Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Quarantine Center

পরিযায়ীদের আপন করে অন্য নিভৃতবাস গাইঘাটায় 

পুরো বিষয়টি সম্ভব হয়েছে, এলাকার একটি নার্সিংহোমের মালিক, চিকিৎসক দুলাল সরকার এবং আংরাইল বাজার সম্মিলিত ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক  সমীর মজুমদারের উদ্যোগে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৬:১২
Share: Save:

স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি নিয়ে রাস্তা অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, রাস্তা অবরোধ দেখেছে এই জেলা। আবার স্কুল-নিভৃতবাস কেন্দ্র নিয়েও পরিয়ায়ী শ্রমিকদের অভিযোগ বড় কম নয়। সেই জেলাতেই দেখা গেল উল্টো ছবিও। দু’মাস ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকার পরে নিভৃতবাস কেন্দ্রে এমন খাতিরযত্ন পাবেন স্বপ্নেও ভাবেননি মানুষগুলো। তিন বেলা খাবার-পানীয় জলই শুধু নয়, মিলছে চিকিৎসা পরিষেবাও। গাইঘাটার আংড়াইলের এই নিভৃতবাসের ২১ জন শ্রমিক বলছেন, “বাড়ির থেকে ভাল আছি এখানে।” এমন পরিষেবা পেয়ে শ্রমিকেরা কেউ আর বাইরে বেরোচ্ছেন না। ফলে অন্যান্য এলাকার মতো সংক্রমণের আতঙ্কও ছড়ায়নি এলাকায়।

পুরো বিষয়টি সম্ভব হয়েছে, এলাকার একটি নার্সিংহোমের মালিক, চিকিৎসক দুলাল সরকার এবং আংরাইল বাজার সম্মিলিত ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সমীর মজুমদারের উদ্যোগে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের স্কুল-নিভৃতবাসে রাখা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভের কথা জেনে ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা ফেরার আগেই বাজার ব্যবসায়ী সমিতি এলাকার বাসিন্দা, ক্লাব সংগঠনের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডাকে। সেখানে তাঁদের বোঝানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিযায়ী শ্রমিকদের স্কুলে রাখলে সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। শ্রমিকদের শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা দায়িত্ব ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নেবে। ভাল পরিবেশ পেলে শ্রমিকেরা বাইরেও বেরোবেন না। এর পরে আর কেউ আপত্তি করেননি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা স্কুল এসে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি কিট। তাতে ছিল দু’টি সাবান, জলের বোতল, গামছা, নারকেল তেল, গুঁড়ো সাবান, মুড়ি-বিস্কুট। নিভৃতবাসে ঢোকার আগে নার্সিংহোমের স্বাস্থ্য কর্মীরা তাঁদের পোশাক জীবাণুমুক্ত করেন। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের রোগীদের শয্যা নিভৃতবাসে পৌঁছে দেন। নার্সিংহোমের চিকিৎসক বিশ্বনাথ নন্দীর তত্ত্বাবধানে রোজ দু'বেলা স্বাস্থ্য কর্মীরা নিভৃতবাসে গিয়ে শ্রমিকদের শারীরিক পরীক্ষা করছেন। প্রয়োজনে ওষুধ দিচ্ছেন। তাঁদের রক্তচাপ-সহ বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা সুরক্ষা পোশাক পরছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের মাস্ক দেওয়া হয়েছে। স্কুল চত্বরও নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে।

পরিযায়ী শ্রমিকদের তিন বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। সকালে রুটি-তরকারি-চা। দুপুরে ও রাতে কোনও দিন মাংস বা ডিম, কোনও দিন আনাজ-মাছ-ভাত দেওয়া হচ্ছে। ঝড়ের তাণ্ডবের পরে এখনও এলাকায় বিদ্যুৎ ফেরেনি। রাত ৯টা পর্যন্ত জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলেই চাইছেন, শ্রমিকদের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকুন। দুলাল বলেন, “বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকা আমাদের কর্তব্য। নিজে ভাল থাকাটাই তো সব নয়। সকলে ভালো থাকলে তবেই আমরা ভাল থাকব।” গাইঘাটার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুজন গায়েন বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকেরা যে আমাদের আপনজন, তা ওই নিভৃতবাসে গেলেই বোঝা যায়। এর ফলে নিভৃতবাস কেন্দ্র নিয়ে মানুষের আতঙ্ক কমবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE