E-Paper

খিচুড়ির কড়াইয়ে পড়ে দগ্ধ বালিকার মৃত্যু

তৃষার মা সোমা সাঁপুই মেয়ের নিথর দেহ ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমার আর কেউ রইল না। পুজোর দিন স্কুলে যেতে চাইছিল না। জোর করেই যেতে বলেছিলাম। কিন্তু আর যে ফিরবেই না, বুঝিনি।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৩২
তৃষা সাঁপুই।

তৃষা সাঁপুই।

সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল ১১ বছরের এক বালিকা। পাড়ার মোড়ের জগদ্ধাত্রী মূর্তির দিকে তাকিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল কয়েক মুহূর্ত। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইকেল থেকে রাস্তার ধারে ভোগের খিচুড়ির কড়াইয়ে গিয়ে পড়ে সে। মুহূর্তে ঝলসে যায় শরীর। গত ৩০ অক্টোবর জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীর দিনের এই ঘটনায় আট দিনের লড়াই শেষ হল শুক্রবার দুপুরে। এম আর বাঙুর হাসপাতালে মৃত্যু হল তৃষা সাঁপুই নামে সেই বালিকার। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেছে শনিবার।

তৃষার মা সোমা সাঁপুই মেয়ের নিথর দেহ ধরে কাঁদতে কাঁদতে এ দিন বলেন, ‘‘আমার আর কেউ রইল না। পুজোর দিন স্কুলে যেতে চাইছিল না। জোর করেই যেতে বলেছিলাম। কিন্তু আর যে ফিরবেই না, বুঝিনি।’’

সরশুনার কাষ্ঠডাঙার সাঁপুইপাড়ায় মায়ের সঙ্গে থাকত তৃষা। মেয়ের যখন তিন বছর বয়স, প্রশান্ত সাঁপুই নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন তৃষার মা। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রশান্ত। পরিচারিকার কাজ করা সোমার রোজগারেই মা-মেয়ের সংসার চলত। তার মধ্যেই মা স্বপ্ন দেখতেন, মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। নাচে, আঁকায় মেয়ের দারুণ উৎসাহ। স্বল্প উপার্জন থেকে মেয়েকে সে সব শেখানোরও চেষ্টা চলছিল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া মেয়ে কেন স্কুলে যাবে না, তা নিয়ে ঘটনার দিন রেগেও গিয়েছিলেন মা। বললেন, ‘‘এত কষ্ট করে পড়াচ্ছি, জগদ্ধাত্রী পুজো বলে স্কুলে যেতে চায় না শুনে রাগ হয়ে গিয়েছিল। নিজের হাতে সব গুছিয়ে ওকে তৈরি করে দিয়ে কাজে চলে গিয়েছিলাম। সাড়ে দশটা নাগাদ খবর এল, এই কাণ্ড।’’

এ দিন তৃষার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, প্রতিবেশীদের ভিড়। বারান্দায় রাখা সাইকেল দেখিয়ে প্রতিবেশী রত্না মিত্র বললেন, ‘‘এই সাইকেল নিয়েই স্কুলে যাচ্ছিল। মণ্ডপের কাছে একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল ঠাকুর দেখবে বলে। টাল সামলাতে না পেরে মেয়েটা খিচুড়ির কড়াইতেই গিয়ে পড়ে!’’ পাড়ার লোকেরা জল দিয়ে জ্বালা কমানোর চেষ্টা করেন। সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে তৃষা। তাকে নিয়ে প্রতিবেশীরা ছোটেন বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু সে দিনই সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসার তেমন বন্দোবস্ত নেই সেখানে। এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয় ওই বালিকাকে।

এম আর বাঙুর হাসপাতালেই ৩০ অক্টোবর থেকে ভর্তি ছিল তৃষা। গত বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচার হয় তার। পিঙ্কি প্রামাণিক নামে আর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অস্ত্রোপচারের পরেই আইসিইউ-তে শয্যার প্রয়োজন হবে। কিন্তু শয্যা খালি নেই। নেতাদের ধরে একটা ব্যবস্থা করা গেলেও মেয়েটা আর সময় দিল না। শুক্রবার সকালে আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা হল। সে দিন দুপুরেই সব শেষ।’’

এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পুজো কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভও চোখে পড়ল। কেন রাস্তার ধারে পথ আটকে মণ্ডপ হবে এবং ওই ভাবে রাস্তার ধারে ভোগ রান্না হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। যে পুজো কমিটির ভোগ রান্নার সময়ে এমন ঘটনা, তাদের এক সদস্যের কথায়, ‘‘প্রতি বারই ওই ভাবে পুজো হয়। এ বার এমনটা ঘটে যাবে, কেউ ভাবেনি।’’ পুলিশ যদিও জানিয়েছে, রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষ থেকেই কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sarsuna Accidental Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy