Advertisement
E-Paper

পাহাড়, অরণ্য, সৈকত আছে কলকাতার কাছেই, তিন জায়গায় ঘোরা যাবে দু’দিনের ছুটিতে

অরণ্য মানেই কিন্তু ডুয়ার্স আর পাহাড় মানে হিমালয় নয়। কলকাতার অদূরে দিন দুয়েকে ঘুরে নেওয়া যায় অরণ্য, পাহাড় এবং সৈকতে। কোথায় সেই স্থান, জেনে নিন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ১০:১৮
পাহাড়, অরণ্য, সৈকতের ঠিকানা রয়েছে কলকাতার অদূরেই। শুধু সময় করে যাওয়ার অপেক্ষা।

পাহাড়, অরণ্য, সৈকতের ঠিকানা রয়েছে কলকাতার অদূরেই। শুধু সময় করে যাওয়ার অপেক্ষা। ছবি: সংগৃহীত।

কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে থাকতে মন পাহাড়, নদী দেখার জন্য আকুলিবিকুলি করে? ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটাই অক্সিজেন। একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তির উপায়।

কিন্তু বললেই তো বেরিয়ে পড়া যায় না! অরণ্যের কথা মনে হলেই, প্রথমেই আসে ডুয়ার্সের নাম। মনে পড়ে উত্তরবঙ্গের কথা। মন ভেসে যায় পাহাড়ের অলিন্দে। পাইন, ফারের উচ্চতা, মেঘ-কুয়াশার লুকোচুরি খেলা দেখার অবশ্যই অমোঘ আকর্ষণ আছে।

কিন্তু ইচ্ছে হলেই কি উপায় থাকে? টিকিট কাটা, ছুটি পাওয়া, খরচ জোগাড়— সব কিছুই তো আপনা থেকে হয় না। কিন্তু হুট করে বেরিয়ে পড়তে চাইলে কী করবেন?

পাহাড়, জঙ্গল, সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় কলকাতার অদূরেই। ঘণ্টা পাঁচ-ছয় পাড়ি দিলেই পৌঁছনো যায় এমন ঠিকানায়।

হেনরি আইল্যান্ড

সমুদ্র বললেই প্রথমেই আসে পূর্ব মেদিনীপুরের কথা। দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, তালসারি— জনপ্রিয় জায়গা। কিন্তু এ সব স্থান অনেকেরই বহু বার ঘোরা। তার চেয়ে বরং ঘুরে নিতে পারেন হেনরি আইল্যান্ড। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকখালির অদূরেই তার অবস্থান। বড় বড় ঢেউ, উত্তাল সাগরের শোভা না-ই থাকতে পারে এখানে, কিন্তু হেনরি আইল্যান্ডের নির্জনতা, পরিচ্ছন্নতা আলাদা ভাললাগার জন্ম দেয়। নামে দ্বীপ হলেও রয়েছে সৈকত। সেখানে যাওয়ার রাস্তাটিও ভারী মনোরম। মৎস্য দফতরের ভেড়ি পার করার পর গাছগাছালি, ম্যানগ্রোভ। তার পরে সৈকত। সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগে সৈকতে নজর মিনারও রয়েছে। তবে চড়া রোদে নয়, ভোরের দিকে না হলে বিকালের সময়টাই সৈকত উপভোগের জন্য আদর্শ।

কী ভাবে যাবেন?

ট্রেন, বাস দুই-ই আছে। তবে গাড়ি করে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। সড়কপথে কলকাতা থেকে বকখালির দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। বকখালি থেকে হেনরি আইল্যান্ড আরও সাত কিলোমিটার। ট্রেনে গেলে নামখানায় নেমে বাসে বা অটো বুক করে পৌঁছতে পারেন। ধর্মতলা থেকে বকখালির বাসও পেয়ে যাবেন। বকখালিতে সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ অরণ্য, কার্গিল সৈকত, ফ্রেজারগঞ্জ-সহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। এক রাত সেখানে থাকলেই সব জায়গা ঘোরা হয়ে যাবে।

কোথায় থাকবেন?

বকখালিতে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। হেনরি আইল্যান্ডের সৈকতের কাছে মৎস্য দফতরের অতিথি নিবাস রয়েছে। অনলাইনে বুকিং করা যায়।

জঙ্গল পথের শোভা উপভোগ করা যায় কলকাতার কাছেই।

জঙ্গল পথের শোভা উপভোগ করা যায় কলকাতার কাছেই। ছবি: সংগৃহীত।

গড় জঙ্গল

পাইন, ফার, ওক না থাক, শাল, পিয়ালের জঙ্গলে পৌঁছনো যায় কলকাতা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টাতেই। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকেই আছে গড় জঙ্গল। জায়গাটি মোটেও ছোট নয়। বরং কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে অরণ্যের বিস্তার। তার গা দিয়ে গিয়েছে কালো পিচের মসৃণ রাস্তা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এই জঙ্গলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে বলে সরকারি ওয়েবসাইটে জানা যায়। ভাগবত ও পুরাণ অনুযায়ী মহামুনি মেধসের নির্দেশে সত্যযুগে রাজা সুরত গড় জঙ্গলের ভিতরে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছেন। রাজা সুরতের তৈরি মন্দিরে আধুনিক যুগে ফের পুজো শুরু করেন যোগীরাজ গিরি। টেরাকোটার সুপ্রাচীন মন্দির রয়েছে এখানে। শেষ প্রান্তে রয়েছে ইছাই ঘোষের দেউল, গোলাপের বাগান। জঙ্গলের ভিতরে রয়েছে শ্যামরূপা মন্দির। বর্ধমানের গৌরাঙ্গপুরের অজয় নদীর তীরে পুরনো দেউল। স্থানীয়েরা বলেন, রাঢ় বাংলার সামন্ত ছিলেন ইছাই ঘোষ। তিনি এটি তৈরি করেন।

কোথায় থাকবেন?

মানকরের কাছে যমুনাদিঘি বলে মৎস্য দফতরের একটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে থাকা যায়। সেখান থেকে গড় জঙ্গল ঘুরে নেওয়া যায়। দুর্গাপুরেও থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন। গড় জঙ্গলে থাকার ব্যবস্থা নেই। কলকাতা থেকে ভোরে বেরোলে রাতে ফিরে আসা যাবে।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হয়ে পানাগড়। সেখান থেকে কাঁকসার দিকে এগিয়ে পানাগড়-মোড়গ্রাম সড়ক ধরে যেতে হবে গড়জঙ্গল। দুর্গাপুর থেকে দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৭৭ কিলোমিটার।

খয়রাবেড়া জলাধার ঘুরে নিতে পারেন দুদিনের ছুটিতেই।

খয়রাবেড়া জলাধার ঘুরে নিতে পারেন দুদিনের ছুটিতেই। ছবি: সংগৃহীত।

অযোধ্যা পাহাড়:

হিমালয়ের মতো উচ্চতা না থাক, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের সৌন্দর্যও কম নয়। বিশেষত বর্ষণসিক্ত পাহাড় হয়ে ওঠে আরও সবুজ। একাধিক জলাধার, ঝর্না রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের আশপাশে। দেখে নিতে পারেন খয়রাবেড়া ড্যাম। আয়রন লেক, মুরুগুমা, লোয়ার ড্যাম-আপার ড্যাম, ছৌ মুখোশের গ্রাম চড়িদা-সহ অনেক দ্রষ্টব্যই আছে এখানে। সিরকাবাদ, বাঘমুন্ডি দুই দিক দিয়েই যাওয়া যায় অযোধ্যা পাহাড়ে। তবে সিরকাবাদ হয়ে যাওয়ার পথটা সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে কিছুটা এগিয়ে থাকবে। দূর দিগন্তে পাহাড়ের সারি এই পথের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। দেখা মেলে গজাবুরু শৃঙ্গের।

তালিকায় রাখতে পারেন খয়রাবেড়া ড্যাম। বাঁধের জলাশয়ের ধারেই গড়ে উঠেছে রিসর্টও। নৈঃশব্দ আর অগাধ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে যেন বসে আছে এই জায়গা। ঘন জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ে ঘেরা জলাশয়ে শীতের দিনে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখির। জলাশয়ে সাঁতরে বেড়ায় মাছেরাও।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে সড়কপথে অযোধ্যা পাহাড়ের দূরত্ব ২৯৯-৩৩৫ কিলোমিটার। তবে তা কোন রাস্তা ধরা হবে, তার উপর নির্ভর করবে। গাড়িতে গেলে মোটামুটি ভাবে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। হাওড়া থেকে ট্রেনেও পৌঁছতে পারেন। হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার, লালমাটি এক্সপ্রেস কিংবা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, সব ক’টি ট্রেনই যায় পুরুলিয়া। পুরুলিয়া স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান ৭৫ কিলোমিটার দূরবর্তী খয়রাবেড়ায়। পুরুলিয়া বা অযোধ্যা পাহাড়েও থাকতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

খয়রাবেড়া ড্যামের ধারে একটি রিসর্ট আছে। অযোধ্যাপাহাড়ে একাধিক হোটেল আছে। সরকারি থাকার জায়গাও পাওয়া যাবে।

Travel Travel Tips Gar Jungle Henri Island purulia Ayodhya Hill
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy