বিজেপি নেতারা যে ভাবে ‘ডিসেম্বরে সরকার পড়ে যাওয়া’ নিয়ে সরব হয়েছেন, তাতে অভিষেকের মন্তব্য নয়া মাত্রা যোগ করেছে। ফাইল চিত্র।
ক’দিন বাদেই ডিসেম্বর মাস। শীতের শুরু বাংলায়। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস নিয়ে অপার কৌতূহল তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে। দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার থেকে শুভেন্দু অধিকারী— বিগত কয়েক দিনে সব বিজেপি নেতার মুখেই শোনা গিয়েছে, ‘‘তৃণমূল সরকার ডিসেম্বরে পড়ে যাবে।’’ এ বার এ নিয়ে বিজেপিকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে ওদের ৩০টা বিধায়কও থাকবে না!’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের কাছে নির্বাচনী লড়াইয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে বিজেপি। তার পর থেকেই প্রধান বিরোধীদল হিসেবে নানা বিষয়ে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। এর মধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ, কয়লা পাচার, গরু পাচারের মতো একাধিক দুর্নীতির ঘটনায় তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা গ্রেফতার হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূল সরকার টিকবে না বলে প্রচার শুরু করেন পদ্মশিবিরের নেতারা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে মমতার সরকারকে ‘অকেজো’ করে দেওয়ার কথা বলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। সরকার পড়ে যাবে— এই বয়ান শোনা গিয়েছে বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ, রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্তের গলাতেও। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপি নেতাদের মুখে এ হেন মন্তব্য নিয়ে পাল্টা পদ্মশিবিরকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানালেন অভিষেক।
মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে ওদের ৩০টা বিধায়কও থাকবে না।’’ সেই সঙ্গে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ এ-ও বলেন, ‘‘দল ভাঙানোর খেলা খেলি না। দল ভাঙানো, বোমা ফেলব— এ সব ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি।’’ পাশাপাশি দল ভাঙানো নিয়ে হুঁশিয়ারির সুরও শোনা গিয়েছে অভিষেকের গলায়। তিনি বলেছেন, ‘‘যদি শুরু করি, দেখা যাবে।’’
বিজেপি নেতারা যে ভাবে ‘ডিসেম্বরে সরকার পড়ে যাওয়া’ নিয়ে সরব হয়েছেন, তাতে অভিষেকের মন্তব্য নয়া মাত্রা যোগ করেছে। যদিও ‘ডেডলাইন ডিসেম্বর’ নিয়ে বিশদে আর কিছু বলেননি তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’। অভিষেক শুধু বলেছেন, ‘‘ ডিসেম্বরের ব্যাখ্যা যিনি দিচ্ছেন, তিনিই বলতে পারবেন।’’ তবে ডিসেম্বরে বিজেপির ৩০ জন বিধায়কও থাকবে না বলে অভিষেকের পাল্টা হুঁশিয়ারি নিঃসন্দেহে আলাদা তাৎপর্য পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরে রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিজেপি ‘ষড়যন্ত্র’ করতে পারে বলে নবান্নে এক বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। বিজেপি সেই চেষ্টা শুরু করেছে। সেই মর্মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দলীয় সতীর্থদের সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, যে ভাবে বিজেপি নেতারা বাংলার সরকারকে ‘অকেজো’ করার কথা এবং সরকার পড়ে যাওয়ার কথা বলে চলেছেন, তাতে তারা শাসকদল এবং সরকারের অন্দরে একটা ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করতে চাইছে। সেই আবহে মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিজেপির ‘ষড়যন্ত্র’-এর পাল্টা বার্তা দিয়েছেন। মমতার সেই বার্তাকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অভিষেক। তিনি সরাসরি বিজেপিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy