E-Paper

দোকানে এসে বই পড়লে মিলছে বিশেষ ছাড়

দোকানের মধ্যেই মধুসূদনের লাইব্রেরি। থরে থরে সাজানো রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, সুকান্ত, নজরুল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন লেখকের বইপত্র।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫১
মধুসূদনের দোকানে বসে বই পড়ছেন ক্রেতারা।

মধুসূদনের দোকানে বসে বই পড়ছেন ক্রেতারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

জুতো, ব্যাগ, জ্যাকেট ট্রলি বা বেল্ট কিনতে চাইলে মিলবে বিশেষ ছাড়। সারা বছর এমন ‘অফার’ চলে দোকানে। তবে শর্ত একটাই, কেনাকাটা সারতে এলে পড়তে হবে বই!

বনগাঁ শহরের গান্ধীপল্লি এলাকায় ওই দোকানে বসে এক ঘণ্টা বই পড়লে যে কোনও একটি জিনিসের উপরে মিলবে ২০ শতাংশ ছাড়। দু’ঘণ্টা বসে বই পড়লে মিলবে যে কোনও একটি জিনিসের উপরে ৪০ শতাংশ ছাড়! বছরখানেক ধরে এমন অভিনব পদ্ধতিতে ব্যবসা চালাচ্ছেন মধুসূদন শর্মা। তাঁর দাবি, ছাড়ের লোভে বই পড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই। তাতে দোকানের বিক্রি যেমন বাড়ছে, তেমনই মধুসূদনের যা মূল লক্ষ্য, কিছু মানুষের মধ্যে অন্তত বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারছেন।

দোকানের মধ্যেই মধুসূদনের লাইব্রেরি। থরে থরে সাজানো রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, সুকান্ত, নজরুল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন লেখকের বইপত্র। বসে পড়ার জন্য বেশ কিছু চেয়ার পাতা। পড়াশোা করতে করতে হাত বাড়িলেই পাওয়া যায় লজেন্স, বাতাসা, জল।

এক সময়ে দোকানে মার্কেটিং, সেলসের লোকজন এসে বসতেন। তাঁরা কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবনের নানা হতাশা, যন্ত্রণার কথা শোনাতেন মধুসূদনকে। তিনি বরাবরই পড়াশোনা করতে ভালবাসেন। নিজে স্নাতকস্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তারপরে নানা পেশায় থেকে আপাতত নিজের দোকান তৈরি করেছেন।

লোকজনের দুঃখ-বেদনার কাহিনী শুনতে শুনতে মধুসূদন এক বার কয়েক জনকে নিজের কাছে থাকা ক’টি বই এগিয়ে দিয়েছিলেন। দেখেছিলেন, দৈনন্দিন সমস্যার কথা ভুলে মানুষগুলো বই মুখে কিছুটা সময় দিব্যি ভাল কাটালেন। সলেই বলেছিলেন, কয়েক পাত বই উল্টিয়ে মন ভাল হয়ে গেল।

অভিজ্ঞতাটা ভাবিয়েছিল মধুসূদনকে। বই পড়িয়ে আরও অনেক মানুষের মন ভাল রাখা যায়, এটা বুঝে নেন। সেই মতো দোকানে বই রাখার ব্যবস্থা শুরু করেন। আর ছাড়ের কথা বলে লোকজনকে কেনাকাটার সূত্রে বইমুখো করার পরিকল্পনা করেন।

মধুসূদনের কথায়, ‘‘মানুষ তো এখন পাঠাগারে গিয়ে বই পড়া ভুলেই গিয়েছে। যদি কেনাকাটার উপরে ছাড়ের ব্যবস্থা করে বই পড়ানো যায় লোকজনকে দিয়ে, তা হলে বিষয়টা মন্দ কী!’’ মধুসূদন বলেন, ‘‘আমি নিজে কিছু বই কিনতে পেরেছি। কিন্তু দোকানে থাকা বেশিরভাগ বইপত্তরই সাধারণ মানুষ নিজেরা এসে দিয়ে গিয়েছেন।’’ তিনি নিজেও দোকানে বসে বই পড়েন অবসর সময়ে। এখন মধুসূদনের স্বপ্ন, পাঠাগার তৈরি করবেন।

দোকানে গিয়ে দেখা গেল, এক শিক্ষিকা বসে বই পড়ছেন। বললেন, ‘‘এখানে এলে রথ দেখা কলা বেচা দু'ই-ই হয়। এখানে এলে কেনাকাটা ছাড়াও কিছুটা সময় বইয়ে ডুবে থাকতে পারি।’’ শিক্ষক অনাথবন্ধু ঘোষ বলেন, ‘‘এখন মোবাইলের যুগে মানুষ বই থেকে বিমুখ। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা কমছে। এই পরিস্থিতিতে বইয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে মধুসূদন খুবই ভাল কাজ করছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Books

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy