Advertisement
E-Paper

ইতিহাস ছুঁয়ে বাঘের ডেরায়, ঘুরে নিন দুর্গও, কলকাতা থেকে মধ্যপ্রদেশ, কী ভাবে সাজাবেন সফর?

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৫৩
চারচাকায় চলুন বাঘের ডেরায়।

চারচাকায় চলুন বাঘের ডেরায়। ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকের বাদ্যি বাজতে মোটেই দেরি নেই। বেড়ানোর পরিকল্পনা এখনও না করলে, এবার দেরি হয়ে যাবে। এই সময় লম্বা ছুটি থাকে অনেকেরই। তাই সফর সাজাতে পারেন একটু অন্য ভাবে। প্রাচীন শহর, রাজকীয় দুর্গ, বাঘের ডেরা, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট— একই সঙ্গে সমস্ত কিছুই ঘোরা যায়, যদি সফর সাজানো হয় পরিকল্পিত ভাবে। কলকাতা থেকে মধ্যপ্রদেশ কী ভাবে চারচাকাতেই ঘুরে আসবেন?

লম্বা সফর ভেঙে নিন ছোট ছোট করে। আর যদি ঘুরতে ঘুরতেই গন্তব্যে পৌঁছোনো যায়, কেটে যাবে দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি। আসলে রোড ট্রিপ মানে গন্তব্যে পৌঁছোনো নয়, পথ চলাতেই লুকিয়ে থাকে আনন্দ। পড়ন্ত বিকেল, নতুন নতুন শহর, জনপদ দেখতে দেখতে যাওয়া, কোনও একটা জায়গা ভাল লাগলে ইচ্ছামতো থমকে যাওয়া— পথের ধারে খাবার খাওয়া, এ সব কিছু মিলেই সফরের আনন্দ।

সেই শুরুটা করতে পারেন রাত থেকেও। রাতভর যাত্রা করলে সকালবেলায় পৌঁছোবেন বেনারস। কলকাতা থেকে আসানসোল, ধানবাদ, পাহাড়পুর, গয়া, সাসারাম হয়ে বেনারস। মাঝেমধ্যে চা-বিরতি নিয়ে গেলেও সময় লাগবে ১৩-১৪ ঘণ্টার মতো। পথশ্রমের ক্লান্তি কাটাতে একটা দিন থেকে যান বেনারসে। বিশ্রাম নিয়ে বিকেলবেলা বেরিয়ে পড়ুন নৌকা করে ঘাট ভ্রমণে। গঙ্গার সান্ধ্য আরতি ভারি সুন্দর। তারই সঙ্গে চেখে নিন কচুরি থেকে চাট, লস্যি, পেঁড়া—পছন্দের টুকিটাকি।

প্রাচীন এই শহরের আনাচকানাচে জড়িয়ে কতশত ইতিহাস। বেনারসের ঘাট।

প্রাচীন এই শহরের আনাচকানাচে জড়িয়ে কতশত ইতিহাস। বেনারসের ঘাট। ছবি: সংগৃহীত।

পরদিন ভোরে আবার বেরিয়ে পড়া। বেনারস থেকে মধ্যপ্রদেশের পান্না শহরের দূরত্ব ৩৬১ কিলোমিটার। পথেই পড়বে কালিঞ্জর দুর্গ।উত্তর প্রদেশের বান্দা জেলার এই জায়গার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বিন্ধ্য পর্বত। সুবিশাল দুর্গের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির। তার মধ্যে নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির। দুর্গের স্থাপত্য, ভাস্কর্য সেই সময়ের শৈল্পিক উৎকর্ষের পরিচয় বহন করে।

বহু পুরনো কালিঞ্জর দুর্গ। বিন্ধ্য পর্বতের গায়ে তৈরি দুর্গটি আজও বিস্ময় জাগায়।

বহু পুরনো কালিঞ্জর দুর্গ। বিন্ধ্য পর্বতের গায়ে তৈরি দুর্গটি আজও বিস্ময় জাগায়। ছবি: সংগৃহীত।

