Advertisement
E-Paper

পুজোর ছুটিতে চলুন ‘হীরক রাজার দেশে’-র শুটিং স্পটে, কলকাতা থেকে ৭ ঘণ্টাতেই পৌঁছোনো যায় সেখানে

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কমে থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৯
‘হীরক রাজার দেশে’-ছবির শুটিং-এর জায়গায় ঘুরে আসবেন কি?

‘হীরক রাজার দেশে’-ছবির শুটিং-এর জায়গায় ঘুরে আসবেন কি? ছবি: সংগৃহীত।

মনে আছে, হীরক রাজার দেশের উদয়ন পণ্ডিতের কথা? হীরক রাজার অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা চরিত্রটি সেপাই-সান্ত্রীদের নজর থেকে লুকিয়ে থাকার জন্য বেছে নিয়েছিল এক গুহা! সেই গুহাই এক বার দেখে আসবেন না কি?

সত্যজিৎ রায় ছবির জন্য যখন যেমন লোকেশন প্রয়োজন হয়েছে, তেমনই বেছে নিয়েছেন। তাঁর সিনেমার দৌলতে সেই লোকেশনই স্মরণীয় হয়ে গিয়েছে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির কাছে। যেমন জয়সলমেরের সোনার কেল্লা। অথচ এই রাজ্যের বেশ কিছু স্থান সেই তালিকায় থাকলেও, তা নিয়ে তেমন শোরগোল নেই। জানা যায়, পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়ে শুটিং হয়েছিল হীরক রাজার দেশের কয়েকটি দৃশ্যের। উদয়ন পণ্ডিত লুকিয়েছিল পাহাড়েরই এক গুহায়। সেই গুহা খুঁজে বার করা কঠিন, তবে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগে বেরিয়ে পড়তেই পারেন এ বছর দুর্গাপুজোর ছুটিতে।

এ বছরের টানা বর্ষায় পাহাড় সবুজ। পুজোতেও রয়ে যাবে এই শ্যামলিমা।

এ বছরের টানা বর্ষায় পাহাড় সবুজ। পুজোতেও রয়ে যাবে এই শ্যামলিমা। ছবি: সংগৃহীত।

পাহাড় ঘেরা পুরুলিয়ার পরতে পরতে সৌন্দর্য। চারচাকায় সওয়ার হয়ে পথঘাট, স্থানীয় খাবার, পড়ন্ত বিকেল উপভোগ করতে করতে কী ভাবে পৌঁছবেন সেখানে, রইল তারই হদিস।

কলকাতা থেকে টানা গেলে ঘণ্টা ছয় বা সাতেকেই পৌঁছনো যায়। তবে, মাঝেমধ্যে বিরতি নিয়ে, টুকিটাকি ভ্রমণও মন্দ হবে না। ডানকুনির রাস্তা ধরে গাড়ি ছোটান সোজা বর্ধমানের দিকে। একে একে পেরিয়ে যাবে জৌগ্রাম, মসাগ্রাম, রসুলপুর। এই পথে সঙ্গ দেবে শরতের আকাশ আর কাশফুল। খিদে চাগাড় না দিলেও কোমর-পিঠ ছাড়িয়ে নিতে, শক্তিগড়ে নেমে চায়ে চুমুক দিতেই পারেন। সঙ্গে নিতে পারেন বিখ্যাত ল্যাংচা।

হাতে সময় থাকলে নবাবহাটে রাস্তার পাশেই ১০৮ শিবমন্দিরে ঢুঁ দিতে পারেন। না হলে সোজা চলুন, বুদবুদ, পানাগড়, কাঁকসা হয়ে দুর্গাপুর। খাওয়া-দাওয়া সেরে নেওয়ার জন্য দুর্গাপুর ভাল। ছোট-বড় রেস্তরাঁ রয়েছে সেখানেই। সেখান থেকে রানিগঞ্জ, শালতোড়া হয়ে রঘুনাথপুর, জয়চণ্ডী পাহাড়।

দীর্ঘ ধকলের পর গন্তব্যে পৌঁছে খানিক জিরিয়ে, ঘুরে নিতে পারেন আশপাশ। রঘুনাথপুর শহর থেকে ২ কিলোমিটার এবং আদ্রা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে জয়চণ্ডী পাহাড় বরাবরই পর্যটকদের পছন্দের স্থান। বিশেষত শীতের দিনেই এখানে ভিড় বাড়ে।

