বেড়াতে গিয়ে সাধ্যের মধ্যে থাকা হোটেলে উঠেছেন। কিন্তু যত দিন থেকেছেন, চোখ গিয়েছে পাশের ঝাঁ-চকচকে সুসজ্জিত হোটেলটিতে। কী সুন্দর ছাদ, উন্মুক্ত অঙ্গনে গালিচার মতো ঘাস, কেয়ারি করা বাগান— সর্বত্রই যেন রুচির ছাপ! কিন্তু খরচের ভয়ে সেই ইচ্ছা মনেই রয়ে গিয়েছে? বেড়াতে গিয়ে অভিজাত হোটেলে থাকা, খাওয়া, স্পা করানো, ক্রুজ়ে চেপে ঘোরা— কত শখই তো থাকে লোকের! কিন্তু পকেটে চাপ পড়ার ভয়ে বা কখনও বা সাধ্যাতীত মনে হওয়ায় অনেকে পিছিয়ে যান। তবে এমন স্বপ্ন পূরণ করা মোটেই কঠিন নয়, জানাচ্ছেন সমাজমাধ্যমপ্রভাবী বিশাখা তালরেজ়া। ভ্রমণ, হোটেল নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করছেন তিনি। শুধু বিশাখা নন, ট্রাভেল ভ্লগারদের অনেকেই বলে থাকেন, বিমানে যাতায়াত করে, নামী হোটেলে থেকে পকেট বাঁচিয়ে ঘোরা অসম্ভব নয়। দরকার উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং সুযোগের সদ্বব্যহার করা।
সুযোগের সন্ধান: দেশে হোক বা বিদেশে, যাতায়াতের জন্য এখন অনেকেই অ্যাপের সাহায্য নেন। বিমান অথবা ট্রেনের টিকিট কাটা, হোটেল বুকিংয়ের সুবিধা দেয় বিভিন্ন অ্যাপ। তা ছাড়া, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ক্রেডিট কার্ডেও নানা রকম অফার থাকে। যাঁরা কাজের সূত্রে বা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঘন ঘন হোটেল বুকিং করেন, টিকিট কাটেন তাঁদের বাড়তি সুযোগসুবিধা দেয় অ্যাপগুলি। নির্দিষ্ট উপভোক্তার নামে পয়েন্ট বা নম্বর যোগ হয়। এমন অফার কাজে লাগিয়েও কিন্তু কখনও কখনও ঝাঁ- চকচকে বিলাসবহুল হোটেলে থাকার ভাল সুযোগ পাওয়া যায়। একই রকম সুবিধা মেলে ক্রেডিট কার্ড থেকেও। যেমন বিশেষ বিশেষ ক্রেডিট কার্ডে মাত্র ১ টাকায় বিমানবন্দরের এসি লাউঞ্জে বসে এলাহি ভূরিভোজ করা যায়। কোথা থেকে কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে একটু সচেতন হলেই কাজ সহজ হয়ে যাবে।
হোটেল: দেশ, স্থানভেদে হোটেলের দামেও বদল হয়। দেশেই বেড়ান বা বিদেশে, কোন জায়গায় হোটেল নিচ্ছেন, তার উপর খরচ নির্ভর করে। হয়তো জনবহুল জায়গাটি থেকে একটু সরে এলেই অনেক সুসজ্জিত, পরিচ্ছন্ন হোটেল পাবেন তুলনামূলক কম খরচে। সব সময় অভিজাত হোটেলই বেছে নিতে হবে এমন নয়। একটু খুঁজলেই ছিমছাম অথচ পরিপাটি বুটিক বা ব্যাঙ্কোয়েট-সহ হোটেল মিলে যায়, যেখানে আরাম এবং পরিষেবার সঙ্গে কোনও আপস করতে হয় না। আবার কোনও কোনও দেশে হ্রদ বা কিংবা সমুদ্রের পাশে হোটেলের বদলে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করলেও খরচ কমে যায়। আধুনিক, সজ্জিত এমন অ্যাপার্টমেন্টে পরিষেবার সঙ্গে আপস করতে হয় না।
আরও পড়ুন:
সঠিক পরিকল্পনা: সাত দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা। তার মধ্যে ২ বা ৩ দিনের জন্য পছন্দের হোটেলটি বেছে নিতে পারেন। এক দিকে খরচ করলে অন্য দিকে খরচ কমাতে হবে। দুই দিন অভিজাত কোন হোটেলে থেকে স্পা করিয়ে মনের মতো রেস্তরাঁয় খেয়ে শখ পূরণ করতে পারেন। ঘোরার জন্য বুক করতে পারেন ক্রুজ়। বাকি দিনগুলিতে তুলনামূলক সস্তার হোটেল বা হোম স্টে বেছে নিতে পারেন। কিংবা কেনাকাটা কম করে কিছুটা খরচ বাঁচাতে পারেন। হোটেলের ঘরে থাকা বৈদ্যুতিক কেটলিতে চা, টুকিটাকি খাবার বানিয়ে খেলেও একটু হলেও সাশ্রয় হতে পারে।
অফ সিজ়ন: একটি স্থানে বেড়ানোর আদর্শ মরসুম থাকে। যেমন পাহাড়ি এলাকায় লোকজন অক্টোবর-নভেম্বরে যায়। কারণ এই সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে। শ্বেতশুভ্র পাহাড়চূড়ার দৃশ্যমানতার সুযোগ বেড়ে যায় অনেকটাই। বৃষ্টির মরসুম নয় বলে ধসের ভয় থাকে না। আবার পূর্বঘাট, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার রূপ উপভোগের ভাল সময় বর্ষা। যে সময় লোকে বেড়াতে যায়, সেই সময়টি এড়িয়ে চলুন। কারণ, এমন সময় পর্যটক বেশি থাকায় হোটেলও বেশি দর হাঁকে, গাড়িভাড়াও অনেক হয়। অথচ অফ সিজ়ন বা লোকে যে সময় বেড়াতে যায় না, তেমন মরসুমে অনেক সস্তায় পছন্দের হোটেল পাওয়া যায়। ভ্রমণের খরচও কমে যায়।
দিনে ঘোরা: কোনও কোনও অভিজাত হোটেল ‘ডে আউটিং’-এর সুযোগ দেয়। অর্থাৎ সারা দিন থেকে খাওয়া-দাওয়া করে সন্ধ্যায় ফেরা যায়। এতে শখও পূরণ হবে, অথচ এক রাত থাকার বিশাল খরচ বহন করতে হবে না। নামী হোটেলের বড় বড় রেস্তরাঁয় খেতে গেলে পকেটে টান পড়া স্বাভাবিক। ডে আউটিং ছাড়াও এখন অনেক অ্যাপ রয়েছে, যারা বুফে খাবারে নানা রকম অফার দেয়। সেই তালিকায় অভিজাত হোটেলের রেস্তরাঁও থাকে।