উপত্যকা যখন তুষারে ঢাকা থাকে, সে এক অদ্ভুত আকর্ষণ। আবার ঘনঘোর বর্ষায় বদলে যায় সেই রূপ। শ্বেতশুভ্র তুষারের চাদর মুছে প্রকৃতি তখন শ্যামল। আর এ সবের মাঝেই থাকে এমন এক সময়, যখন পার্বত্য উপত্যকা ভরে ফুলে। অসংখ্য প্রজাতির ফুলের রং, রূপ, গন্ধের বৈচিত্র, রূপের ছটা থেকে চোখ ফেরায় সে সাধ্যি কার! ফুলে ভরা উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় ভারতের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলেই। এখানে রইল তেমন তিন ঠিকানা।
চামোলি, উত্তরাখণ্ড
চামোলিতে বুনো ফুলের টানে ছুটে আসেন বহু পর্যটক। ছবি: প্রতীকী।
‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ বললে প্রথমে উত্তরাখণ্ডের নামই মাথায় আসে। এ রাজ্যের চামোলিতে বুনো ফুলের টানে ছুটে আসেন বহু পর্যটক। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান পাওয়া এই উপত্যকা জুড়ে ফোটে ৬০০ রকমের ফুল। এখানে ফোটা ব্রহ্মকমল দেখতে প্রতি বছর কঠিন পথ ট্রেক করে আসেন অসংখ্য পর্যটক। প্রিমুলাস, ডেইজ়ি, হরেক রকম অর্কিড, রডোডেনড্রন-সহ অজস্র ফুলের সমারোহ থাকে হিমালয়ের এই পার্বত্যভূমিতে। তবে এই পথে আসতে গেলে পদব্রজই ভরসা। জুন মাসে শুরু হয় এই ট্রেকিং। রাস্তা খোলা থাকে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত।
কাস, মহারাষ্ট্র
মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কাস মালভূমি।
পার্বত্যপথে ট্রেকিং করার মতো শারীরিক ক্ষমতা নেই। তাতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। এ দেশের নানা রাজ্যেই প্রকৃতি রূপের ডালি উজাড় করেছে। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কাস মালভূমি। বর্ষার মরসুমে কয়েকশো প্রজাতির ফুল ফোটে সেখানে। অগস্ট থেকে শুরু হয় ফুল ফোটা। থাকে অক্টোবর পর্যন্ত। তবে প্রতি বছর ফুল ফোটার সময়ে কিছুটা ফারাক হয়। ফুল ফোটার উপর ভিত্তি করেই পর্যটক প্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে পর্যটকেরা যেতে পারেন সেখানে। বছরে ১৫-২০ দিন সবচেয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে এই উপত্যকা। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আগাম টিকিট কাটতে হয়। প্রতি দিন নির্দিষ্ট সংখ্যক পর্যটককেই সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
জ়ুকু, নাগাল্যান্ড-মণিপুর সীমান্ত
নাগাল্যান্ড-মণিপুর সীমান্তবর্তীজ়ুকু ভ্যালি।
উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ নামে পরিচিত জ়ুকু উপত্যকা। নাগাল্যান্ড-মণিপুর সীমান্তবর্তী জ়ুকু ভ্যালি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটক মহলে সমাদৃত নয়, এখানকার ফুলের আকর্ষণও যথেষ্ট। জ়ুকু লিলি নামে একটি বিশেষ প্রজাতির লিলি ফোটে এখানে। সেই ফুলের টানেই ছুটে আসেন পর্যটকেরা। অ্যাজ়িলাস, রডোডেনড্রেন ছাড়াও অসংখ্য বুনো ফুলে জুন-জুলাইয়ে ভরে যায় উপত্যকা। দেখে মনে হয় যেন ফুলের গালিচা পাতা। এমন সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অবশ্য ট্রেকিংই ভরসা। ফুল দেখতে যেতে হলে জুনের শেষ দিকে যাওয়াই ভাল।