পুজোয় বেরিয়ে পড়তে চান, তবে বেশি দূর নয়। গাড়ি নিয়ে ঘোরাও হবে, আবার সেই দিনই ফেরাও যাবে। সেজেগুজে ছবিও দিতে পারবেন। দিঘা, মন্দারমণি, মৌসুনি দ্বীপ, শঙ্করপুর, ঝাড়গ্রাম— অনেক জায়গা আছে বটে, কিন্তু সেগুলি তো বড্ড চেনা!
একটু অজানা, অচেনা জায়গার খোঁজ চান? তা হলে চলুন কুরুমবেড়া দুর্গ। পশ্চিম মেদিনীপুরের গগনেশ্বর গ্রামে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে সেই দুর্গ। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধীনস্থ স্থানটি বেশ যত্নেই সাজানো।
খড়্গপুর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে, গগনেশ্বর গ্রামে কুরুমবেড়া দুর্গ। কেশিয়ারি হয়ে যেতে হয়।
দুর্গের পরতে পরতে ইতিহাসের হাতছানি। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে ল্যাটেরাইট পাথরের খিলানসমৃদ্ধ দীর্ঘ বারান্দা। বিশাল উঠোনের মাঝখানে তিনটি গোলাকার গম্বুজ। একটি বেদিও রয়েছে।
কুরুমবেড়া দুর্গ। ছবি: সংগৃহীত।
আসলে এটি এক প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ, দুর্গের মতো। এই দুর্গের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কথা শোনা যায়। কেউ বলেন, ওড়িশার রাজা গজপতি কপিলেন্দ্র দেবের শাসনকালে (১৪৩৮- ১৪৬৯) তৈরি হয়েছিল। কেউ আবার বলেন, আওরঙ্গজেবের আমলে এটি তৈরি হয়েছিল। ওড়িশি স্থাপত্যের সঙ্গে মিল রয়েছে কাঠামোটির। আয়তাকার এই সৌধটির চার দিকেই প্রায় আট ফুট প্রশস্ত খোলা বারান্দা। এবড়ো-খেবড়ো ঝামা পাথরের উপর চুন-বালির পলেস্তারা। দুর্গটিতে মন্দির-মসজিদের মতো কাঠামো রয়েছে। কারও মতে, মুসলিম সৈনিকদের নমাজের জন্য এটি তৈরি হয়েছিল।
কুরুমবেড়া ঘুরে চলুন মোগলমারি বৌদ্ধ বিহারের উদ্দেশে। দূরত্ব সড়কপথে ২০ কিলোমিটারের মতো।
জাতীয় সড়কে বাসস্টপের নাম মোগলমারি। একটু এগোলেই চোখে পড়বে মোগলমারির দিক নির্দেশ করে হাইওয়েতে একটি বোর্ড দেওয়া রয়েছে। জাতীয় সড়ক থেকে ডান দিকের সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তা। বড় হরফে লেখা রয়েছে ‘মোগলমারি বৌদ্ধবিহার’। সিঁড়ি উঠে গিয়েছে। কেয়ারি করা উদ্যান।
পুরাতাত্ত্বিকদের মতে, মোগলমারি পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহার। নালন্দার সমসাময়িক। হিউ-এন-সাং এসেছিলেন এখানে, তিনি তাঁর ‘সি-ইউ-কি’ ভ্রমণ বৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন এই বৌদ্ধবিহারের কথা। ন’দফায় এখানে খননকার্য চালায় পুরাতত্ত্ব বিভাগ।
মোগলমারি বৌদ্ধ বিহার। ছবি: সংগৃহীত।
২০০৩ সালে ঢিবি খনন করে বৌদ্ধবিহার খুঁজে বার করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অশোক দত্ত। তাঁর উদ্যোগে দফায়-দফায় চলেছিল খননকাজ। উদ্ধার হয়েছিল বেশ কিছু মূর্তি। ২০১৩ সাল থেকে তিন দফায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ফের হয় খননকাজ।
কেউ বলেন, এক সময় মোগলরা এই পথ ‘মাড়িয়ে’যেত।‘মাড়ি’,অর্থাৎ পথ।সে কারণেই নাকি নাম হয় ‘মোগলমারি’। আবার কারও মতে, তুকারুই নামে এক জায়গায় মোগল-পাঠানদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে মারা গিয়েছিলেন বহু মোগল সৈন্য, তার পর থেকেই নাম হয় ‘মোগলমারি’।
বৌদ্ধবিহারের চোখে পড়বে বিভিন্ন মুদ্রায় একাধিক বৌদ্ধমূর্তি। অসাধারণ তার নির্মাণ কৌশল। সবই নামমাত্র সংরক্ষিত। বিভিন্ন মূর্তির পাশাপাশি মাটির নকশা করা পাত্র ও সে সময় ব্যবহৃত সুগন্ধীর বোতলের অংশও উদ্ধার হয়েছে। প্রায় ৫৪ রকমের নকশা করা ইট মিলেছে মোগলমারিতে। মিউজ়িয়ামে এ সবের একাধিক নমুনা দেখতে পাওয়া যায়।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে কুরুমবেড়া দুর্গের দূরত্ব ১৭১ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে যেতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো। কলকাতা থেকে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে চলুন। বাগনান, পাঁশকুড়া, রতুলিয়া, বেলদা হয়ে গগনেশ্বর। কুকাই বাসস্ট্যান্ড থেকে যেতে হবে বাঁ দিকে।
কুরুমবেড়া থেকে মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। বাহানা, সালাজপুর হয়ে এগোতে হবে। ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে।