৩২ বছর ধরে পলাতক ছিলেন তরুণ। মা এবং প্রেমিকাকে খুন করে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তার দু’মাস পর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তরুণের বৌদিও। কিন্তু পুলিশের কাছে গিয়ে আর সে কথা জানাননি পলাতক তরুণের দাদা। ৩২ বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে ফল পেল পুলিশ। খুনের অভিযোগে তরুণকে গ্রেফতারও করা হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এই ঘটনাটি দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রদেশের ওয়েইইউয়ান কাউন্টিতে ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৯৯২ সালের জুলাই মাসে মা এবং ১৭ বছরের প্রেমিকাকে ছুরি দিয়ে খুন করে পালিয়ে গিয়েছিলেন লি নামের এক তরুণ। ৩২ বছর ধরে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত চালিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, লি পালিয়ে যাওয়ার দু’মাসের মধ্যে নিরুদ্দেশ হয়ে যান তাঁর বৌদিও। অথচ লিয়ের দাদা তা নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করেননি। লিয়ের বৌদির নাম জিউ। জিউয়ের সঙ্গে লিয়ের দাদার নাকি নিত্য অশান্তি লেগে থাকত। পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, লিয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল জিউ। তাই পারিবারিক বিষয় নিয়ে বেশি কাদা ছোড়াছুড়ি করতে চাননি লিউয়ের দাদা।
আরও পড়ুন:
জিউ নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, ২১ বছর পর আবার বাড়ির মেয়েকে দেখেছিলেন তাঁরা। ২০১৩ সালে নাকি জিউ তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি এক পুত্র এবং এক কন্যাসন্তান নিয়ে সুখে ঘর-সংসার করছেন তা জানিয়েছিলেন জিউ। কিন্তু বসতবাটির কোনও হদিস দেননি তিনি। বাড়ির ঠিকানা না জানিয়েই চলে গিয়েছিলেন জিউ। তবে এক মোবাইল নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করেছিলেন তিনি। সেই নম্বর ট্র্যাক করে জিউয়ের সন্ধান পায় পুলিশ।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ চিনের গুয়াংডং প্রদেশের জিয়াংমেন এলাকায় জিউ থাকেন বলে জানতে পারে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে সেই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতে শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। একটি ফুটেজে দেখা যায় যে, জিউ গাড়িতে উঠছেন। গাড়িটি জিয়াংমেন এলাকার একটি ছোট গ্রামে গিয়ে থামে। তা দেখে পরিচয় গোপন করে সেই গ্রামে যায় পুলিশ। জিউয়ের ছবি দেখিয়ে এলাকাবাসীদের কাছে পুলিশ জানতে পারে যে, ৩০ বছর ধরে জিউ তাঁর স্বামী-সন্তান নিয়ে সেই গ্রামেই বসবাস করছেন।
তার পর জিউয়ের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে সেখানে চলে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে লিয়ের সন্ধান পায় তারা। জিউকে বিয়ে করে দুই সন্তান নিয়ে সেখানে দীর্ঘ দিনের বাস লিয়ের। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে লিয়ের সঙ্গে ভাব জমান এক পুলিশকর্মী। তার পর গোপনে লিয়ের ফেলে দেওয়া সিগারেটের টুকরো নমুনা হিসাবে সংগ্রহ করেন তিনি। ডিএনএ পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয়, জিউয়ের সঙ্গী আসলে লি-ই। ৩২ বছর পর খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় লি-কে।
আরও পড়ুন:
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেফতার করা হয়েছিল লি-কে। গ্রেফতারির পর লি জানিয়েছিলেন, এত বছর ধরে নকল পরিচয় নিয়ে বাঁচতে বাঁচতে নিজের আসল পরিচয়ই নাকি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। লিয়ের ১৭ বছর বয়সি প্রেমিকা নাকি তাঁর মায়ের কাছে মোটা টাকা চেয়ে হুমকি দিয়েছিল। সেই টাকা না পেলে নাকি লিয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেবেন হুমকিও দিয়েছিল লিয়ের মাকে। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন লি। বাগ্বিতণ্ডা চলাকালীন রেগে গিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
প্রেমিকাকে ছুরি দিয়ে খুন করে ফেলেছিলেন লি। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই ছুরির আঘাতে প্রাণহানি হয়েছিল লিয়ের মায়েরও। মা এবং প্রেমিকাকে খুন করে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন লি। লিয়ের দাবি, পালানোর পর প্রায় দু’মাস তিনি একটি পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। জিউ নাকি সকলের অলক্ষ্যে তাঁকে জামাকাপড়, খাবার দিয়ে আসতেন। এক দিন জিউকে বাড়ি ছেড়ে পালানোর প্রস্তাব দিয়ে বসেন লি। দেওরের প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন জিউ। তার পর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে দূরের একটি গ্রামে সংসার বেঁধেছিলেন তাঁরা। শেষমেশ বৌদিকে অনুসরণ করেই লিয়ের খোঁজ পেল পুলিশ।