ঘুমের মধ্যে হাতে বিষাক্ত সাপ ছোবল মেরেছিল বছর পঞ্চান্নর বিদ্যাধর মণ্ডলকে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার বদলে কুলতলি থানার ৩৬ নম্বর মণ্ডলের লাট এলাকার ওই প্রৌঢ়কে ওঝার কাছে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যেরা। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ চলে ঝাড়ফুঁক। কিন্তু ক্রমশ অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসকের তৎপরতায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। বর্তমানে তিনি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওখানকার সাপে কাটা রোগীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘‘আর একটু দেরি হলেই প্রাণ বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেত। তবে উনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’’
পরিবার সূত্রে খবর, অন্যান্য দিনের মতোই রবিবার রাতে পরিবারের সকলের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমোতে গিয়েছিলেন বিদ্যাধর। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ হাতে প্রবল যন্ত্রণা হওয়ায় ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। তাকিয়ে দেখেন বিছানাতেই একটি কালাচ সাপ রয়েছে। আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন তিনি। ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যেরা। রাতেই তাঁকে নিয়ে স্থানীয় এক ওঝার বাড়িতে যান তাঁরা। সেখানে চলে তুকতাক, ঝাড়ফুঁক। এমনকী গাছ-গাছড়া বেটে খাওয়ানো হয় বিদ্যাধরকে। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না দেখে হাল ছেড়ে দেন ওঝা। অবশেষে সোমবার সকাল সাতটা নাগাদ জামতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বিদ্যাধরকে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। দেওয়া হয় অ্যান্টি ভেনাম সিরাম ও অন্য ওষুধ।
বিদ্যাধরের ছেলে পরমেশ্বর মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকার সবাই বলল ওঝার কাছে নিয়ে যেতে। সেই কারণে ওখানে গিয়েছিলাম। এখন বুঝেছি ভুল হয়েছে। আর একটু দেরি হলেই বিপদ হতে পারত।’’
চিকিৎসকদের দাবি, সাপের কামড়ে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার বেশিরভাগই ঘটে দেরি করে হাসপাতালে নিয়ে আসার ফলে। সাপে কামড়ানোর পর দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য সারা বছর ধরে সরকারি, বেসরকারি স্তরে প্রচার চললেও এখনও কিছু মানুষ অন্ধবিশ্বাসের বশে ওঝার কাছে নিয়ে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন বলে দাবি তাঁদের। এ বিষয়ে ক্যানিংয়ের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘আমরা সারা বছর ধরেই মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন ভাবে প্রচার করি। কিন্তু তবুও কিছু মানুষ এই কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)