Advertisement
E-Paper

বঙ্গে বুথ বাড়ছে ১৪ হাজার, মুচকি হাসছে তৃণমূল, বিড়ম্বনা বিরোধীদের? বিজেপির মুখে তিন মাস অপেক্ষার বার্তা

যে সকল বুথে ১২০০-র বেশি ভোটার রয়েছে, সেগুলি ভেঙে তৈরি হবে নতুন বুথ। ইতিমধ্যেই এই রকম বুথ চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। আগামী ২৯ অগস্ট সর্বদল বৈঠকে সেই বিষয়ে আলোচনা এবং মতামত শোনা হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০১
14000 booth is increasing in West Bengal, will the opposition parties have to face trouble

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নরেন্দ্র মোদী ব্রিগেডে সভা করতে এলে মাঠ যে বিজেপির কর্মী-সমর্থকে উপচে যাবে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। বিধানসভা, লোকসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া বামেরা এপ্রিলের গনগনে গরমেও ভরিয়ে দিয়েছিল গড়ের মাঠ। এখনও অধীর চৌধুরী কোনও সভায় বক্তা হলে কংগ্রেসের কর্মসূচিতে লোক মন্দ হয় না। কিন্তু জমায়েতে লোক হলেও ভোটের দিন দেখা যায় বহু বুথে প্রধান বিরোধীদল বিজেপি-সহ বাকিরা এজেন্টই খুঁজে পাচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে এটাই যখন ‘স্বাভাবিক ছবি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে আরও ১৪ হাজার বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে চলেছে।

যে সব বুথে ১২০০-র বেশি ভোটার রয়েছে, সেগুলি ভেঙে তৈরি হবে নতুন বুথ। ইতিমধ্যেই এই রকম বুথ চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। আগামী ২৯ অগস্ট সর্বদল বৈঠকে সেই বিষয়ে আলোচনা এবং মতামত শোনা হবে। যদিও তা একেবারেই ঔপচারিক। বর্তমানে রাজ্যে বুথের সংখ্যা ৮০ হাজারের সামান্য বেশি। এর সঙ্গে আরও ১৪ হাজার বুথ যুক্ত হলে মোট বুথের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯৪ হাজার। শেষ পর্যন্ত ৯৪ হাজার বুথ নিয়েই ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট হবে কি না সেই বিষয়ে এখনও নিশ্চয়তা নেই। কমিশন সূত্রে খবর, এসআইআরে নাম বাদ পড়লে বুথের সংখ্যা কমতেও পারে। তবে ১২০০-র বেশি ভোটার হলে সেই বুথ ভেঙে নতুন বুথ করা হবে।

বুথসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে কোনও ‘উদ্বেগ’ নেই। বরং রাজ্যের শাসকদলের নেতারা যা বলছেন, তাতে লেগে রয়েছে ‘মুচকি হাসি’। আবার বিরোধীদের কেউ প্রকাশ্যে, কেউ আড়ালে মানছেন, বুথের সংখ্যা বাড়লে তাদের ‘শিরঃপীড়া’ বাড়বে। যদিও তৃণমূলের উদ্দেশে পাল্টা হুঙ্কার দিয়ে বিজেপি বলছে, তিন মাস পরে ছবিটা বদলে যাবে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি, রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আর তিনটে মাস অপেক্ষা করুন। দেখতে পাবেন, তৃণমূল অনেক বুথে এজেন্ট খুঁজে পাবে না। ২০২৬-এর নির্বাচন তৃণমূলকে বিসর্জন দেওয়ার নির্বাচন হতে চলেছে।’’ কিন্তু বিজেপি কি পাবে? তাঁর জবাব, ‘‘আমাদেরটা আমরা ঠিক বুঝে নেব।’’

পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘সব বুথে লোক দেওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি তৃণমূল ছাড়া আর কারও নেই। খাতায়কলমে অনেকে অনেক কিছু দাবি করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে বিরোধীদের কী অবস্থা, তা তাঁরাও জানেন।’’

সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী আবার দাবি করেছেন, সব বুথে তাঁদের লোক রয়েছে। শুধু পুলিশ দিয়ে ভোট করায় বলে তৃণমূল আধিপত্য কায়েম রাখতে পেরেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সব বুথে লোক আছে। এত দিন পুলিশকে ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে তৃণমূল অনেক জায়গায় বুথে লোক বসতে দিত না। যেখানে বুথে বাধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে গণনা কেন্দ্র দখল করেছে। কিন্তু সেই ছবির বদল ঘটছে।’’

প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী আবার খোলাখুলিই মানছেন, বুথের সংখ্যা বাড়লে সংগঠনে চাপ বাড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। তা আছে বলেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হচ্ছে না। বুথের সংখ্যা আরও বাড়লে সংগঠনের উপর যে চাপ বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’’

গত কয়েকটি ভোটের পরে সব ক’টি বিরোধী দলের ময়নাতদন্তেই বুথ স্তরে দুর্বলতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। ভোটের দিনকে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করেন। তাঁদের বক্তব্য, সে দিন যে খেলবে, জয় তারই। আগের নেট প্র্যাকটিসের কোনও মূল্য থাকে না ওই দিন বুথ কামড়ে পড়ে না-থাকলে। মিটিং, মিছিলের জমায়েত দিয়ে যে বুথের সংগঠন হয় না, তা-ও বিলক্ষণ জানেন বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু হলে এই ৯৪ হাজার বুথে প্রতিটি দলকে এক জন করে বিএলএ (বুথ লেভেল এজেন্ট) নিয়োগ করতে হবে। অনেকের বক্তব্য, বিএলএ দিতে পারার সংখ্যা দিয়েই অনুমান করা যাবে কোন দল বুথস্তরে কী শক্তি নিয়ে বিধানসভা ভোটে ঝাঁপাতে চলেছে।

প্রতি বছরই নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ভোটার তালিকায় নাম তোলা, বাদ দেওয়া-সহ অন্যান্য পরিবর্তনের কাজ হয়। সেখানেও বিএলএ দিতে হয় রাজনৈতিক দলগুলিকে। ভোটকর্মীদের একটি বড় অংশের অভিজ্ঞতা হল, সেই কাজে রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় বিরোধীদের কোনও প্রতিনিধিই থাকেন না। অর্থাৎ, প্রতি বছর ভোটার তালিকার যে কাজ হয়, তা নিয়ে তৃণমূল ছাড়া প্রায় কোনও দল গরজই দেখায় না।

অধীরের মতো খোলাখুলি না-মানলেও বিজেপি এবং সিপিএমের অনেকেই একান্ত আলোচনায় বুথস্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মেনে নিচ্ছেন। এক প্রবীণ সিপিএম নেতার বক্তব্য, ‘‘আমরা যেখানে বুথে এক জন এজেন্ট বসাতে হিমশিম খাচ্ছি সেখানে তৃণমূল ডামি প্রার্থীরও এজেন্ট বসিয়ে বুথে লোক বাড়িয়ে রাখছে। সেখানেই ওরা এগিয়ে।’’ বিজেপির এক নেতার আবার বক্তব্য, ‘‘গত লোকসভা ভোটে আমাদের নানা রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। যে বুথে আমাদের এজেন্ট ছিল, সেখানে আমরা হেরেছি। আবার যেখানে আমাদের এজেন্টকে বার করে দেওয়া হয়েছিল সাতসকালেই, সেই বুথে আমরা জিতেছি। তবে বুথে লোক থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তৃণমূল যে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে, তা-ও অস্বীকার করার উপায় নেই।’’

তবে এর উল্টো মতও রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তীব্র হলে বিরোধীদের বুথের সংগঠনের উপর ভোট নির্ভর করে না। যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০০৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে। সেই সময়ে বামেদের সংগঠনের তুলনায় তৃণমূলের বুথস্তরের সাংগঠনিক শক্তি ছিল যৎসামান্য। কিন্তু ভোটে দেখা গিয়েছিল বামেরা পরাস্ত হয়েছে। তৃণমূলও ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সঙ্গে নিয়ে বিধানসভা ভোটে নামবে। কিন্তু বুথের শক্তিই যে মৌলিক বিষয়, তা মানছেন সকলেই।

West Bengal Politics Opposition Parties
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy