কর্মক্ষেত্রে প্রায়শই নানা হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় কর্মীদের। অত্যধিক কাজের চাপ বা বসের দুর্ব্যবহারে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অনেকেই। অফিসে মানসিক চাপ কখনও কখনও কেবল বিষাক্ত নয় প্রাণও কেড়ে নিতে পারে। তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে জাপানে। কাজের চাপ ও খারাপ ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন এক তরুণী। তাঁর মৃত্যুতে সরাসরি প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তরুণীর বস্ ও সংস্থাকে ৯০ কোটি টাকার জরিমানা করেছে আদালত।
সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে সাতোমি নামের ওই তরুণী টোকিয়োর একটি প্রসাধনী সংস্থায় ২০২১ সালে যোগ দেন। সেই বছরের ডিসেম্বরে সংস্থার ডিরেক্টর মিতসুরু সাকাই একান্তে তাঁকে ডেকে পাঠান। আগাম অনুমতি না নিয়ে এক গ্রাহকের সঙ্গে দেখা করার জন্য সাতোমিকে প্রচণ্ড ভর্ৎসনা করেন তাঁর বস্। সাতোমিকে পথের কুকুর বলে উল্লেখ করেন তিনি। পরের দিন, হয়রানির পরিমাণ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। সকলের সামনে সাকাই তাঁর কর্মীকে আরও এক বার কুকুর বলে সম্বোধন করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্যাতন সাতোমির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য ছুটিও নেন। তাঁর অবস্থার অবনতি হয় এবং ২০২২ সালের অগস্টে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আত্মহননের পথ বেছে নিতে গিয়ে কোমায় চলে যান সাতোমি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করার পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে তিনি মারা যান।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে সাতোমির মা ও বাবা ডি-ইউপি কর্পোরেশন নামে সংস্থা এবং সাকাইয়ের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্তে উঠে আসে সাকাইয়ের খারাপ ব্যবহার সাতোমির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রবল প্রভাব ফেলেছিল। অফিসের বিষাক্ত আবহাওয়ার সঙ্গে তরুণীর মৃত্যুর স্পষ্ট যোগসূত্র খুঁজে পান শ্রম দফতরের কর্তারা। ৯ সেপ্টেম্বর টোকিয়ো জেলা আদালত একটি যুগান্তকারী রায় দেয়। সাতোমির মৃত্যুর জন্য কেবল ডি-ইউপি কর্পোরেশন এবং সাকাইকেই দায়ী করা হয়নি। উল্টে সংস্থাটিকে ১৫০ মিলিয়ন ইয়েন (৯০ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দিতেও বলা হয়েছিল। সাকাইকে অবিলম্বে পদত্যাগ করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।