গাছ অক্ষত রাখার দাবিতে বারাসত স্টেশন চত্বরে সভা। —নিজস্ব চিত্র।
যশোর রোডের দু’পাশের গাছ অক্ষত রাখার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার বারাসত স্টেশন চত্বরে সভা করল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর বনগাঁ ও বারাসত শাখা। দীর্ঘ দিন ধরে যশোর রোডের ধারের গাছগুলি না কাটার দাবি জানিয়ে আসছে এপিডিআর। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে গাছগুলি নিয়মিত পরিচর্যা করার দাবিও জানানো হয়েছে। দিন কয়েক আগে এই সব দাবি নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর ও বারাসতের কয়েক হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেন। আবেদনে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন রাজ্যের বিশিষ্টজনদের একাংশও।
যশোর রোডের ধারের সাড়ে তিনশোর বেশি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। তা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয় ২০১৮ সালে। পরে সেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। এপিডিআরের করা ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটার উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। সেই স্থগিতাদেশ সম্প্রতি খারিজ করেছে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত যশোর রোডের ধারের গাছ কেটে রেল ওভারব্রিজ করার পক্ষে ২০১৮ সালে কলকাতা হাই কোর্টের আদেশই বহাল রাখে। যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ থমকে থাকায় এই পথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের পক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনায় ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের অনুমতি পেলে গাছ-পিছু পাঁচটি করে গাছ লাগাতেও রাজ্য সরকার প্রস্তুত বলে আদালতকে জানান।
এপিডিআরের দাবি, দেড়শো-দু’শো বছরের এই সব মহীরূহ আমপানের মতো ঝড়কে প্রতিহত করে জনজীবন রক্ষা করেছে। বছরের পর বছর তারাই অফুরান অক্সিজেন জোগাচ্ছে৷ সরস রেখেছে মাটি৷ ছায়া দিয়েছে। আশ্রয় হয়েছে পাখি, পতঙ্গ, পরজীবীর৷ বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই সব গাছ মানুষের পরমাত্মীয়৷ গাছ না কেটে নাগরিক যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণের জন্য বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এপিডিআরের তরফে। যশোর রোডের প্রায় সমান্তরালে যাওয়া রেলপথটিকে এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার স্থায়ী এবং সুষ্ঠু সমাধান হিসেবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। সংগঠনের মতে, দীর্ঘ রাস্তার রেল ক্রসিংগুলিতে ফুটব্রিজ হলে যানজটের সমাধান হয়, গাছও বাঁচে।
এ সবই মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া স্মারকলিপিতে জানিয়েছে এপিডিআর। এ’দিনের সভাতেও এই সব নিয়ে আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনের প্রতিলিপি উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও বিভাগীয় বনাধিকারিককে দেওয়া হবে বলে সভা থেকে জানানো হয়েছে। এপিডিআরের বারাসত শাখার সম্পাদক বাপ্পা ভুঁইঞা বলেন, “আমরা চাই যশোর রোডের গাছের সারি অক্ষত থাকুক। গাছগুলি হেরিটেজের স্বীকৃতি পাক। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে গাছগুলির নিয়মিত পরিচর্যা শুরু হোক। সংলগ্ন রেলপথটির পরিকাঠামো উন্নত করার প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হোক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy