ছবি তোলার জগতে কয়েক বছরে প্রায় বিপ্লব এনে দিয়েছে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা। স্থির চিত্র থেকে ভিডিয়ো—দুর্দান্ত ছবি তোলা সম্ভব স্মার্টফোনের ক্যামেরাতেই। তবে সব সময়েই কি ভাল ক্যামেরা ভাল ছবি তোলার চাবিকাঠি হয়? তাই যদি হত, তা হলে একই ঝর্নার ছবি একই জায়গা থেকে দু’জন তুললে তা দু’রকম হয় কেন? কোনওটিতে জলের প্রতিটি বিন্দু স্পষ্ট হয়, কোনওটিতে দেখা যায় ঝর্নার জল কেমন সাদা বা ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে।
বেড়াতে গিয়ে ছবি তোলার আগে, কয়েকটি কৌশল মাথায় রাখলে ছবি হতে পারে আরও ভাল, প্রাণবন্ত।
আলোর ব্যবহার: সূর্য যখন উঠছে ঠিক সেই সময় কোনও জায়গার ছবি হয় এক রকম, ভরদুপুরে আর এক রকম। আর সন্ধ্যা নামার মুখে সেই ছবি একই স্থান থেকে তোলা হলেও বদলে যায় সেটি। পুরোটাই হয় আলোর খেলায়। ভাল ছবি তোলার জন্য যথাসম্ভব প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার করা দরকার। ভোরে এবং বিকেলে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় যে জিনিসটির ছবি তুলছেন, সেই বিষয়বস্তুর উপর যে আলো পড়ে সেটি সোনালি দেখায়, একে বলে ‘গোল্ডেন লাইট’। সেই সময় ঝর্নার ছবি যত সুন্দর হবে, ভরদুপুরে কিন্তু ততটা নয়। কারণ, সেই আলো। আবার সন্ধে নামার মুখে আলো কমে গেলে ছবিতে ছোট ছোট দানার মতো দাগ হয়। এটি কম আলোর জন্য হয়। সুতরাং ছবি তোলার সময় আলোর ব্যবহার বুঝলে, তবে নাটকীয়তা তৈরি হবে।
লেন্স পরিচ্ছন্ন করা জরুরি: মোবাইল নিয়ে দিনরাত ঘোরাঘুরি করার ফলে, লেন্সও ধুলো-ময়লা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে চট করে মাথা ঘামান না ঠিকই। তবে নোংরা লেন্স কায়দা করে তোলা ছবির সৌন্দর্যও নষ্ট করতে পারে। ছবি ঝাপসা হতে পারে। লেন্সে ময়লা লেগে থাকলে দাগও হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ফ্রেমের কোথায় বিষয়বস্তু থাকবে?

পাহাড়ের বুকে সূর্যোদয় হচ্ছে। সূর্যের ছবিটা ফ্রেমের কোথায় রাখবেন? সচরাচর লোকজন বলবে, মাঝে থাকবে বিষয়বস্তু। কিন্তু ছবি তোলার ‘রুল অফ থার্ড’-এর নিয়ম বলছে, সূর্য হয় কিছুটা বাঁয়ে নয়তো ডাইনে থাকবে। ফ্রেমের মাঝে নয়। ক্যামেরার যে চৌখুপি পর্দা আছে, তাকে সমান ৯টি (৩x৩) ভাগে ভাগ করে নিন। বিষয়বস্তু থাকবে আড়াআড়ি এবং লম্বা লাইন যে বিন্দুতে একে অপরকে ছেদ করছে, সেখানে। পাহাড় রয়েছে। নদীর পাড়ে সূর্যোদয় হচ্ছে। সূর্যের ছবি যদি ডান দিকের বিন্দুতে ধরা হয়, তা হলে নদী বয়ে যাওয়ার ছবিটি থাকবে ফ্রেমের বাম দিকে। অর্থাৎ ডানদিকে সূর্য উঠছে, নদীর স্রোত বইছে ডান থেকে বাম দিকে।
অতিরিক্ত জ়ুম নয়: দূরের বিষয়বস্তুর ছবি তোলার জন্য যে কেউ জুম লেন্স ব্যবহার করেন। এর কাজ হল দূরের জিনিস কাছে আনা। কিন্তু জ়ুম করলে ছবি ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ছবি খুব বেশি স্পষ্টও হয় না এতে। ছবি তোলার সময় বিষয়বস্তুর যতটা কাছে যাওয়া সম্ভব হবে, ততটা কাছে গেলে বেশি ভাল ছবি উঠবে। কোনও প্রজাপতির ছবি তুলতে যাচ্ছেন। কাছে গেলে প্রজাপতি উড়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু ভাল ছবি তুলতে গেলে যথাসম্ভব নিঃশব্দে তার কাছাকাছি গিয়ে ছবিটি তুললে গুণমান ভাল হবে।
বিভিন্ন কোণ: ঝর্নার ছবি যদি ঝর্নার সমান্তরাল কোনও স্থান থেকে তোলা হয়, এক রকম দেখতে লাগবে। ঝর্নার নীচ থেকে ক্যামেরা ধরলে সেই ছবি হবে আর এক রকম। মাঝামাঝি স্থান থেকে ঝর্না দেখতে লাগবে অন্য রকম। যে কোনও বিষয়বস্তুর বিভিন্ন কোণ, স্থান থেকে তুললে ছবিতেও বৈচিত্র আসবে।