কালিঞ্জর দেখে চলুন পান্না শহরে। পান্না ব্যাঘ্র প্রকল্প বাঘের ডেরা। বন্যপ্রাণ, জঙ্গল সাফারি নিয়ে উৎসাহ থাকলে দু’টি দিন পুরোপুরি এই স্থানের জন্যই বরাদ্দ করতে হবে। বর্ষার সময় দীর্ঘ দিন জঙ্গলে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার থাকে না। অক্টোবরের পর থেকে সাফারির অনুমতি মেলে। মাদলা আর হিনৌতা এই দুই প্রবেশদ্বার থেকে সাফারি হয় পান্না জাতীয় উদ্যানে। অনলাইনে আগাম বুকিং হয়। কোর এরিয়া এবং বাফার এরিয়া— দুই জায়গায় সাফারি হয় আলাদা ভাবে। সচিত্র পরিচয়পত্র এবং নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে জিপসি সাফারি বুকিং করতে হয়। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হয় সাফারি। বিকালেও সাফারির বন্দোবস্ত থাকে ৪টে থেকে। ভোরের সাফারি বুক করলে, বিকেলবেলা বরাদ্দ করতে পারেন বাফার এরিয়া ঘোরার জন্য।

পান্নার অরণ্যে মোলাকাত  হতে পারে বাঘের সঙ্গে।

পান্নার অরণ্যে মোলাকাত হতে পারে বাঘের সঙ্গে। ছবি :সংগৃহীত।

দুই রাত পান্নায় থেকে পরের দিন সকালবেলা বেড়িয়ে পড়ুন খাজুরাহোর উদ্দেশ্যে। পান্না-খাজুরাহো রাস্তা ধরে যাওয়ার পথেই দেখে নিন পাণ্ডব গুহা এবং ঝর্না।অরণ্যঘেরা স্থানটির সৌন্দর্য নিছক কম নয়। ভারি শান্ত পরিবেশ।পান্না থেকে খাজুরাহোর দূরত্ব মোটামুটি ৩৭ কিলোমিটার। পাণ্ডব গুহা ঘুরে যেতে সময় লাগবে ২-আড়াই ঘণ্টার মতো।

ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যস্থল’ মর্যাদাপ্রাপ্ত খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্স। ৯৫০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চান্দেলা রাজের অধীনে এই মন্দিরগুলি তৈরি হয়েছিল। ৭৫টিরও বেশি হিন্দু এবং জৈন মন্দিরের মধ্যে ২২টি অবশিষ্ট আছে। ২০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে মন্দিরগুলি ছড়ানো। পশ্চিম, পূর্ব এবং দক্ষিণ তিনটি ভাগে ভাগ করা। এর মধ্যে পশ্চিমের মন্দিরগুলিই বেশি বিখ্যাত। প্রত্যেকটি মন্দির সম্পর্কে আলাদা গল্প রয়েছে। খাজুরাহো বলতে যে ভাবে অনবদ্য মিথুন-মূর্তির কথাই সামনে আসে বার বার, সেটাই কিন্তু একমাত্র সত্যি নয়। আধ্যাত্মিক নানা প্রক্রিয়াও খোদাই করা আছে মন্দিরের দেওয়ালে। রয়েছে সেই আমলের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানা ছবিও।

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে খাজুরোহের মন্দিরগুলি।

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে খাজুরোহের মন্দিরগুলি। ছবি: সংগৃহীত।

খাজুরাহো ভাল ভাবে ঘুরতে গেলে একটি রাত থেকে যেতেই হবে। মন্দিরচত্বর ঘুরতেই সারা দিন লাগবে। পরের দিন ভোরে বেরিয়ে পড়ুন রেনে বা রানেহ জলপ্রপাত দেখতে। এই বছর পুজো এগিয়ে এসেছে বলে জলপ্রপাতে জল মিলবে আশা করা যায়। তবে খাজুরাহো থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের এই স্থানটির আকর্ষণ ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্রের জন্য।

অ্যারিজ়োনার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের’ সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এখানকার। রকমারি পাথুরে শিলা অদ্ভুত রঙের কারুকাজ ফুটিয়ে তুলেছে। কেন নদী এখানে সুগভীর গিরিখাত তৈরি করেছে। সেই খাত গ্রানাইট শিলার ক্ষয়ের ফল। এখানে দেখা যায় পাহাড়ের মধ্যে গহ্বর, যা এখন জলে ভর্তি। এই সমস্ত স্থান লক্ষ লক্ষ বছর আগে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এই অঞ্চলে ঘড়িয়াল সংরক্ষণ করা হয়। অরণ্যপথে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না, স্থানীয় গাড়িতেই ঘুরতে হয়। এখানে দেখা মেলে নীল গাইয়ের।

কেন নদী সৃষ্টি করেছে জলপ্রপাতের। এখানকার ভূমিরূপের বৈচিত্র চোখে পড়ার মতো।

কেন নদী সৃষ্টি করেছে জলপ্রপাতের। এখানকার ভূমিরূপের বৈচিত্র চোখে পড়ার মতো। ছবি: সংগৃহীত

এখান থেকে খাজুরাহো ফিরে ফেরার পথ ধরুন। বেনারস হয়েই কলকাতা ফিরতে হবে। তবে মির্জাপুরে ঘুরে নিন চুনার ফোর্ট। খাজুরাহো থেকে আট ঘণ্টার রাস্তা। দূরত্ব ৩৬৫ কিলোমিটার। দুর্গের দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা। দুর্গটি বহু কাল ধরে বিভিন্ন রাজবংশ এবং সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের সাক্ষী। এর সঙ্গে জড়িয়ে বিষ্ণুর বামন অবতারের গল্পও। দুর্গটিতে চারটি প্রধান ফটক রয়েছে, দিল্লি দরওয়াজা, বারাণসী দরওয়াজা, খিড়কি দরওয়াজা এবং রানা দরওয়াজা। বেনারস থেকে দুর্গটির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার।

ঘুরে নিতে পারেন বহু পুরনো চুনার দুর্গ।

ঘুরে নিতে পারেন বহু পুরনো চুনার দুর্গ। ছবি: সংগৃহীত।

বেনারস ভাল ভাবে ঘুরতে হলে দু’টি রাত এখানেই থেকে যান।খাজুরাহো থেকে চুনার হয়ে বেনারস ঢুকতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। পরের দিনটি বরং নিজের মতো করে ঐতিহাসিক শহরটি ঘুরে নিন। শুধু ধর্ম নয়, প্রাচীন এই শহরের আনাচকানাচে লুকিয়ে ইতিহাস। সঙ্গীত, শিক্ষা, শাস্ত্র— সবেরই ভূমি এই স্থান। বেনারস থেকে সোজা কলকাতা। ফিরতি পথ একই।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে বেনারস। সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ৬৭২ কিলোমিটার। ১৩-১৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।বেনারসে থেকে পরের দিন কালিঞ্জর দুর্গ হয়ে পান্না। দূরত্ব ৩৫০ কিলোমিটার। পান্নায় দুই রাত থেকে খাজুরোহো যাত্রা। দূরত্ব ৩৭ কিলোমিটার। সেখানে এক রাত থেকে চুনার ফোর্ট হয়ে বেনারস। বেনারস থেকে কলকাতা। ৭-৮দিনে সফর সাজানো সম্ভব।

কোথায় থাকবেন?

বেনারস, পান্না, খাজুরাহো— সব জায়গাতেই নানা মানের হোটেল, রিসর্ট রয়েছে।

Travel Tips Charchakay Utsav Puja Special 2025 Madhyapradesh benaras
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy