পুজোর ছুটিতে বেড়িয়ে পড়তেই হবে, কিন্তু কোন ঠিকানায়? প্রকৃতি নিজেকে তার মতো করে উজাড় করে রেখেছে। শুধু দেখার চোখ চাই। এমনই এক জায়গা রয়েছে বাংলার পড়শি রাজ্য ওড়িশায়। পুজোয় ঘুরতে পারেন কেওনঝর।
পাহাড়, অরণ্য, ঝর্না— সব মিলিয়েই এই স্থানের সৌন্দর্য। বর্ষার রূপ মনোমুগ্ধকর। এই বছর পুজো একটু এগিয়ে এসেছে। তাই বর্ষার শ্যামলিমার রেশটুকু রয়ে যাবে এই সময়েও। বাড়তি পাওনা শরতের মেঘ, কাশফুল। সঙ্গী যখন চারচাকা, তখন কেওনঝর যাওয়ার পথে ঘুরে নিন বাংরিপোসিও।
পাহাড়-অরণ্যের অদ্ভুত মিশেল রয়েছে বাংরিপোসিতে। ছবি: সংগৃহীত।
বুদ্ধদেব গুহর বিখ্যাত বই ‘বাংরিপোসির দু’রাত্তির’। বইয়ের সেই বাংরিপোসি কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়। ঘণ্টা পাঁচ-ছয়েকে পৌঁছনো যায় সেখানে। কোলাঘাট, লোধাশুলি, বহরাগড়া হয়ে রাস্তা এগিয়েছে। বেশির ভাগটাই জাতীয় সড়ক। বহরাগড়া থেকে বাংরিপোসি ৩২ কিলোমিটার।
পথের ধারেই বিভিন্ন মানের হোটেল। রয়েছে রিসর্টও। সকালবেলা সফর শুরু করলে, মাঝেমধ্যে বিরতি নিলেও দুপুরের মধ্যেই পৌঁছনো যাবে বাংরিপোসি। সেখানে ঘুরে নিন ব্রাহ্মণ কুণ্ড, ঠাকুরানি হিল, দুয়ারসিনি মন্দির, বুড়িবালাম নদী। পরের দিন সকালটাও যদি বাংরিপোসি ঘোরার জন্য হাতে রাখেন, তা হলে বাঁকবল এবং সুলাইয়া ড্যামও জুড়ে নেওয়া যেতে পারে।
তবে যদি এই জায়গাগুলি বাদ দেন, সকালে প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন কেওনঝরের উদ্দেশ্যে। বাংরিপোসি থেকেই পাহাড়-জঙ্গল শুরু। সেই পথই সঙ্গ দেবে। কেওনঝর ঘন সবুজ। অঞ্চলজুড়ে রয়েছে ছোট-বড় নানা জলপ্রপাত। কোনওটাই কিন্তু রাস্তার উপরে নয়। বরং হেঁটে যেতে হবে অরণ্য-পথে। রাস্তায় পড়বে হাতি চলাচলের করিডরও।
কেওনঝরে পথের শোভাই মন ভরাবে। ছবি: সংগৃহীত।
কেওনঝর থেকে ৫১ কিলোমিটাপ দূরে ঘাঁটাগাওয়ে রয়েছে তারিনী মন্দির। প্রতিমা দর্শন করে ঘুরে নিতে পারেন বড়াঘাগরা এবং সানঘাগরা। জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ের কোলে বড়াঘাঘরা। রয়েছে একটি জলাধারও। ঘুরে নিন সানঘাঘরাও। যেতে পারেন কানঝারি জলাধার এবং সীতাবিঞ্জি। এই জায়গাটিতে রয়েছে বড় বড় পাথর এবং গুহা। এখানেই দেখা মিলবে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের লিপি এবং মুর্যালের। যদিও সেই সব এখন প্রায় অস্পষ্ট।
ঘুরে নিন সীতাবিঞ্জিও। ছবি: সংগৃহীত।
কেওনঝর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এই জলপ্রপাতটি। কেওনঝরে একাধিক জলপ্রপাত রয়েছে। একে একে ঘুরে নিন সেই সব। স্থানটি ভাল ভাবে ঘুরতে গেলে দুই রাত এখানে থাকতেই হবে।
খণ্ডধর এবং হান্ডিভাঙা জলপ্রপাত
কেনওঝড়ের সবচেয়ে মনোগ্রাহী জলপ্রপাতটি খণ্ডধর। পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গিয়েছে লম্বা সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে গেলেও অসুবিধা নেই। বিশ্রাম নেওয়ার সময় দেখতে পাবেন, উঁচু থেকে নামছে জলপ্রপাত। বর্ষার পরে গেলে জলও থাকবে প্রচুর। খণ্ডধর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে এই হান্ডিভাঙা জলপ্রপাত। এটি দেখতে গেলেও জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বেশ অনেকটা পথ যেতে হবে। যাওয়ার পথেই পড়বে পাথুরে জমির উপর বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদী। জলপ্রপাতটি বিশাল বড় না হলেও বর্ষায় ধোয়া প্রকৃতির মাঝে এটি দেখতে বেশ মনোরম।
গুন্ডিচাঘাঘি জলপ্রপাত
বর্ষার পরে গেলে এমন রূপই চোখে পড়বে। গুন্ডিচাঘাগি জলপ্রপাত।
এই জলপ্রপাতকে অনেকে ‘ওড়িশার নায়াগ্রা’-ও বলে থাকেন। ঘাঁটাগাও তারিণী মন্দির থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে গুন্ডিচাঘাগি। মুসালা নদীর উপর এই জলপ্রপাত। ধাপে ধাপে জল পড়তে থাকায় এই জলপ্রপাত দেখতে ভাল লাগে। কেওনঝর থেকে গুন্ডিচাঘাগি জলপ্রপাতের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। সময় করে ঘুরে নিন ভীমকুণ্ড জলপ্রপাতও। বিস্তৃত জায়গার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে জলস্রোত। দূর থেকে ভেসে আসে জলের প্রবল শব্দ। এক পাথর থেকে অন্য পাথরে ধাক্কা খেয়ে ফেনিল জলরাশি বয়ে চলেছে। জলস্রোত পাহাড় থেকে নামছে। বয়ে চলেছে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে। কেওনঝর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ভীমকুণ্ড। স্থানীয় লোককথা বলে, পাণ্ডবেরা এই স্থানে কোনও সময় ছিলেন। তার থেকেই এর নাম হয়েছে ভীমকুণ্ড। এখানে রয়েছে ভীমের বিশাল একটি মূর্তিও।
পুজোর সময় এতটা জল অবশ্য থাকবে না। ভীমকুণ্ডের বর্ষার রূপ। ছবি: সংগৃহীত।
একের পর এক জলপ্রপাত থাকলেও প্রতিটির সৌন্দর্য আলাদা। তবে যদি অরণ্য আরও নিবিড় ভাবে অনুভব করতে চান, চলুন কিরিবুরুর দিকেও।
দিন এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী সফরসূচি অদল-বদল করে নিতে পারেন। তবে প্রতি পদে প্রকৃতি এখানে অবাক করবে। কিরিবুরু বা কেওনঝরে এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকাতেই মাটি লাল। এখানে মিশে থাকে লৌহ আকরিক। রয়েছে খনিও।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে কোলাঘাট, লোধাশুলি, বহরাগড়া হয়ে বাংরিপোসি। দূরত্ব ২২২ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে সরাসরি কেওনঝর যাওয়া যায়। দূরত্ব ৩৪৩ কিলোমিটার। টানা গেলে আট ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। বাংরিপোসি থেকে কেওনঝর সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ। দূরত্ব ১২৪ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন?
বাংরিপোসি, কেওনঝরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। রিসর্টও আছে। কেওনঝরে থাকার জন্য ওড়িশা সরকারের পান্থনিবাস রয়েছে। তবে পুজোয় গেলে, আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া ভাল।