পাহাড় অনুচ্চ। মাথা পর্যন্ত উঠে গিয়েছে বাঁধানো সিঁড়ি। এই পাহাড়ের নিজস্ব রূপ আছে। দূর থেকে দেখলে কোথাও চোখে পড়বে সবুজ, কোথাও আবার পাথুরে ঢাল। সবুজ এবং ধূসরের অদ্ভুত এক সংমিশ্রণ। শীতেই ভিড় করেন পর্যটকেরা। তবে জয়চণ্ডীর বর্ষার রূপ আরও সজীব, সতেজ। দুর্গাপুজোয় গেলে, সেই সৌন্দর্যের রেশটুকু অন্তত পাওয়া যাবে।

পাহাড়ের মাথায় চণ্ডীমাতার মন্দির। পাঁচশোর উপর সিঁড়ি ভেঙে চূড়ায় ওঠা কষ্টকর বটে, তবে পাহাড়ের মাথার চ্যাটালো অংশে দিব্যি জিরিয়ে নেওয়া যায়। সেখান থেকে শহর এবং আশপাশ দেখায় ভারি মনোরম। পাহাড়ের দু’পাশে আর কয়েকটি চূড়ার মতো অংশ আছে। অ্যাডভেঞ্চারের শখ থাকলে, পাথর বেড়ে সেখানেও উঠতে পারেন।

জয়চণ্ডী পাহাড় ঘুরে কেউ চলে যান গড় পঞ্চকোট বড়ন্তি জলাধারের দিকে, কেউ আবার অযোধ্যা পাহাড়ের দিকটিও ঘুরে নিন। তবে তালিকায় জুড়ে নিতে পারেন বেরো গ্রামও। সড়কপথে ১৫ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব। পাহাড় বেড় দিয়ে ঘেরা বেরোগ্রামটিও ভারি সুন্দর। নিরালায় গ্রাম ভ্রমণের সাধ থাকলে এটি কিন্তু একটি আবশ্যিক গন্তব্য। এখানেই রয়েছে চণ্ডী মন্দির ও পাহাড়, আশ্রম।এখানকার বেশ কিছু পুরনো মন্দির বেশ নজরকাড়া।

বেরোগ্রামও ঘুরে নিতে পারেন জয়চণ্ডী পাহাড় থেকে।

বেরোগ্রামও ঘুরে নিতে পারেন জয়চণ্ডী পাহাড় থেকে। ছবি: সংগৃহীত।

জয়চণ্ডী পাহাড় থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বড়ন্তী জলাধার। মুরাডি পাহাড়ের কোলঘেঁষা পথ ধরে পৌঁছনো যায় বড়ন্তী পাহাড়ের ঠিক নীচে। সেখানেই বড়ন্তী গ্রাম। একটু কষ্ট করে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে বড়ন্তী লেক-সহ চারপাশের যে অনবদ্য প্রাকৃতিক শোভা দেখা যায়, তা অবশ্যই হেঁটে ওঠার কষ্টকে ভুলিয়ে দেয়।

বড়ন্তী থেকে গাড়ি নিয়ে স্থানীয় গ্রাম, এলাকা দেখে চলে যাওয়া যায় আর এক সুন্দর গ্রাম মানজুড়িতে। সাঁওতালদের বেশ বড় গ্রাম এটি। হাতে আরও একটি দিন সময় থাকলে ঘুরে নেওয়া যায় পাঞ্চেত, মাইথন, গড় পঞ্চকোট— যেগুলোর কোনওটাই বড়ন্তী থেকে খুব একটা দূরে নয়। মাইথন ৩০ কিলোমিটার, গড় পঞ্চকোট ১৫ কিলোমিটার, পাঞ্চেত ২৪ কিলোমিটার।

বড়ন্তী থেকে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য।

বড়ন্তী থেকে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত।

কোথায় থাকবেন?

জয়চণ্ডী পাহাড়ের গায়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস রয়েছে থাকার জন্য। কাছে আরও একটি বেসরকারি হোটেল রয়েছে। আরও হোটেল মিলবে, তবে সেগুলি পাহাড় থেকে একটু দূরে। বড়ন্তীতে থাকার জন্য একাধিক রিসর্ট, হোটেল আছে।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গেলে গেলে দূরত্ব প্রায় ২৫৫ কিলোমিটার। ডানকুনি, বর্ধমান, দুর্গাপুর হয়ে রঘুনাথপুর।

যাতায়াত মিলিয়ে দিন চার-পাঁচ সময় থাকলেই জয়চণ্ডী পাহাড়, বেরো গ্রাম, বড়ন্তী এবং মাইথন ঘুরে আসা যাবে ভাল ভাবে।

Joychandi Hill purulia Durga Puja 2025 Travel Charchakay Utsav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy