দেবীমূর্তি। তবে নানা রূপে তিনি পূজিতা। কালীর বিভিন্ন রূপ দর্শনে কলকাতায় কোন কোন মন্দিরে যাবেন?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১১:০১
কালীরও নানা রূপ রয়েছে। মাতৃরূপ দর্শনে কালীপুজোয় চলুন কলকাতারই কালী মন্দিরগুলিতে।

কালীরও নানা রূপ রয়েছে। মাতৃরূপ দর্শনে কালীপুজোয় চলুন কলকাতারই কালী মন্দিরগুলিতে। ছবি: সংগৃহীত।

তিনি কালী। শক্তিরূপা। বরাভয়দায়িনী।

তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর মধ্যে বাংলায় অন্যতম প্রধান উপাস্যা কালী। কালী প্রতিমা বললেই চোখে ভেসে ওঠে কৃষ্ণবর্ণা এক দেবী। কালীপ্রতিমা বললেই চোখে ভেসে ওঠে কৃষ্ণবর্ণা, লোলজিহ্বা, তেজোদৃপ্ত দেবীমূর্তি। তবে নানা রূপে তিনি পূজিতা। তেজস্বিনী প্রতিমাই কোথাও ‘ঘরের মেয়ে’। কোথাও তিনি ভয়ঙ্করী। কলকাতা জুড়েই রয়েছে অসংখ্য কালী মন্দির। তার সঙ্গেই জড়িয়ে নানা কিংবদন্তি। রয়েছে কোনও কোনও মন্দিরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই বছর কালীপুজোয় ঘুরে নিতে পারেন কলকাতা এবং সংলগ্ন তেমনই কিছু মন্দির।

ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি

ঠনঠনিয়ার কালী প্রতিমা।

ঠনঠনিয়ার কালী প্রতিমা। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতার বহু প্রাচীন কালী মন্দিরের মধ্যে একটি ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। এখন ইট-কাঠ-পাথরের শহরের তার অবস্থান। তবে যখন এই পুজো শুরু হয়, এই স্থান ছিল ঘন অরণ্যে ঢাকা। জনশ্রুতি, জঙ্গলের মধ্য থেকে শোনা যেত কালী মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি। ঠনঠন-ঠনঠন। সেই থেকেই এলাকার নাম ঠনঠনিয়া, পুজোও সেই নামেই। ঠনঠনিয়াতেই রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি। শোনা যায়, ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী সিদ্ধেশ্বরী কালী মূর্তি গড়েছিলেন। ১৮০৩ সালে শঙ্কর ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ী মায়ের মন্দির গড়ে দেন। শোনা যায়, সাধক রামপ্রসাদ সেন, শ্রীরামকৃষ্ণ বার বার এসেছেন এই স্থানে। কার্তিক অমাবস্যায় ধূমধাম করে পুজো হয় এখানে।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতার বিধান সরণিতে রয়েছে পুরনো কালী মন্দিরটি। হাওড়া, শিয়ালদহ বা কলকাতার যে কোনও প্রান্ত থেকে কলেজ স্ট্রিট পৌঁছতে হবে। কলেজ স্ট্রিট থেকে হাঁটাপথ।

সর্বমঙ্গলা কালীমন্দির

সর্বমঙ্গলা কালীমন্দিরের প্রতিমা।

সর্বমঙ্গলা কালীমন্দিরের প্রতিমা। ছবি: সংগৃহীত।

কাশীপুর ‘গান অ্যান্ড শেল’ কারখানার পাশে বর্তমান চিত্তেশ্বরী মন্দিরের কাছেই রয়েছে সর্বমঙ্গলা কালী মন্দির। কলকাতার ইতিহাস নিয়ে চর্চাকারী হরিপদ ভৌমিক জানাচ্ছেন, ১৪৯৫ সালে রচিত বিপ্রদাস পিপিলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে এই মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই হিসাবে এটি অতি প্রাচীন মন্দির। কালীমূর্তি এখানে চতুর্ভুজা হলেও শিববক্ষে দণ্ডায়মানা নন, তিনি পশুর উপরে আসীন। দেবী পশ্চিমমুখী। কেন তিনি পশ্চিমমুখী, তা নিয়ে নানা মত আছে। বোর্ডে লেখা তথ্যনুযায়ী এক বার গঙ্গাবক্ষ দিয়ে রামপ্রসাদ সেন গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিলেন, তা শুনেই দেবী পশ্চিমে গঙ্গার দিকে তাকান। তাই তাঁর এমন অবস্থান। তবে এমন তথ্য বিশেষ গ্রাহ্য নয় বলেই মত ইতিহাসবিদদের।

কী ভাবে যাবেন?

চিত্তেশ্বরী ও সর্বমঙ্গলা কালীবাড়ি বর্তমান কলকাতার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত কাশীপুর এবং চিতপুরে খগেন চট্টোপাধ্যায় রোডে অবস্থিত।

শ্যামসুন্দরী কালী

 চতুর্ভুজা এলোকেশী শ্যামসুন্দরী কালীর রূপ শান্ত

চতুর্ভুজা এলোকেশী শ্যামসুন্দরী কালীর রূপ শান্ত ছবি: সংগৃহীত।

কালী এখানে যেন ছোট্ট মেয়েটি। চতুর্ভুজা এলোকেশী শ্যামসুন্দরী কালীর রূপ শান্ত। পরনে লাল পাড় সাদা শাড়ি। কপালে টিকলি। নাকে নথ। গলায় রুদ্রাক্ষ। প্রতিমার মুখে যেন খেলা করছে হাসি। পুজো নিয়ে প্রচলিত রয়েছে জনশ্রুতি। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ইন্দ্রসেন ভট্টাচার্য জানান, এখানে কালী বালিকা রূপে পূজিত হন। কিন্তু কেন? পুরোহিত কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্যের কথায় জানা যায়, বহু বছর আগে একটি ঘটনা ঘটেছিল। কালীপুজো করতেন এক সেবায়েত। তিনি যখন বাজারে গিয়েছিলেন একটি ছোট্ট মেয়ে তাঁর কাছে এক টাকা চেয়েছিলেন চালকলা খাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি মেয়েটিকে উপেক্ষা করেই চলে আসেন। পরে তিনি দেখেন, পূজার স্থানে মহাদেব থাকলেও কালী নেই। সেই সময় অন্ধকার থেকেই একটি হাত বেরিয়ে আসে। ভেসে ওঠে মুখ। সেবায়েত শুনতে পান, ছোট্ট মেয়েটি বলছে, “দিবি না চালকলা খেতে?” জ্ঞান হারান সেবায়েত। সেই থেকেই শ্যামসুন্দরী রূপে তাঁর পুজো শুরু হয়। গড়পারের হরিনাথ দে রোডের একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ‘শ্যামসুন্দরী’।

কী ভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ থেকে আসতে হবে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ। সেখান থেকে হাঁটাপথে পৌঁছনো যাবে সুকিয়া স্ট্রিটের নিকটবর্তী কালী মন্দিরটিতে।

রাজপুর-সোনারপুর বিপত্তারিণী

দেবী এখানে পূজিতা বিপত্তারিনী চণ্ডী রূপে। কালীরই এক রূপ তিনি।

দেবী এখানে পূজিতা বিপত্তারিনী চণ্ডী রূপে। কালীরই এক রূপ তিনি। ছবি: সংগৃহীত।

উগ্ররূপা নন, দেবী এখানে পূজিতা বিপত্তারিনী চণ্ডী রূপে। কালীরই এক রূপ তিনি। সিংহবাহিনী দেবীর কৃষ্ণবর্ণের রূপেই রয়েছে প্রশান্ত ভাব। শোনা যায়, এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা দুলালচন্দ্র দাস। সাধক হিসাবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। দেবী চণ্ডীকে তিনি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমান মন্দির আধুনিক। বিশাল গেট পেরিয়ে ঢুকলে বাঁধানো চত্বর। তার পরে মূল মন্দির।

কী ভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে সোনারপুর স্টেশনে নেমে অটো ধরে যেতে হবে বিদ্যানিধি স্কুল। সেখান থেকে হাঁটাপথে মন্দির। মেট্রোয় এলে নামতে হবে কবি নজরুল স্টেশনে।

কুঠিঘাটের কালীমন্দির

কুঠিঘাটের কালী প্রতিমা।

কুঠিঘাটের কালী প্রতিমা।

দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির নির্মাণেরও আগে তৈরি হয়েছিল বরাহনগর-মালোপাড়ার কুঠিঘাট অঞ্চলের কৃপাময়ী কালীমন্দির। যদিও 'জয় মিত্রের কালী মন্দির' বলেই এর পরিচিতি। ধনী পরিবারের সন্তান জয়নারায়ণ মিত্র ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করিয়েছিলেন। স্থাপত্যের বিচারে মন্দিরটি নবরত্ন শৈলীর। তবে খানিক তফাত আছে। বাঁকানো চালের পরিবর্তে দেখা যায় দোতলা দালান মন্দির। প্রতি তলে চারটে করে মোট আটটি রত্ন বা চূড়া এবং একেবারে শীর্ষদেশে আকারে বড় আরও একটি রত্ন বসিয়ে নবরত্ন মন্দিরের চেহারা দেওয়া হয়েছে। শোনা যায়, শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীকে ‘মা’ বলে আর কৃপাময়ী ও ব্রহ্মময়ীকে 'মাসি' বলে ডাকতেন।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া, শিয়ালদহ বা কলকাতার যে কোনও প্রান্ত থেকে কুঠিঘাট আসা যায় বাসে। সিঁথির মোড়ে নেমে অটো ধরে কুঠিঘাট পৌঁছনো সুবিধাজনক।

Kali Temples Kali Idol Travel Tips kali Kali Puja 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy